বহির্বিশ্বে বড় ধরনের বিপদে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ— রিজভী
১০ জুলাই ২০২০ ১৫:১৪
ঢাকা: করোনাভাইরাস ইস্যুতে বহির্বিশ্বে বড় ধরনের বিপদে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ— এমনটিই মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ‘শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি গত বুধবার ইতালির রোমের বিমানবন্দরে গিয়ে পৌঁছেছিলেন। সেখানে তাদের অনেকের করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় প্রায় সবাইকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ইতালির মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের ভুয়া সার্টিফিকেট কেনা বেচা নিয়ে নেতিবাচক খবর প্রকাশিত হয়েছে। ফলে করোনা ইস্যুতে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ বড় ধরনের বিপদের মুখে পড়তে যাচ্ছে।’
শুক্রবার (১০ জুলাই) দুপুরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, ‘বৈশ্বিক করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে বর্তমান সরকার ক্রমাগত ব্যর্থতা প্রদর্শন করে আসছে। একের পর এক হৃদয় বিদারক ঘটনার মধ্যে এখন আবার করোনা টেস্ট নিয়ে ভুয়া সার্টিফিকেট ও জালিয়াতির জন্য বিদেশের গণমাধ্যমে নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হচ্ছে বাংলাদেশ।’
তিনি বলেন, “দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে— ইতালি, চীন, জাপান, ভিয়েতনাম, কাতার, আরব আমিরাতসহ অনেকগুলো দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে বিমান চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। বাংলাদেশিদের ইতালিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ইতালিতে বাংলাদেশিদের বাঁকা চোখে দেখা হচ্ছে। বাংলাদেশিদের বহনকারী বিমানকে বলা হচ্ছে ‘করোনা বোমা’।”
তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারকে আগেই সতর্ক করে বলেছিলাম, করোনা টেস্ট ও ট্রিটমেন্টের ব্যাপারে সরকারের সিরিয়াস হওয়া দরকার। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কম দেখিয়ে নিজেদের কাগুজে সাফল্য দেখানোর চেয়ে বেশি জরুরি করোনাভাইরাস টেস্ট নিয়ে দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন। কারণ, গ্লোবাল ভিলেজের এই সময়ে করোনাভাইরাস টেস্টের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশ বিশ্বাসযোগ্যতা হারালে ভবিষ্যতে নাগরিকদেরকে অত্যন্ত চড়া মূল্য দিতে হতে পারে।’
‘নাগরিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে দেশে যেমন ভয়ংকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, অদূর ভবিষ্যতে আমাদের নাগরিকদের বিদেশের শ্রম বাজারে থাকা না থাকার বিষয়টিও বেশ ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। আজকের বাস্তবতায় দেখতে পাচ্ছি, বিএনপির এই আশঙ্কাটিই এখন দুঃখজনকভাবে সত্য হতে চলেছে,’— বলেন রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার বলে আসছি, করোনাভাইরাস ‘ট্রেস-টেস্ট এবং ট্রিটমেন্ট’ নিয়ে সরকার কী করছে, কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে, এগুলো জনগণকে জানাতে হবে। এমনকি করোনা মোকাবিলায় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে প্রয়োজনে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করার জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল। সরকার সেই দাবি কানে নেয়নি।
রিজভী বলেন, “এখন খবর বেরুচ্ছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করোনা মোকাবিলায় ‘জেকেজি হেলথকেয়ার’ বা ‘রিজেন্ট হাসপাতাল’ নামের কিছু ভুয়া প্রতিষ্ঠানকে ‘করোনা টেস্ট ও ট্রিটমেন্টের’ অনুমোদন দিয়েছে। তাদের একমাত্র যোগ্যতা ছিল— এইসব ভুয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্ণধাররা ক্ষমতাসীন দলের নেতা কিংবা ঘনিষ্ঠ।”
তিনি বলেন, “অনুমোদন পেয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিবাজরা নমুনা পরীক্ষা না করেই হাজার হাজার লোককে টাকার বিনিময়ে ‘করোনামুক্ত সার্টিফিকেট’ ইস্যু করত। এদের সার্টিফিকেট নিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়ে আটক কিংবা ফেরত আসতে শুরু করায় এখন সরকারের টনক নড়েছে।”
রিজভী বলেন, ‘কখনো হলমার্ক কেলেঙ্কারি, কখনো রিজার্ভ ফান্ড লুট, কখনো ক্যাসিনো কেলেঙ্কারি আর এখন করোনা পরীক্ষা এবং চিকিৎসা নিয়ে কেলেঙ্কারি চলছে। প্রতিটি কেলেঙ্কারির হোতা সরকারি দলের পদ-পদবীধারী নেতা কিংবা সরকারের বিশেষ আনুকূল্যপ্রাপ্ত দুর্নীতিবাজরা।’
করোনার জাল সনদ টপ নিউজ ব্রিফিং ভিডিও কনফারেন্স ভুয়া সার্টিফিকেট রুহুল কবীর রিজভী