Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আর্থিক সুরক্ষায় অর্ধেক পাওনা সঞ্চয়পত্রে পাবেন পাটকল শ্রমিকরা


৩ জুলাই ২০২০ ১৩:২৫ | আপডেট: ৩ জুলাই ২০২০ ১৮:২০

ঢাকা: বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) পরিচালিত রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর আধুনিকায়ন এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এসব পাটকলকে আরও সক্ষম করে গড়ে তুলতে উৎপাদন বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১ জুলাই থেকেই পাটকলগুলো বন্ধ হয়েছে। তবে পাটকল শ্রমিকদের যেন দুর্ভোগ পোহাতে না হয়, সে জন্য প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিকের প্রত্যেকের যাবতীয় পাওনা এককালীন পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শ্রমিকদের আর্থিক সুরক্ষার দিকটি বিবেচনায় নিয়ে তাদের পাওনার অর্ধেক পরিশোধ করা হবে সঞ্চয়পত্র হিসেবে। এ থেকে তারা তিন মাস পর পর উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মুনাফাও পাবেন।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী পাটকলগুলোর শ্রমিকদের যাবতীয় বকেয়া পরিশোধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে অনুযায়ী বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের আওতায় রয়েছেন ২৪ হাজার ৮৮৬ জন শ্রমিক। অন্যদিকে ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত অবসরে যাওয়া শ্রমিকদের (৮ হাজার ৯৫৬ জন) ও বদলি শ্রমিকদের পাওনাও একইসঙ্গে পরিশোধ করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানানো হয়, এসব শ্রমিকের অবসরকালীন সুবিধাসহ পাওনা পরিশোধ বাবদ সরকারের খরচ হবে ৫ হাজার কোটি টাকা।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- ‘শ্রমিকদের ঠকানো হবে না, ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করা হবে’

বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো নিয়ে অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ সভায় পাটকল শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের এসব সিদ্ধান্ত হয়। পরে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে শ্রমিকদের প্রাপ্য বিষয়ে গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে। শুক্রবার (৩ জুলাই) সকালে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী নিজেও সংবাদ সম্মেলন করে পাটকল শ্রমিকদের পাওনার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় বলছে, বিজেএমসি’র অধীনে পরিচালিত রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর শ্রমিকরা বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এর ধারা ২৬-এর উপধারা (৩) অনুযায়ী নোটিশ মেয়াদের, অর্থাৎ ৬০ দিনের মজুরি পাবেন। এর সঙ্গে তারা চাকরিবিধি অনুযায়ী প্রাপ্য গ্র্যাচুইটি (জাতীয় মজুরি কাঠামো ২০১৫ অনুযায়ী) ও প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমা হওয়া সব অর্থ পাবেন। পাশাপাশি নির্ধারিত হারে গোল্ডেন হ্যান্ডশেক সুবিধাও পাবেন।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পাটকলগুলো এখন বন্ধ হলেও পরবর্তী সময়ে সেগুলোকে পাবলিক-প্রাইভেট-পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় চালু করা হবে। সেক্ষেত্রে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের আওতায় থাকা শ্রমিকরাই অগ্রাধিকার পাবেন। শুধু তাই নয়, তাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তাদের প্রাপ্যটুকুও পুরোপুরি নগদ অর্থে পরিশোধ না করে অর্ধেক নগদে ও অর্ধেক সঞ্চয়পত্র আকারে পরিশোধ করা হচ্ছে, যা থেকে তারা তিন মাস অন্তর অন্তর মুনাফা পাবেন।

বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী সংবাদ সম্মেলনে জানান, শ্রমিকদের পাওনার অর্ধেক তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র আকারে দেওয়ার ফলে শ্রমিকরা বাধ্যতামূলক সঞ্চয়ের সুযোগ পাবেন। এর মাধ্যমে তারা ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ হারে তিন মাস পর পর উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মুনাফা পাবেন। এতে শ্রমিকদের জন্য বাড়তি আর্থিক সুরক্ষা তৈরি হবে।

হিসাব অনুযায়, যেসব শ্রমিক ন্যূনতম মোট ১৪ লাখ টাকা পাওনা আছে, তাদের সাত লাখ টাকা নগদ ও সাত লাখ টাকা সঞ্চয়পত্র আকারে দেওয়া হবে। তারা তিন মাস পরপর সঞ্চয়পত্র থেকে মুনাফা পাবেন ১৯ হাজার ৩২০ টাকা। যাদের মোট প্রাপ্য ২৪ লাখ টাকা, তারা নগদ ১২ লাখ টাকার পাশাপাশি ১২ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র পাবেন। তারা প্রতি তিন মাসে মুনাফা পাবেন ৩৩ হাজার ১২০ টাকা।

এছাড়া, যাদের ৩৮ লাখ টাকা প্রাপ্য, তারা একইভাবে ১৯ লাখ টাকা নগদ ও ১৯ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র পাবেন। তাদের জন্য তিন মাস পর পর ‍মুনাফার পরিমাণ ৫২ হাজার ৪৪০ টাকা। আর যারা সর্বোচ্চ ৫৪ লাখ টাকা করে পাবেন, তাদের জন্য ২৭ লাখ টাকা করে নগদ ও সঞ্চয়পত্র থাকছে। তারা তিন মাস পরপর মুনাফা পাবেন ৭৪ হাজার ৪২০ টাকা করে।

আরে আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বৈঠকের পর বিকেলে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমেদ কায়কাউস। মুখ্য সচিব বলেন, বর্তমানে দেশে যে পাট ও পাটজাত পণ্য উৎপাদিত হয়, তার শতকরা ৯৫ শতাংশই বেসরকারি পাটকলে উৎপাদিত হয়। সরকারি খাতটি অত্যন্ত স্কুইজড (সংকুচিত) হয়ে গেছে, যা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছিল না। এগুলোকে আবার প্রতিযোগিতায় কিভাবে আনা যায় এবং কিভাবে শক্তিশালী করা যায়, সে বিবেচনায় এখন পাটকলগুলো বন্ধ করার ঘোষণা করা হয়েছে।

মুখ্য সচিব বলেন, পাটকল শ্রমিকদের পাওনা টাকা সরাসরি তাদের ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হবে এবং কোনো পাটকল অথবা অন্য কোনো মধ্যস্বত্বভোগী এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকবে না।

শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীও বলেন, এটা সরকারি টাকা। মাঝখানে কেউ নেই। এখানে কোনো দালাল নেই। টাকা শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি চলে যাবে। শ্রমিকরা কী পাচ্ছে আর পাচ্ছে না, সেটা আপনারা নিজেরাই জানতে পারবেন।

এর আগে, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পাটকল শ্রমিকদের সব ন্যায্য পাওনা ও বকেয়া বাজেট পাসের পর অর্থছাড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শ্রমিকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলে যাবে। ২৬ হাজার পাটকল শ্রমিকের যার যা পাওনা রয়েছে, তার পুরোটাই তারা পেয়ে যাবেন।

শ্রমিকদের আশ্বস্ত করে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, শ্রমিকদের আর চিন্তার কিছু নেই। আমি নিজেও শিল্পপতি। আমারও শ্রমিক আছে। আমি যেমন আমার শ্রমিকদের দেখি, পাটকল শ্রমিকদেরও আমি একইভাবে দেখব। তাদের সব দাবি-দাওয়ার সমাধান আমি করব। আমি বিশ্বাস করি, শ্রমিকদের ভয়ের কিছু নেই।

আরও পড়ুন-

মন্ত্রীকে পাটকল শ্রমিকদের ধন্যবাদ, মন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রীকে

‘১৫ দিনের মধ্যে পাটকল শ্রমিকদের মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন’

বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর ঘোষণায় পাটকল শ্রমিকদের অনশন প্রত্যাহার

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর আধুনিকায়নে উৎপাদন বন্ধের সিদ্ধান্ত

বাজেটের টাকা ছাড় হলেই পাটকল শ্রমিকরা বকেয়া বুঝে পাবে: পাটমন্ত্রী

গোল্ডেন হ্যান্ডশেক টপ নিউজ পাটকল পাটকল বন্ধ পাটকল শ্রমিক বিজেএমসি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের আর্থিক সুরক্ষা শ্রমিকদের পাওনা শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ সঞ্চয়পত্র

বিজ্ঞাপন

লন্ডনের পথে খালেদা জিয়া
৭ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:৩৯

আরো

সম্পর্কিত খবর