সরকারি চাকরি করেও ছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জেকেজি’র চেয়ারম্যান
২৫ জুন ২০২০ ১০:৪৮ | আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২১ ১৯:৩৮
ঢাকা: জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে রেজিস্ট্রার চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী। সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেও তিনি ছিলেন জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারম্যান। এই পরিচয়ে তিনি স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন এবং কথা বলতেন গণমাধ্যমের সঙ্গে। সরকারি চাকরির পাশাপাশি বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদে থাকা সম্ভব কি না এই প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, কাগজে-কলমে তিনি প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান না।
এর আগে গত ১৬ জুন সারাবাংলা ডটনেটে করোনা পরীক্ষা নিয়ে জেকেজি হেলথকেয়ারের প্রতারণার জাল শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদে তাদের নানা রকমের প্রতারণার বিষয়ে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়।
কোভিড-১৯ পরীক্ষা: জেকেজি’র সব অনুমোদন বাতিল
জানা যায়, এই প্রতিষ্ঠানের শুরুর দিক থেকেই জড়িত ছিলেন ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী। তিতুমীর কলেজে নিজেদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ব্যবহারের সময় থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময় নিজের এই পরিচয় প্রকাশ করেন তিনি। এই প্রতিষ্ঠানের এমডি আরিফুল চৌধুরী তার স্বামী। অনুসন্ধানে জানা যায়, জেকেজি হেলথকেয়ারের অনুমতি পাওয়া থেকে শুরু করে এই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডেও জড়িত এই চিকিৎসক। এ বিষয়ে খোদ জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও নানা রকম অভিযোগ করেন।
এদিকে চিকিৎসকদের সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টর’স সেফটি, রাইটস অ্যান্ড রেসপনসিবিলিটির পক্ষ (এফডিএসআর) থেকে ২৪ জুন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের অপসারণ দাবি করে একটি চিঠি দেওয়া হয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপির কাছে। সেখানে ডা. সাবরিনা চৌধুরীর নাম উল্লেখ না করে তার পদবী তুলে ধরে বলা হয়, এই জেকেজির চেয়ারম্যান একজন সরকারি চাকুরিরত চিকিৎসক। অফিস সময়ে এই চিকিৎসকের উপস্থিতিতে জেকেজি’র প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিদর্শনের নামে ভুয়া কাজের ভিডিও করেছেন। এই চিকিৎসক অফিস বাদ দিয়ে সেখানে কী করছেন তার খোঁজ নেন নাই। সরকারি চাকরির বিধিমালা লঙ্ঘন করে জেকেজি নামের প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসেবে এই কর্মকর্তা তিনি যে অধিদফতরের অধীনে, তার সঙ্গেই অন্য কাজের দায়িত্ব নিয়েছেন। যা সম্পূর্ণ অসদাচরণ।
এপ্রিল মাসে দেশে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার জন্য অনুমতি পায় জোবেদা খাতুন সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা বা জেকেজি হেলথকেয়ার। নমুনা পরীক্ষায় টেকনোলজিস্ট ও স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণের জন্য তাদের রাজধানীর তিতুমীর কলেজে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের জায়গা করে দেওয়া হয়। ১২ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জেকেজির প্রস্তুতি দেখতেও যান তিতুমীর কলেজে। সেদিনও উপস্থিত থেকে নিজেকে চেয়ারম্যান পরিচয় দেন ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী।
এপ্রিলে জেকেজি’র কার্যক্রম পরিদর্শনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, পাশে চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী।
পরবর্তীতে স্বামী স্ত্রীর মাঝে বিভিন্ন বিষয়ে মনোমালিন্য শুরু হলে তার প্রভাব পড়ে কর্মকাণ্ডেও। এরই মধ্যে একদিন আরিফুল চৌধুরী যান জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে। সেখানে তিনি একটি বিভাগের দায়িত্বে থাকা কার্ডিয়াক সার্জনের রুমে স্ত্রীকে অপমান করেন। একই সঙ্গে ধমক দেন সেই কার্ডিয়াক সার্জনকেও। এ ঘটনার পরে তিনি বিভিন্ন স্থানে কিছু খুদে বার্তা পাঠান কেনো এমন করেছেন তা জানিয়ে। এই ঘটনার পরে ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী ও সেই কার্ডিয়াক সার্জন শের-ই বাংলা নগর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের করেন বলে জানান সাবরিনা আরিফ চৌধুরী।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই কার্ডিয়াক সার্জন ও ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরীর উদ্যোগেই মূলত জেকেজি হেলথকেয়ার বুথ স্থাপনের কাজ পায়। তবে পরবর্তীতে তাদের সম্পর্ক নিয়ে আরিফুল চৌধুরী আপত্তি জানালে সেখানেই শুরু হয় টানাপোড়েন। আর এ সব বিষয়ে খোদ স্বাস্থ্য অধিদফতরেই একাধিক অভিযোগ যায়। বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকও জানেন। আরিফুল চৌধুরীর পক্ষ থেকেও তাকে খুদে বার্তা দিয়ে সাবরিনা আরিফ চৌধুরীর বিষয়ে অবগত করা হয়। কিন্তু তাও বাতিল করা হয়নি তাদের নমুনা পরীক্ষা করার অনুমতি।
কিন্তু সরকারি চাকরি করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদে থাকার বিষয়ে প্রশ্ন করলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আমরা যারা সরকারি হাসপাতালে চাকরি করি তারা কোনোভাবেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কোনো পদে থাকতে পারি না। কিন্তু হাসপাতালের একজন রেজিস্ট্রারড চিকিৎসক হয়ে ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী কিভাবে এই পদের পরিচয় দিতেন বা চেয়ারম্যান পদে থাকেন তা বোধগম্য না।
এ দিকে জেকেজি হেলথ কেয়ারের প্রশিক্ষণের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে তিতুমীর কলেজে চিঠি পাঠানো হয়। কিন্তু পরবর্তীতে এই প্রতিষ্ঠানের ছয় জন কর্মচারীকে মারধর করে জেকেজি হেলথকেয়ারের কর্মীরা।
এ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ আশরাফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানে যখন স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে চিঠি দেওয়া হয় মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তখন আমরা এতে রাজি হয়ে যাই। কারণ এটা এক ধরনের দেশেরই সেবা করা। এ বিষয়ে খুব সম্ভবত ১১ এপ্রিলের দিকে একটা চিঠি আমাদের দেওয়া হয় স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকেও। সেখানে বলা হয় জেকেজি হেলথকেয়ারের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করা হবে আমাদের এখানে। তাদের জন্য আমরা কলেজের নতুন নির্মাণাধীন ভবন ও অডিটোরিয়াম ছেড়ে দেই। পরবর্তীতে আমরা দেখি আসলে তারা পুরো কলেজ ক্যাম্পাসেই বিভিন্ন রকমভাবে ঘুরে বেড়াতো। এ বিষয়ে আমার কাছে অভিযোগ আসে। পরবর্তীতে সেই রাতে আমার নিরীহ কর্মীদের মারাত্মকভাবে জখম করে।
তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য সে রাতের ঘটনার পরে আমাদের বক্তব্য জানার জন্য কোনো গণমাধ্যম এগিয়ে আসেনি। পরবর্তীতে এসেছে কয়েকটা গণমাধ্যম কিন্তু তার আগেই সবাই সাবরিনা আরিফ চৌধুরীর বক্তব্যটাই ফলাও করে প্রচার করে।
সাবরিনা আরিফ চৌধুরীর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা নানা মাধ্যমে শুনেছি তিনি জেকেজি হেলথ কেয়ারের মালিক আরিফুল চৌধুরীর স্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান। হৃদরোগ হাসপাতালের একজন চিকিৎসক। সরকারি কর্মচারী হয়ে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান কিভাবে হয় তা আসলে আমাদের জানা নেই। আইনত এমনটা করতে পারার কথা না।’
১৬ জুন সারাবাংলা ডট নেটে সংবাদ প্রকাশের আগে করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ থেকে রিপোর্ট জানানো পর্যন্ত বিভিন্ন অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জানতে জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারম্যান সাবরিনা আরিফ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় সারাবাংলার পক্ষ থেকে। বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহের অনুমতি আছে কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আপনি হটলাইনে যোগাযোগ করুন।’ বলেই ফোন কেটে দেন তিনি। এরপর একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পরে তিনি প্রতিবেদকের কাছে একটি খুদে বার্তা পাঠান। যেখানে লেখা ছিল, ‘আপনার report দেখলাম ! দয়া করে JKG Health Care এর সাথে আমার নাম ব্যবহার করবেন না ! তাদের সাথে concept এ না মেলায় আমি গত প্রায় ১ মাস আগে থেকেই JKG নিয়ে কাজ করছি না! DG sir, ADG madam-সহ স্বাস্থ্য অধিদফতরের সবাই এটি জানেন!
ভালো থাকবেন!- ডা. সাবরিনা আরিফ’
পরবর্তীতে তার সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয় যেখানে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।
কিন্তু অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে যখন প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় তখন তাকে ২৩ জুন আবার ফোন করা হয়।
আরিফুল চৌধুরী হাসপাতালে আপনার স্যারের কেবিনে গিয়ে মারধর করেছে কিন্তু আপনি নারী নির্যাতন মামলা করেননি কেনো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি করেছি। মামলা না আমি জিডি করেছি। স্যাররাও করেছেন আর আমিও করেছি। তার কপি আমার কাছে আছে। আমি করেছি এটা শনিবার। আমি ও স্যার দুজনেই এই বিষয়ে জিডি করেছি শের-ই বাংলা নগর থানায়। স্যার জিডি করেন সেই সপ্তাহের বৃহস্পতিবার আর আমি করেছি শনিবার।’
থানায় গিয়ে যে জিডি করেছেন তার কোনো নম্বর বা কপি কী দেওয়া যাবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা তো আসলে জেকেজির সঙ্গে রিলেটেড না। প্লিজ আমাকে এভাবে এখন আর যুক্ত করাটা দরকার নাই। আমি জিডি করেছি কিন্তু আমি নারী নির্যাতন মামলা করিনি। এই জিনিসটা আনা আমার মান-সম্মানেরও একটা বিষয় হয়ে আসে।’
তিনি বলেন, ‘আমি আপনাকে আগেও বলেছি এটার ম্যানেজমেন্টের সাথে যেহেতু…আমি একটা অন্য এক উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু করেছিলাম। অনেক কষ্ট করছি এটার জন্য পাঁচ বছর আগে। আমি অনেক কষ্ট করছি। কিন্তু দেখছি যে আমি আসলে এখানে কিছুই না। রোগী দেখার জন্যে আমি কোনো টাকা পয়সা নিয়েছি বলেও কেউ নিতে পারবে না।’
সরকারি চাকরি করেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদের নাম আপনি কিভাবে ব্যবহার করেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘না চেয়ারম্যান তো আমি না। এটার আসলে কোনো কাগজ পত্র নাই। এমনেই আমাকে মুখে মুখে চেয়ারম্যান বলতো সবাই। আমার নামে একটা কাগজপত্রও তো নাই। আর আমার কথাবার্তাও কেউ শুনে নাই। এমনিতে আমাকে কনভেনর নামে ইয়ে করতো। আমি শুধু একজন চিকিৎসক হিসেবে এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ছিলাম। সেবা দিয়ে গেছি শুধু।’
জেকেজির প্রতারণা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি এগুলোর সঙ্গে জড়িত না। এ বিষয়ে আমি সংশ্লিষ্ট সকলকে জানিয়েছি ৩ জুন।’
তাহলে তিতুমীর কলেজের ঘটনার পরে আপনি নিজেকে চেয়ারম্যান পরিচয় দিয়েই গণমাধ্যমে কথা বলেছেন কেনো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সেখান থেকে আমাকে ফোন করে ডাকা হয় যে ওরা খুব বিপদে পড়েছে। তখন আমি যাই কিন্তু আমি সত্যি কথা বলতে গেলে ৩ তারিখেই চলে আসি জেকেজির দায়িত্ব ছেড়ে। এর পর থেকে আমি নাই যেটা আমি আপনাকেও জানিয়েছি। সবগুলো গণমাধ্যমেই আমি একটা প্রেস রিলিজ করে পাঠিয়ে দিয়েছি। সব সাংবাদিকরাই মোটামুটি জানে। তবে ওরা বলেছে ওদের ডকুমেন্টের মধ্যে এটা রাখা আছে।’
এর আগে ১৬ জুন জেকেজি কোভিড টেস্টিং প্রজেক্ট কর্মকর্তা সাঈদ চৌধুরী সারাবাংলাকে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবে ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরীর নাম স্বীকার করে নেন।
তবে ২৩ জুন তাকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এ বিষয়ে জেকেজি হেলথ কেয়ারের এমডি আরিফুল চৌধুরীর মোবাইলে ১৫ জুন তিনবার ও ২৩ জুন ১৪ বার ফোন দেওয়া হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি উত্তর দেননি।
জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালের যে চিকিৎসকের রুমে গিয়ে হুমকি ধামকি দেওয়া হয় তার মোবাইলে ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি। আর তাই জিডি বিষয়ে সাবরিনা চৌধুরীর বক্তব্যে কোনো তথ্য জানা যায়নি। ফোন দিলেও যেহেতু তার সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়নি তাই নাম আপাতত প্রকাশ হচ্ছে না এই প্রতিবেদনে।
শের-ই বাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানে আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘জিডি নম্বর না বললে আসলে এটা বলা খুব মুশকিল। আর তাই আমি মনে করতে পারছি না। যদি আমাকে কোনো নম্বর দেওয়া হয় তবে আসলে বলতে পারবো। কারণ থানাতে আসলে যারা আসে তাদের সকলের নাম মনে রাখা সম্ভব হয় না।’
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘আসলে তাদের বিষয়টা আমাদের কাছে বিব্রতকর। এত এত অভিযোগ আসছে যে এটা নিয়ে আসলে কিছু ভাবতে পারছি না। কিন্তু তাও নমুনা পরীক্ষা করানোর স্বার্থে হয়তো বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।’
এ দিকে সরকারি চাকরি করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদে থাকা বা পরিচয় দেওয়া কতটুকু নৈতিক এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. বেলাল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আসলে এটা আমার জানা নেই। এটা আমার নলেজে নেই আর কি।’
সাবরিনা আরিফ চৌধুরী ও জেকেজি হেলথকেয়ারের বিষয়টি জানানোর পর তিনি বলেন, ‘এটা আমি জানি না ঠিক, বলতে পারবো না তাই। না জানলে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। এটা আমার নলেজে নাই তো।’
ডা. সাবরিনার বিবৃতি
এদিকে, ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘অত্যন্ত শঙ্কার সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, সম্প্রতি কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে জেকেজি হেলথকেয়ার সংক্রান্ত একটি ঘটনায় অপ্রাসঙ্গিকভাবে আমাকে জড়িয়ে কিছু বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে। আমি স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, জেকেজি হেলথকেয়ারের মালিকানা বা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে আমি কখনই যুক্ত ছিলাম না। ওভালের মালিকের স্ত্রী হওয়ায় উনি মৌখিকভাবে আমাকে চেয়ারম্যান বলে সম্বোধন করতেন, যা তার কর্মচারীদের মধ্যেও ব্যপৃত হয়! এর কোনো ডক্যুমেন্টারি ভিত্তি নেই বলে একে কখনও গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করিনি বা প্রতিবাদ করিনি, যা হয়তো আমার করা উচিত ছিল!’
তিনি বিবৃতিতে বলেন, ‘আমি একজন চিকিৎসক ও সচেতন নাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির অনুরোধে টেলিমেডিসিন সেবা ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি মাত্র। সেটিও আমার অফিস টাইমের পরে ও আমার কতৃপক্ষকে জানিয়ে! এর বাইরে জেকেজি হেলথকেয়ারের ভালো-মন্দ কোনো ধরনের কাজেই আমার সংশ্লিষ্টতা কিংবা দায়বদ্ধতা নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যেকোনো অনৈতিক কাজে জড়িত থাকলে করলে তার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হওয়া দরকার। সম্প্রতি এ প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে কিছু সংবাদমাধ্যমের নোংরা অপপ্রচারে আমি অত্যন্ত দুঃখিত ও মর্মাহত। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে আমার সংশ্লিষ্টতা বিষয়ে ভুল ও মিথ্যা তথ্য প্রদান করে অপপ্রচার চালানো হলে আমি আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হব।’
দেশে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই নমুনা পরীক্ষা বাড়ানোর কথা বলে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় বেসরকারি দুই প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয় নমুনা সংগ্রহের অনুমতি। তার মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান ওভাল গ্রুপের প্রতিষ্ঠান জোবেদা খাতুন সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা তথা ‘জেকেজি হেলথকেয়ার’। প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ নমুনা সংগ্রহের অনুমতি রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির এবং সেটি করার কথা বিনামূল্যে। তবে সারাবাংলার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে— প্রতিষ্ঠানটি নমুনা সংগ্রহ নিয়ে নানা ধরনের জালিয়াতিতে যুক্ত। জেকেজি হেলকেয়ারের এমন সব অনিয়ম-জালিয়াতি নিয়ে সারাবাংলার ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ থাকছে পঞ্চম ও শেষ পর্ব।
প্রথম পর্ব: করোনা পরীক্ষা নিয়ে জেকেজি হেলথকেয়ারের প্রতারণার জাল
দ্বিতীয় পর্ব: অধিদফতরের কর্মকর্তাদের ধমক দিয়ে কাজ করাত জেকেজি হেলথকেয়ার
তৃতীয় পর্ব: সরকারি খরচে বেসরকারি ‘প্রতারণা’ জেকেজি হেলথ কেয়ারের
চতুর্থ পর্ব: চিকিৎসকরা পেত না পিপিই, জেকেজির জন্য ‘আনলিমিটেড’