Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জীবাণুনাশক টানেল: স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘হ্যাঁ’, অধিদফতরের ‘না’


২৮ মে ২০২০ ২২:৫৫

ঢাকা: সাধারণ ছুটি না বাড়ালেও জনচলাচল সীমিত রাখাসহ সব ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের কঠোর বাধ্যবাধকতা রেখে সবকিছু সীমিত আকারে খোলা রাখার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। এ ক্ষেত্রে সরকারি কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ১৩ দফা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলেছে সরকার। মন্ত্রণালয়ের সেই নির্দেশনার শুরুতেই বলা হয়েছে, করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় সংখ্যক জীবাণুমুক্তকরণ টানেল স্থাপনের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে। অথচ এপ্রিলের মাঝামাঝিতেই স্বাস্থ্য অধিদফতর এক নির্দেশনায় জীবাণুনাশক টানেল ব্যবহার করে শরীরে সরাসরি জীবাণুনাশক ছিটানো বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল! শুধু তাই নয়, একই নির্দেশনা রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকেও।

বিজ্ঞাপন

এ অবস্থায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সব সরকারি অফিসে জীবাণুনাশক টানেল স্থাপনের সুপারিশের কারণে উল্টো স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে। কারণ এই জীবাণুনাশক টানেল একরকম ‘ফলস সিকিউরিটি’ দিয়ে থাকে, যা কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সাহায্য করবে না। মন্ত্রণালয় এত দিনে এসে বলছে, এই সিদ্ধান্ত আবার পর্যালোচনা করবে তারা।

এর আগে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মক্ষেত্রে পালনীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ১৩ দফা নির্দেশনার প্রথমটিতেই সরকারি অফিসে জীবাণুনাশক টানেল স্থাপনের সুপারিশ ছিল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওই নির্দেশনা জারির পর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি কার্যালয়ে জীবাণুনাশক টানেল স্থঅপন করা হয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে শপিং মলগুলোও প্রবেশপথে এ ধরনের টানেল স্থাপন করে। এসব টানেল পার হওয়ার সময় ব্যক্তির শরীরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জীবাণুনাশক ছিটানো হয়ে থাকে।

জীবাণুনাশক এই টানেলের ক্ষতিকর দিক নিয়ে বিভিন্ন সময় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলে এসেছেন। সবশেষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে গত ১৬ মে জীবাণুনাশক টানেলের ক্ষতিকর প্রভাব বিষয়টি তুলে ধরা হয়। বলা হয়, কোনো ব্যক্তির ওপর কখনই জীবাণুনাশক প্রয়োগ করা উচিত নয়। বিশেষ করে ক্লোরিন ও অন্য টক্সিক রাসায়নিক উপাদান মানুষের চোখ ও ত্বকে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। এ উপাদানগুলো শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতি করতে পারে। এমনকি এসব জীবাণুনাশক ছড়ানোর ফলে কোনো ব্যক্তি থেকে করোনাভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা একটুও কমে না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আরও বলছে, কেবল খোলা জায়গায় নয়, বাড়ির ভেতরেও জীবাণুনাশক ছড়িয়ে বিশেষ কোনো লাভ নেই। জীবাণুনাশক ব্যবহার করতে হলে তা কোনো কাপড়ে নিয়ে তারপর তা দিয়ে মোছা হলো সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি।

বিজ্ঞাপন

এ সিদ্ধান্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অনুসরণ করলেও বাংলাদেশে এখনো জীবাণুনাশক টানেলের ব্যবহার বন্ধে তেমন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বরং দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় জীবাণুনাশক টানেল বসানোর উদ্যোগ চলমান রয়েছে।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুবিভাগ) রীনা পারভীন সারাবাংলাকে বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনের পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা আসে। ১১ মে আমরা প্রজ্ঞাপন দিয়েছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্দেশনা দিয়েছে ১৬ মে। এক্ষেত্রে আমাদের বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকেও জীবাণুনাশক টানেল ব্যবহার না করতে বলা হয়েছিল। সে ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ১৩ দফা স্বাস্থ্যবিধিতে পরিবর্তন আসবে কি না— এমন প্রশ্নের উত্তরে রীনা পারভীন বলেন, এই মুহূর্তে এ কথা আমি বলতে পারব না। কারণ এটা আমি করিনি। স্বাস্থ্য অধিদফতর বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যা কিছু বলছে, সেগুলো আমরা খতিয়ে দেখব। তারপর সিদ্ধান্ত হবে। তাছাড়া এটি একটি সরকারি আদেশ। তবে এটি জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই চিন্তাভাবনা চলবে। যেখান থেকে আদেশটি এসেছিল, সেখান থেকেই পরিবর্তন হতে পারে।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে রীনা পারভীন বলেন, কালকে তো শুক্রবার। রাতেই কারও কারও সঙ্গে কথা বলব আমি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গেও কথা বলতে হবে। এটা পরীক্ষার দরকার আছে। সবকিছু পরীক্ষা করে যেটা যুক্তিসঙ্গত হবে, জনস্বাস্থ্যের জন্য ভালো হবে, আমরা সেটাই করব।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার (সিডিসি) পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহনীলা ফেরদৌসী সারাবাংলাকে বলেন, বর্তমানে যে টানেলগুলো বসানো হচ্ছে, সেগুলোতে জীবাণুনাশক হিসেবে কী ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটি কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। জীবাণুনাশক হিসেবে ব্লিচিং পাউডার কার্যকর হলেও তা সরাসরি মানুষের শরীরের সংস্পর্শে এলে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে। আমরা এখানে জনস্বাস্থ্যবিদরা যারা আছি তারা সবাই সম্মিলিতভাবে জীবাণুনাশক টানেল ব্যবহার না করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের টেকনিক্যাল কমিটি সূত্রে জানা যায়, কমিটি এই জীবাণুনাশক টানেলের ব্যবহার সমর্থন করেন না। বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করে স্বাস্থ্য অধিদফতর বা টেকনিক্যাল কমিটির পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে আরও জানা যায়, স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কিত যে প্রজ্ঞাপন, সে বিষয়ে অধিদফতরের কারোর সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়নি। তবে এ বিষয়েও কোনো মন্তব্য করেননি অধ্যাপক ডা. শাহনীলা ফেরদৌসী।

এদিকে, জীবাণুনাশক টানেলের ব্যবহার বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ও কোভিড-১৯ মোবাকিলায় গঠিত জাতীয় পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, জীবাণুনাশক টানেলে আসলে কী ব্যবহার করা হবে, তা কি কেউ বলতে পারে? বা সেখানে কী ব্যবহার করা হচ্ছে, তা কি কেউ দেখতে পারছে? যদি সাবান-পানি দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে তো আসলে পুরো ভিজিয়ে নিতে হবে। আর যদি কোনো অফিসে এই টানেল না থাকে, সেখানে কি কেউ অফিস করতে পারবে না?

তিনি বলেন, আমাদের দেশে মশা নিধনের ওষুধ নিয়ে প্রচুর আলোচনা হয়। দেখা যাচ্ছে মশার ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। ওদিকে মশা কিন্তু গান গেয়েই যাচ্ছে। অর্থাৎ শুধু ওষুধ ওষুধ করলে হবে না, ওষুধের কার্যকারিতা নিয়েও ভাবতে হবে। টানেলের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করলে ক্ষতি হলেও প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যে ‘ফলস সেফটি’র ধারণা তৈরি হবে। এর প্রভাব আরও বেশি ক্ষতিকর। তাছাড়া ব্লিচিং পাউডার ও হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড সলিউশন দিয়ে তৈরি রাসায়নিক ব্যবহারের কারণে এ ধরনের টানেল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত নয়। তাই আমি মনে করি, এ ধরনের টানেল ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করা যেতে পারে। এ বিষয়ে জাতীয় পরামর্শক কমিটির সঙ্গেও আলোচনা করা হয়নি বলে জানিয়েছেন ডা. নজরুল ইসলাম।

জীবাণুনাশক টানেল জীবাণুনাশক টানেলের ক্ষতিকর দিক স্বাস্থ্য অধিদফতর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্যবিধি

বিজ্ঞাপন

৭ বছর পর মা-ছেলের সাক্ষাৎ
৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:৩৮

লন্ডনে পৌঁছেছেন খালেদা জিয়া
৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:১২

আরো

সম্পর্কিত খবর