তামাকমুক্ত দিবসে ‘মূল টার্গেট’ তরুণদের বাঁচানো
৩১ মে ২০২০ ০০:০১ | আপডেট: ৩১ মে ২০২০ ০৯:২০
ঢাকা: তামাক ও তামাকজাত পণ্য ব্যবহারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব হিসেবে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছেই। আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির ২০১৮ সালের সমীক্ষার তথ্য বলছে, দেশে বছরে এমন মৃত্যুর সংখ্যা ১ লাখ ২৬ হাজার। আর বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর ৮০ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছেন তামাক ও তামাকজাত পণ্যের ব্যবহারজনিত কারণে।
তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো বলছে, তামাক কোম্পানিগুলোর কাছে এই মৃত্যুর অর্থ ভোক্তা হারানো। তাই তারা সবসময় এই শূন্যতা পূরণে নতুন ভোক্তা তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আর এ ক্ষেত্রে তাদের টার্গেট শিশু-কিশোর ও তরুণ জনগোষ্ঠী। তাদের আকৃষ্ট করতেই নানা ধরনের কারসাজির আশ্রয় নিয়ে থাকে। এ কারণেই এবারের বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের প্রতিপাদ্য— ‘তামাক কোম্পানির কূটচাল রুখে দাও, তামাক ও নিকোটিন থেকে তরুণদের বাঁচাও’।
আজ রোববার (৩১ মে), বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এই দিবসটি পালিত হচ্ছে। এবার এই দিবস ঘিরে তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো দাবি তুলেছে, তরুণ প্রজন্মকে রক্ষায় তামাকপণ্যের কর ও দাম বৃদ্ধি, এফসিটিসি আর্টিক্যাল ৫.৩ নীতিমালা প্রণয়ন এবং তামাক কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকতা নিষিদ্ধ করার।
তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো বলছে, বছরের পর বছর ধরে তামাক এবং অন্যান্য নিকোটিন পণ্যে শিশু-কিশোর ও তরুণদের আকৃষ্ট করতে কৌশলী ও আগ্রাসী প্রচারণা চালিয়ে আসছে তামাক কোম্পানিগুলো। উদ্ভাবনী বিজ্ঞাপন, আকর্ষণীয় ডিজাইনে নতুন পণ্য বাজারজাতকরণ, সুগন্ধিযুক্ত তামাকপণ্য তৈরি, চলচ্চিত্র-টিভি-অনলাইন স্ট্রিমিং প্রোগ্রামগুলোতে তামাকের চিত্রায়ন, মিডিয়া/সোস্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের ব্যবহার, অনুষ্ঠানের ব্যয়ভার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে তামাকপণ্য সহজলভ্য করাসহ নানা কৌশল নিয়ে থাকে তারা। শুধু তাই নয়, আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, তরুণদের নিজস্ব ব্র্যান্ডের প্রতি আকৃষ্ট করতে বিশ্বব্যাপী বছরে ৯০০ কোটি ডলার ব্যয় করে থাকে তামাক কোম্পানিগুলো।
এদিকে, ইউএস সার্জন জেনারেল রিপোর্ট ২০১৪ অনুযায়ী, প্রায় ৯০ শতাংশ সিগারেট ধূমপায়ী ১৮ বছর বয়সের মধ্যে প্রথমবার ধূমপান করে। অল্প বয়সে তামাকপণ্যে আসক্ত হয়ে পড়লে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে এবং বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ফুসফুসের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। ফুসফুস ক্যানসার, হৃদরোগ, অকাল বার্ধক্য, মানসিক অস্থিতিশীলতাসহ নানা ধরনের রোগ দেখা দেয় তামাকের কারণে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, যারা কিশোর বয়সে ধূমপানে আসক্ত হয়, তাদের অ্যালকোহলে আসক্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা স্বাভাবিকের তুলনায় তিন গুণ বেশি, গাঁজায় (মারিজুয়ানা) আট গুণ এবং কোকেইনের ক্ষেত্রে ২২ গুণ বেশি। অর্থাৎ তামাক ও নিকোটিন কেবল একটি আসক্তিই নয়, এটি তরুণদের আরও অনেক বিধ্বংসী আসক্তির পথে পরিচালিত করে।
এ বিষয়ে তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা’র (প্রগতির জন্য জ্ঞান) নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের বলেন, বাংলাদেশে বর্তমান মোট জনগোষ্ঠীর ৪৯ শতাংশই তরুণ। তামাক কোম্পানির মূল টার্গেট, কিভাবে এই বিশাল তরুণ সমাজকে তামাকে আসক্ত করে ব্যবসা বাড়ানো যায়। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের করণীয় হবে তামাক কোম্পানির ছোবল থেকে তরুণদের সুরক্ষা দেওয়া। কারণ তামাকে সক্ত অসুস্থ প্রজন্ম দেশের অগ্রগতির হাতিয়ার না হয়ে বরং সমাজ ও অর্থনীতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধূমপান, তামাক ও ভ্যাপিং পণ্য ব্যবহারে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। মানুষের জীবন বাঁচানোর পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনের পথ সুগম করতে তামাকপণ্য নিয়ন্ত্রণ ও তামাক কোম্পানির কারসাজি বন্ধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
এসব পদক্ষেপ হিসেবে যেসব সুপারিশ করা হচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে— তামাকপণ্যের দাম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ানো, তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ মোকাবেলায় খসড়া এফসিটিসি আর্টিক্যাল ৫.৩ নীতিমালা চূড়ান্তকরণ ও বাস্তবায়ন, তামাকপণ্যের মোড়কে আইন অনুযায়ী সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা মুদ্রণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তামাক কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজিত যেকোনো ধরনের অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে বিক্রয়স্থলে প্রোডাক্ট ডিসপ্লের মাধ্যমে তামাকপণ্যের প্রচার বন্ধ এবং পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ বিলুপ্ত করতে হবে।