কিংবদন্তি সাংবাদিক কামাল লোহানী আর নেই
২০ জুন ২০২০ ১০:৪২ | আপডেট: ২০ জুন ২০২০ ১৭:৪১
ঢাকা: প্রথিতযশা সাংবাদিক ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সংগঠক কামাল লোহানী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। শনিবার (২০ জুন) সকালে মহাখালীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
কামাল লোহানীর ছেলে সাগর লোহানী সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
৮৬ বছর বয়সী সাংবাদিক কামাল লোহানী ফুসফুস জটিলতা ও ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন। শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তাকে ১৭ জুন প্রথমে রাজধানীর পান্থপথে হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে নমুনা পরীক্ষায় তার শরীরে শুক্রবার (১৯ জুন) করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। এরপর তাকে গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়।
সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া গ্রামের খান মনতলা গ্রামে জন্মগ্রহণকারী সাংবাদিক কামাল লোহানী সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিভিন্ন আন্দোলনে প্রথম সারিতে ছিলেন। এই কারণে তাকে একাধিকবার তাকে জেলে যেতে হয়েছে। লেখনির মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে আজীবন লড়াই চালিয়ে গেছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত গুণী এই সাংবাদিক।
পাবনা অ্যাডওয়ার্ড কলেজে ছাত্রাবস্থায় তিনি কমিউনিস্ট রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। তিনি ভাষা আন্দোলনেও অংশ নেন। রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণে তিনি লেখাপড়ার ইস্তফা দেন।
১৯৫৩ সালে নুরুল আমিনসহ মুসলিম লীগ নেতাদের পাবনায় আগমন প্রতিরোধ করতে গিয়ে তাকে জেলেও যেতে হয়।
ষাটের দশকের শেষ ভাগে ন্যাপের (ভাসানী) রাজনীতিতে জড়িয়ে কামাল লোহানী যোগ দেন আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে। ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানেও সাংবাদিক কামাল লোহানী ভূমিকা রাখেন।
১৯৭১ সালে বাঙালির স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হলে কামাল লোহানী একজন শিল্পী, একজন সাংবাদিক ও একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে যুদ্ধে যোগ দেন। সে সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংবাদ বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি বাংলাদেশ বেতারের পরিচালকের দায়িত্ব পান।
১৯৭৫ এর ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সম্পৃক্ত হন কামাল লোহানী।
১৯৮১ সালে দৈনিক বার্তার সম্পাদকের চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে নতুন উদ্যমে সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে সংগঠিত করার কাজ শুরু করেন। পরে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
কামাল লোহানীর সাংবাদিকতার শুরু হয়েছিল দৈনিক মিল্লাত দিয়ে। এরপর আজাদ, সংবাদ, পূর্বদেশ, দৈনিক বার্তায় গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন। সাংবাদিক ইউনিয়নে দুই দফা যুগ্ম সম্পাদক ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে দুইবার মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন কামাল লোহানী। ছায়ানটের সম্পাদক ছিলেন পাঁচ বছর। তিনি উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা পদে ছিলেন।