Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনায় শিক্ষাখাতে বড় বিপর্যয় দেখছেন শিক্ষাবিদরা


৬ জুন ২০২০ ১১:১৩ | আপডেট: ৬ জুন ২০২০ ১২:৩৭

ঢাকা: বিশ্বে মহামারী আকার ধারণ করা করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশের শিক্ষাখাত। এ পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে কমপক্ষে ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বিদ্যালয় থেকে ঝড়ে পড়বে বলে শিক্ষাবিদদের আশঙ্কা। পাশাপাশি বাড়বে শিশু শ্রম, বাল্যবিয়ে ও পুষ্টিহীনতা।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশে অবরুদ্ধ পরিস্থিতিতে লাখ লাখ খেটে খাওয়া, দিনমজুর মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। কর্মহীন দরিদ্র সেসব শ্রেণির মানুষ তাদের সন্তানদের ভবিষ্যতে বিদ্যালয়ে পাঠাবেন কীনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তাই শিক্ষাক্ষেত্রের অর্জন ধরে রাখতে সমন্বিত উদ্যোগের পাশাপাশি আসছে বাজেটে কমপক্ষে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ শিক্ষা খাতের জন্য রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর এবং মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তর এবং ব্যানবেইস এর তথ্য অনুযায়ী দেশে প্রাক- প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ কোটি। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২ কোটি ১৯ লাখ ৩২ হাজার ৬৩৮ জন শিক্ষার্থী। মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোয় মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ৭৫ লাখ ১০ হাজার ২১৮ জন। আর উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থী ২৯ লাখ ১৫ হাজার ৮৫১ জন। মাদ্রাসা শিক্ষায় মোট শিক্ষার্থী ৭০ হাজার ৯৯৮ জন। টিচার এডুকেশনে পড়ছেন ৩৮ হাজার ৬৯১ জন শিক্ষার্থী। কারিগরি শিক্ষায় পড়ছেন ৫ লাখ ৬ হাজার ৫৫৬ জন শিক্ষার্থী। বাকিরা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে।

গত ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হলে ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। যা এখন পর্যন্ত বহাল রয়েছে। কথা ছিল এপ্রিল মাসে বিদ্যালয়গুলোতে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা শুরু হবে। কিন্তু নতুন শিক্ষাবর্ষের প্রথম তিনমাস পূরন না হতেই মার্চে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে শেষ হয়নি সিলেবাসও। পরীক্ষা শুরু না হতেই সারাদেশের এইচএসসি ও সমমানের ১২ লাখ শিক্ষার্থী হোঁচট খেলো। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের আরো ১২ লাখ শিক্ষার্থীর সব ধরনের পরীক্ষা আটকে রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, শিক্ষার সব স্তর মিলিয়ে একদিন ক্লাস না হলে ১৬ কোটি ঘণ্টা ক্ষতি হয়। সে হিসাবে গত মার্চ থেকে এ পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ ৪শ কোটি ঘণ্টার বেশি। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয় টেলিভিশন রেডিওতে পঠনপাঠন শুরু করেছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখানেই যথেষ্ট নয়। যে কোনোভাবে শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠদান পৌঁছাতে হবে।

এ প্রসঙ্গে গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেছেন, করোনার প্রভাবে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া, বাল্যবিয়ে, অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ, শিশুশ্রম এবং পুষ্টিহীনতা বাড়বে। ভবিষ্যতে শিক্ষার বিভিন্ন পর্যায়ে ঝুঁকি দেখে দেবে।

এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ধরে রাখতে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার মতো অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা বাদ দিতে হবে। তবে মূল্যায়ন চলতে থাকবে। তারা কতটুকু পড়তে পারল কতটুকু পারলো না তা জানতে হবে। শিক্ষকদের বেতন ভাতা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের।

শুধু ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা চিন্তা করা হচ্ছে উল্লেখ করে আরো বলেন, মাধ্যমিকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রণোদনা দিতে হবে। উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেন, একটা অবকাঠামো উন্নয়ন দেরি করলে ক্ষতি নেই। বিশাল বিশাল প্রকল্প এবার গেলেও তা পরে করা যাবে। অর্থ, স্বাস্থ্যের মতো খাতগুলো ক্ষতি হলে সামলানো যাবে। কিন্তু একটা প্রজন্ম যদি শিক্ষায় পিছিয়ে যায় তাদের আর উঠানো সম্ভব না।

এ প্রসঙ্গে আরেক শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, আমি ভেবেছিলাম করোনার সংক্রমণ যদি আরও দু তিন মাস এভাবে থাকে তবে ২০% শিক্ষার্থী শতাংশ স্কুলে যেতে পারবে কিনা সন্দেহ। তবে বর্তমানে কল কারখানা খুলে দেওয়ায় এর সংখ্যা হয়তো আরেকটু কমবে। শেষমেষ হয়তো কমপক্ষে ৫% শতাংশ বিদ্যালয় ছেড়ে দেবে। এই পাঁচ শতাংশ সংখ্যার দিক থেকে বিশাল। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী কৃষকের সন্তান এমন অনেকের পক্ষে সন্তানের পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হবে। তারপর গার্মেন্টসের মেয়েদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে দিতে না পারলে অনলাইন কেন তারা তো অফলাইনেও খুঁজে পাওয়া যাবেনা। আমরা ছোট পিকচার দেখি বড় চিত্র দেখিনা। শিক্ষাখাতে এই দুর্যোগ মোকাবেলা করে সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে এগোতে হবে। বর্তমানে সরকার যে পদ্ধতিতে পাঠদান করছে তা আরো অর্থবহ মানসম্মত এবং সকল শিক্ষার্থী যেন সে সুবিধা পায় সে বিষয় নিশ্চিত করতে হবে।

গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী আরো বলেন, ভবিষ্যতে শিক্ষার বিভিন্ন পর্যায়ে ঝুঁকি দেখা দেবে। এটি মাথায় রেখে আসছে ২০২০- ২০২১ অর্থ বছরের বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। করোনি ঝুঁকি প্রশমন এবং শিক্ষার পুনরুদ্ধারে কমপক্ষে দুই তিন বছর মেয়াদি একটি পরিকল্পনা নিতে হবে। শিক্ষকদের সহায়তা ও প্রণোদনার ব্যবস্থা করা, প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষার জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে সামাজিক সুরক্ষার আওতা বাড়ানোর কথা বলেছেন তিনি। পাশাপাশি। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসার বাড়ানোর কথা বলেছেন।

এ প্রসঙ্গে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হক চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘যেহেতু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এখনও অব্যাহত আছে। এরকম পরিস্থিতিতে এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে না। সব শিক্ষার্থীকে যাতে আরও সহজে পাঠদানের আওতায় আনা যায় সে বিষয়ে উদ্যোগ নেবে সরকার।’

তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষাখাতের অর্জন ধরে রাখতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

করোনাকাল করোনাভাইরাস শিক্ষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ

বিজ্ঞাপন

রিশাদ-জাহানদাদে কুপোকাত সিলেট
৭ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:২১

আরো

সম্পর্কিত খবর