Friday 03 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘সরকারের নজরদারি’র অভাবে বেড়েছে বাল্যবিয়ে: জরিপ


১২ জুলাই ২০২০ ২২:৫৫ | আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২০ ০০:২৩

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রকোপের এই সময়ে দেশে বাল্যবিয়ের হার স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেড়েছে বলে উঠে এসেছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এমজেএফ) এক জরিপে। মাসিক এই জরিপে বলা হয়েছে, জুন মাসে ৪৬২টি কন্যাশিশু বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে, যেখানে বন্ধ করা গেছে ২০৭টি বাল্যবিয়ে। অথচ মে মাসেও বাল্যবিয়ে হয়েছিল ১৭০টি, বন্ধ করা সম্ভব হয়েছিল ২৩৩টি।

এমজেএফের জরিপে উঠে এসেছে, করোনা পরিস্থিতিতে স্থানীয় সরকার করোনা বিষয়ক ত্রাণ ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় বাল্যবিয়ে রোধে তেমন মনোযোগ দিতে না পারায় বাল্যবিয়ে বেড়েছে। এছাড়াও দারিদ্র্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা, প্রতিবেশীর প্রভাবে অভিভাবকদের আইন লঙ্ঘনের প্রবণতা এবং সামাজিক নিরাপত্তার অভাবের কারণে অনেক বাল্যবিয়ে ঘটছে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১২ জুলাই) এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এমজেএফ নির্বাহী শাহীন আনাম এসব তথ্য তুলে ধরেন। জরিপে বলা হয়, জুন মাসে দেশের ৫৩ জেলায় মোট ১২ হাজার ৭৪০ নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। মে মাসে এই সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার ৪৯৪। জুনে নির্যাতনের শিকার নারীদের মধ্যে ৩ হাজার ৩৩২ নারী ও শিশু আগে কখনোই নির্যাতত হননি। নারী ও শিশু নির্যাতনের হার কমলেও বেড়েছে শিশু নির্যাতন। শিশুরা তাদের বাবা-মায়ের হাতেই নির্যাতনের শিকার বলে জরিপে উল্লেখ করা হয়। মূলত গৃহবন্দি থাকার কারণেই তাদের ওপর নির্যাতন বেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে ইউনিসেফের তথ্য উদ্ধৃত করে  বলা হয়, এ দেশে ৫৯ শতাংশ মেয়ের বয়স ১৮ হওয়ার আগেই বিয়ে হয়। আর ২২ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয় ১৫ বছরের আগে। বাল্যবিয়ের দিক দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। শাহীন আনাম বলেম, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ ও বাল্যবিয়ে বন্ধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে এমজেএফ।

বিজ্ঞাপন

শিশু নির্যাতনের তথ্য তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জুন মাসে বাল্যবিয়ে ছাড়াও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে শিশু নির্যাতন। মে মাসের তুলনায় ৪৮ শতাংশ বেড়েছে নতুন নির্যাতনের সংখ্যা। মে মাসে ২ হাজার ১৭১ শিশু নির্যাতনের শিকার হলেও জুনে নির্যাতিত হয় ২ হাজার ৮৯৬ শিশু। এদিকে পারিবারিক সহিংসতার শিকার শতকরা ৬১ ভাগ শিশু। জুনে মোট ১ হাজার ৭৬৪ শিশু পারিবারিক নির্যাতনের শিকার আর কর্মক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার ২৯২ শিশু। ধর্ষণের শিকার ৯ এবং ধর্ষণ চেষ্টার শিকার ৯৯, যাদের মধ্যে কন্যাশিশু ৮৬। হত্যাকাণ্ডের শিকার ৪১, অপহরণ ১০ ও যৌন হয়রানির শিকার ১২ শিশু।

এমজেএফের এই মাসিক টেলিফোন জরিপে উঠে আসে করোনা পরিস্থিতিতে দেশের নারী ও শিশু নির্যাতনের চিত্র। জুনে ৫৩ জেলার মোট ৫৭ হাজার ৭০৪ জন নারী ও শিশুর সঙ্গে কথা বলে এই জরিপ করা হয়েছে। জুনে সহিংসতার শিকার ১২ হাজার ৭৪০ জন নারী ও শিশু। নারীর সংখ্যা ৯ হাজার ৮৪৪ আর শিশু ২ হাজার ৮৯৬। শিশুদের মধ্যে মেয়ে ১ হাজার ৬৭৭ অর্থাৎ ৫৮ শতাংশ আর ছেলে ১ হাজার ২১৯ বা ৪২ ভাগ।

জুনে আক্রান্ত ৯ হাজার ৮৪৪ জন নারীর মধ্যে ২০ শতাংশ অর্থাৎ ১ হাজার ৯৫৬ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। এপ্রিল ও মে মাসের মত জুন মাসেও সর্বোচ্চ সংখ্যক অর্থাৎ শতকরা ৯৮ ভাগ নারী পারিবারিক সহিংসতার শিকার। প্রায় ১০ হাজার পারিবারিক সহিংসতার শিকার নারীর মধ্যে মানসিক নির্যাতনের শিকার ৪ হাজার ৬২২, অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার ৩ হাজার ৯, শারীরিক নির্যাতনের শিকার ১ হাজার ৮৩৯।

এছাড়াও প্রায় চারশ নারী ঘরে ও বাইরে যৌন সহিংসতার শিকার। যৌন নির্যাতিত হয়েছেন ২২৩, যৌন হয়ারনি ৯৭, ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার শিকার ৩৫। এছড়াও ত্রাণ আনতে গিয়েও রক্ষা পায়নি যৌন হয়রানি থেকে। জুন মাসে মোট ৫ নারী ত্রাণ আনতে যেয়ে যৌন হয়রানির শিকার হন। গত মাসে হত্যা করা হয়েছে ১৪ জনকে।

শাহীন আনাম বলেন, সহিংসতার শিকার শিশু ও নারীদের তাদের সহযোগী সংগঠনগুলোর মাধ্যমে কাউন্সিলিং, ফলোআপ, সেবা প্রদানকারী সংস্থা, স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ সহয়তা, চিকিৎসা ও আইনি সহায়তা দিয়েছে। এছাড়াও সরকারের প্রতি স্থানীয় সরকার পর্যায়ে বিশেষ সার্কুলার দিয়ে জরুরিভিত্তিতে নারীর প্রতি সহিংসতা ও বাল্যবিয়ে বন্ধ করার আহ্বান জানান।

এমজেএফ আরও জানায়, ২০১৮-২০৩০ সালের মধ্যে বাল্যবিয়ে নিরোধ সংক্রান্ত ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়নে এবং করোনার কারণে কন্যাশিশু ও কিশোরী মেয়েদের সামাজিক নিরাপত্তা বিধানে চলতি অর্থবছরে কোনো নির্দিষ্ট বরাদ্দ রাখা হয়নি, যদিও বাংলাদেশ সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বাল্যবিয়ে এবং জোর করে বিয়ে বন্ধ করার ব্যাপারে অঙ্গীকারাবদ্ধ।

এমজেএফ ডিএফআইডির এক্সক্লুডেড পিপলস রাইটস (ইপিআর), কানাডীয় সরকারের উইমেন ভয়েস অ্যান্ড লিডারশিপ বাংলাদেশ (ডাব্লিউভিএলবি) এবং সুইডিশ সিডার স্ট্রেনদেনিং সিভিল সোসাইটি অ্যান্ড পাবলিক ইনস্টিটিটিউশন টু অ্যাড্রেস কমব্যাটিং জেন্ডার ভায়োলেন্স অ্যান্ড বিল্ড কমিউনিটি রেজিলেন্স টু ক্লাইমেট চেঞ্জ এই প্রকল্পের ১০৬টি সহযোগী সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে এই জরিপ পরিচালনা করেছে। সংবাদ সম্মেলনে তিনটি বেসরকারি সংস্থার নির্বাহী পরিচালকরা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।

ইউনিসেফ এমজেএফ এমজেএফ নির্বাহী শাহীন আনাম নারী নির্যাতন বাল্যবিয়ে বাল্যবিয়ে বেড়েছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন শিশু নির্যাতন

বিজ্ঞাপন

না ফেরার দেশে অঞ্জনা
৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:৫৪

এই তাসকিনকে সমীহ করবেন যে কেউ
৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:৪৭

আরো

সম্পর্কিত খবর