Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কমিশন ছাড়া কাজ হয় না— শ্রীমঙ্গলে ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ


৮ জুন ২০২০ ২১:২১ | আপডেট: ৮ জুন ২০২০ ২১:২৩

মৌলভীবাজার: শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভুনবীর ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মিনারা বেগমের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসী এবং ভুক্তভোগীদের অভিযোগ বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, গর্ভবতী ভাতা— প্রায় সব ধরনের সরকারি কার্ড করতে গেলেই তাকে কমিশন দিতে হয়। উপকারভোগীরা কার্ড করার জন্য কখনও ভাতার পুরো টাকা, কখনও অগ্রিম টাকা, কখনও বা ভাতারা টাকার একটি অংশ দিতে বাধ্য হন তাকে।

বিজ্ঞাপন

ভুনবীর ইউনিয়নের বাসিন্দা ছমেদ মিয়া বলেন, ‘আমি বয়স্ক ভাতা পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু ভাতা পাই না। মেম্বারের কাছে গেলে তিনি বললেন, কার্ড করে দেব, কিন্তু ভাতা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে পাঁচ হাজার টাকা দিতে হবে। আমি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে অনেক দিন ঘোরাঘুরি করেও কার্ড পাইনি। পরে ভাতার টাকা পেলে পাঁচ হাজার টাকা দেবো জানালে, তিনি আমায় কার্ড করে দেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেদিন ব্যাংক থেকে আমি বয়স্ক ভাতার টাকা তুলি, সেদিন তিনি ব্যাংকের নিচে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ব্যাংক থেকে বের হওয়ার পরই তিনি পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে নেন।’

জ্যোৎস্না বেগম নামে একজন বলেন, ‘আমি গর্ভবতী অবস্থায় মিনারা বেগমের কাছে গিয়েছিলাম গর্ভ-ভাতার কার্ড করে দেওয়ার জন্য। তিনি আমাকে বলেন, টাকা ছাড়া এসব কার্ড করা যায় না। যতবার টাকা পাবে ততবার অর্ধেক টাকা দিতে হবে। আমি গরিব মানুষ। টাকার দরকার ছিল তাই রাজি হই। আমি চার বার তিন হাজার টাকা করে পেয়েছি। এর মধ্যে তিন বার তিনি টাকা উঠানোর সঙ্গে সঙ্গে অর্ধেক (১,৫০০ টাকা) করে নিয়েছেন। শেষবার আমি তাকে টাকা দেইনি।’

চেরাগ আলী নামে গ্রামের একজন অভিযোগ করে বলেন, ‘কার্ড করতে নাকি অনেক টাকা লাগে। উপজেলার বিভিন্ন কর্মকর্তাকে নাকি ঘুষ দিতে হয়। উপজেলার কর্মকর্তাদের টাকা না দিলে কার্ড করা যায় না— এসব কথা বলে মেম্বার আমার কাছ থেকে কার্ড করার আগে পাঁচ হাজার টাকা নেন। আমি ঋণ করে তাকে টাকা দেই। পরে আমাকে অনেক দিন ঘুরিয়ে কার্ড করে দেন।’

নাম প্রকাশ না করে গ্রামের একাধিক বাসিন্দা জানান, তারা কার্ড করার আগেই ইউপি সদস্য মিনারা বেগমকে পাঁচ হাজার টাকা করে দিয়েছেন। যারা টাকা দিয়েছে তাদের কার্ড হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ভুনবীর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য (ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) মো. নিয়াজ ইকবাল মাসুদ জানান, আমাদের কাছেও অনেকে ওই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। তিনি প্রভাবশালী হওয়ায় সাধারণ জনগণ ভয়ে ওনার নামে লিখিত অভিযোগ দিচ্ছে না। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাচ্ছি।

তবে অভিযুক্ত ইউপি সদস্যা মিনারা বেগম সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘টাকা নেওয়ার বিষয়টি সত্য নয়, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি কোনো ভাতার কার্ড করার জন্য কারো কাছে টাকা-পয়সা চাইনি। আমাকে ষড়যন্ত্র করে একটি মহল ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।’

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি অভিযোগ পেয়েছি এবং ইতোমধ্যে এই বিষয়টি তদন্তের জন্য দুই জনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে ওই নারী ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ইউপি সদস্য দুর্নীতির অভিযোগ ভুনবীর ইউনিয়ন