শিশুদের বেঁধে রেখে ২০ ভরি সোনা চুরি: একবছর পর গ্রেফতার গৃহকর্মী
১৩ জুলাই ২০২০ ০০:৪০ | আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২০ ০০:৪৫
ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ডিউটি শেষ করে ফিরেছিলেন বিচিত্রা রানী দে। বাসায় ঢুকতে গিয়েই দেখতে পান দরজা খোলা। একটি রুমে তার দুধের শিশু পড়ে আছে। অন্য রুমে ৬ বছর বয়সী ছেলে আর্ধচেতন অবস্থায় পড়ে আছে, গামছা দিয়ে হাত-পা-মুখ বাঁধা। আলমারি এলোমেলো। নেই সোনার গয়না। ঘটনা বুঝতে বাকি থাকে না তার। আলমারিতে রাখা সোনাদানা সবকিছু নিয়ে পালিয়েছে গৃহকর্মী, যার ভরসাতেই বাসায় দুই সন্তান রেখে প্রতিদিনের মতো চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়েছিলেন হাসপাতালে। পরে ছেলেও স্বাভাবিক হলে জানায়, বোনের কান্নার শব্দ শুনতে পেলেও হাত-পা বাঁধা থাকায় বোনের কাছে যেতে পারেনি।
পুলিশের শরণাপন্ন হয়ে বিচিত্রা রানী দে জানান, দুই শিশু এক সন্তানকে ঘরে বেঁধে রেখে ২০ ভরি সোনার অলংকার নিয়ে গৃহকর্মী পালিয়ে গেছেন। সন্তানদের যে কোনো ক্ষতি হয়নি, সেজন্য স্বস্তি জানালেও গৃহকর্মী যে অপরাধ করেছেন, তার জন্য তাকে আইনের আওতায় আনার জন্য অভিযোগ দায়ের করেন।
এ পর্যন্ত সবকিছুই ঠিক ছিল। বিপত্তিটা বাঁধে তখন, যখন ওই চিকিৎসক জানান— গৃহকর্মীর কোনো ছবি তো দূরের কথা, তার ব্যক্তিগত বেশিরভাগ তথ্যই নেই বিচিত্রা রানীর কাছে! তবে ওই যে চোরে দশ দিন আর গৃহস্থের একদিন— সে প্রবাদটি যেন সত্য হলো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চাইলে যে সব রহস্যের জটই উন্মোচন করা সম্ভব— সেটিও প্রমাণিত হলো। তাই একবছর পর হলেও গ্রেফতার হয়েছেন বিচিত্রা রানীর বাসা থেকে ২০ ভরি সোনার গহনা চুরি করে নিয়ে যাওয়া সেই গৃহকর্মী আমিনা!
রোববার (১২ জুলাই) রাতে সারাবাংলাকে এসব তথ্য জানালেন লালবাগ গোয়েন্দা বিভাগের কোতোয়ালি জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. সাইফুর রহমান আজাদ। জানান, আগের দিনই (শনিবার, ১১ জুলাই) গৃহকর্মী আমিনা গ্রেফতার হয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের জালে আটকা পড়ে।
এডিসি সাইফুর রহমান বলেন, দুই সন্তানের জননী চিকিৎসক বিচিত্রা রানী দে পুরান ঢাকার নাজিরা বাজারের বাসিন্দা। ৩৩ম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যোগ দেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। কাজের সময় সন্তানদের দেখভাল করার জন্য হন্যে হয়ে খুঁজছিলেন একজন গৃহকর্মী। এর মধ্যেই তার জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসেন কোহিনুর নামে এক ব্যক্তি। গৃহকর্মী জোগাড় করে দেওয়ার কাজ করেন তিনি। গত বছরের ২৯ জুলাই আমেনা নামে একজনকে কাজের জন্য নিয়ে আসেন। গৃহকর্মী মিলেছে— এমন সন্তুষ্টিতেই বিস্তারিত পরিচয় না যাচাই করে ৫ হাজার টাকা মাসিক বেতনে কাজ করার জন্য ঠিক করে ফেলেন।
এডিসি বলেন, নিয়োগের দিনই সকাল ৯টার দিকে দুই সন্তানকে গৃহকর্মী আমেনার কাছে রেখে বাসা বাইরে থেকে বন্ধ করে হাসপাতালে চলে যান বিচিত্র রানী। দুপুরে বাসায় ফিরেই দেখেন এ অবস্থা। পরে স্বামীকে নিয়ে ওই দিনই থানায় মামলা করতে যান তিনি। কিন্তু গৃহকর্মীর কোনো তথ্য দিতে পারছিলেন না তিনি। এরপরও থানা মামলা নেয়। একসময় মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশে স্থানান্তরিত হয়।
দীর্ঘ একবছর পর আমেনাকে গ্রেফতারের তথ্য জানিয়ে এডিসি সাইফুর রহমান আজাদ বলেন, মামলাটি ছিল ক্লুলেস। অপরাধীর নাম ছাড়া আর কোনো তথ্যই ছিল না। প্রথমে দালাল কোহিনুর আটক হলেও তার কাছ থেকে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায়নি। তারপরও গৃহকর্মী আমেনার খোঁজ চালিয়ে যাই আমরা। শেষ পর্যন্ত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার (১১ জুলাই) কুমিল্লা দাউদকান্দিতে অভিযান চালিয়ে আমেনাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার মেসার্স ফোরস্টার জুয়েলার্সের মালিক মো. আবুল হাসেমের সন্ধান পাওয়া যায়। তার কাছেই ১ লাখ ২৮ হাজার টাকায় ২০ ভরি সোনার অলংকার বিক্রি করে দিয়েছিলেন আমেনা। চোরাই সোনা গলিয়ে চোরাই বাজারে বিক্রি করার অপরাধে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
এডিসি বলেন, আমেনা একজন পেশাদার চোর। এর আগেও তিনি একইরকমভাবে বিভিন্ন বাসায় কাজের বুয়া সেজে চুরি করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাকে আদালতে সোপর্দ করা হলে সে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তার অন্যান্য চুরি সম্পর্কে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৩ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হলে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
একবছর পর হলেও চোরকে গ্রেফতার করা গেছে, আইন অনুযায়ী বিচারও হবে। তবে কর্মজীবী দম্পতিদের আরও সাবধান হওয়ার পরামর্শ দিলেন এডিসি সাইফুর। তিনি বলেন, বাস্তবতা হলো— গৃহকর্মী প্রয়োজন। কিন্তু গৃহকর্মী নিয়োগ দেওয়ার আগে আরও সাবধান হতে হবে। গৃহকর্মীর বিস্তারিত পরিচয় জানতে হবে। সম্ভব হলে তার পরিচিতজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিতে হবে, তাদের পরিচয় রাখতে হবে।
২০ ভরি সোনা চুরি একবছর পর গ্রেফতার গৃহকর্মী টপ নিউজ শিশুদের বেঁধে রেখে চুরি সোনা চুরি