Friday 10 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নর্দমা-ফুটপাত উন্নয়নের প্রশিক্ষণ নিতে বিদেশ যাবেন ৩২ কর্মকর্তা!


১৩ জুলাই ২০২০ ১১:৩৭ | আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২০ ১৬:২২

ঢাকা: এবার নর্দমা, ফুটপাত ও সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পেও আসছে বিদেশ সফরের হিরিক। প্রকল্পটির আওতায় ৩২ জন কর্মকর্তা বিদেশ সফরে যাবেন। আর এজন্য ব্যয় হবে দেড় কোটি টাকা। যদিও প্রকল্প প্রস্তাবের শুরুতেই প্রক্ষিণের জন্য বিদেশ সফরের আয়োজন ছিল; এর মধ্যে আবার নতুন করে এ খাতে পরিমাণ ও ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। ফলে প্রকল্পটির বৈদেশিক প্রশিক্ষণ খাতে ব্যয় না বাড়িয়ে দ্বিতীয় সংশোধন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নসহ নর্দমা ও ফুটপাত নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পে ঘটেছে এমন ঘটনা। সংশোধনী প্রস্তাবটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উঠবে মঙ্গলবার (১৪ জুলাই)। ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত ২০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় বিদেশ সফরের ব্যয় বাড়ানো বাদ দেওয়াসহ বিভিন্ন সুপারিশ করা হয়েছিল। সেগুলো মেনে ডিপিপি (উন্নয় প্রকল্প প্রস্তাব) সংশোধন করা হয়েছে। ফলে প্রকল্পটি আগামী একনেকে উপস্থাপন করা হচ্ছে।

পিইসি সভায় দেওয়া সুপারিশগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- সংশোধন পর্যায়ে প্রকল্পের অর্থায়নে সিটি করপোরেশনের অবদান না রাখার বিষয়টি পরিকল্পনা কমিশনের আওতাভুক্ত নয়। তাই এ পর্যায়ে আলোচ্য প্রকল্পে সিটি করপোরেশনের অবদান অপরিবর্তিত রাখতে হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পের মেয়াদ একবছর অর্থাৎ আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যেতে পারে। তবে ভবিষ্যতে প্রকল্পের মেয়াদ আর বাড়ানো যাবে না। কিংবা আবার নতুন কোন কাজ বা প্যাকেজ বাস্তবায়নের প্রয়োজন হলে তা ডিএনসিসি’র নিজস্ব অর্থেই করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক জৈষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর মতো মহামারি পরিস্থিতিতিতে অপ্রয়োজনীয় বা কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প স্থগিত করা উচিত। যেখানে প্রচুর অর্থ সংকট রয়েছে, সেখানে বিদেশ সফরে ব্যয় বাড়ানো তো দূরের কথা বরং এ রকম ব্যয় বাতিল করাই উচিত।’

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, ২০১৬ সাল থেকে গত ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত প্রকল্পটির আওতায় ব্যয় হয়েছে ৮২৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। বর্তমানে এর বাস্তব অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯৫ শতাংশ।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল এক হাজার ২৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৭১৮ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩০৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ের কথা ছিল। পরবর্তী সময়ে প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় না বাড়িয়ে মেয়াদ বাড়ানো হয়। এবার দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে ৫৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা বাড়িয়ে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ১ হাজার ৮১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এ পর্যায়ে ডিএনসিসি’র নিজস্ব তহবিলের অর্থ ব্যয় করতে অনীহা প্রকাশ করা হয়। কিন্তু পরিকল্পনা কমিশনের ভেটোর কারণে সেটিও ভেস্তে যায়। এদিকে প্রকল্পটি ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। এখন দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হচ্ছে।

এদিকে প্রকল্প নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) থেকে বলা হয়েছে, জনসংখ্যার বিবেচনায় ঢাকা বর্তমানে মেগাসিটি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এ শহরের বিদ্যমান রাস্তা, যোগাযোগ অবকাঠামো, দ্রুত গতির পরিবহন সুবিধাসহ অন্যান্য সামাজিক ও পরিবেশগত অবস্থা পরিকল্পিত মহানগরীরর তুলনায় কম। বিদ্যমান সড়কের অবস্থাও মানসম্মত নয়। নগরীরর ফুটপাত চলাচলের প্রায় অনুপযোগী। তাছাড়া ড্রেনেজ সুবিধাদিও অপ্রতুলতার কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। পর্যাপ্ত প্রাথমিক ড্রেনেজ না থাকায় সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারি ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঠিকমতো কাজ করছে না। ফলে একটু ভারি বৃষ্টিপাত হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে সড়কগুলো নির্ধারিত মেয়াদ পর্যন্ত টেকসই হচ্ছে না।

সংশোধনী নিয়ে ডিএনসিসি বলছে, জলাবদ্ধতার কারণে সরবরাহ করা পানির সঙ্গে নর্দমার পানি মিশে বিভিন্ন প্রকার পানি বাহিত রোগের প্রকোপ ছড়ায়। জলাবদ্ধতা যান চলাচল, টেলিফোন, যোগাযোগ, পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশনে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ৩৬টি ওয়ার্ড এবং পাঁচটি জোনে বিভক্ত। ৮২ দশমিক ৩৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই নগরীর যানজট হ্রাস, সড়ক উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ এবং পথচারীদের হাঁটার পথ সুগম করার মাধ্যমে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। বর্তমানে বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন অঙ্গের পরিমাণ ও ব্যয় বৃদ্ধি এবং নতুন দুটি প্যাকেজ অন্তর্ভুক্তির কারণে দ্বিতীয় সংশোধন করতে হচ্ছে।

প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) শামীমা নার্গিস সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রস্তাবিত সংশোধিত প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার যানজট নিরসন, সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক উন্নয়ন, সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও জলাবদ্ধতা দূরীকরণ সম্ভব হবে। পথচারীদের হাঁটার সুবিধা বাড়ার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে। এসব বিবেচনায় প্রকল্পটির সংশোধিত প্রস্তাব অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে।’

একনেক কোভিড-১৯ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর