ইউএনও’র উদ্যোগে বদলে গেছে কালিহাতি হাসপাতালের চিত্র
২৭ মে ২০২০ ১৯:১০ | আপডেট: ২৮ মে ২০২০ ০১:০৭
ঢাকা: টাঙ্গাইলের কালিহাতির উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম আরা নিপার উদ্ভাবনী উদ্যোগে বদলে গেছে কালিহাতি হাসপাতালের চিত্র। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনা সুরক্ষার পাশাপাশি সাধারণ রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা অক্ষুণ্ন রাখতে হাসপাতালটিতে চালু করা হয়েছে ডক্টরস সেফটি চেম্বার ও সেফটি কার্ট নামে বিশেষ দুটো উদ্যোগ।
সাধারণ নিয়মে হাসপাতালের আউটডোরে রোগীকে চিকিৎসা নিতে হলে প্রথমে একটি কাউন্টার থেকে টিকিট কাটতে হয়। এই টিকিট নিয়ে ডাক্তারকে দেখালে, ডাক্তার রোগী দেখে টিকিটের গায়ে লিখে ওষুধ এবং পথ্য লিখে দেন। ওই প্রেসক্রিপশন ফার্মেসি বিভাগে দেখালে রোগীর ওষুধ সরবরাহ করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় যে কোনো রোগীকে টিকেট কাউন্টার, ডাক্তারের চেম্বার ও ফার্মেসিসহ একাধিক বিভাগে যেতে হয়। ফলে কোনো রোগীর করোনা ভাইরাস থাকলে তার সংস্পর্শে অন্যদের সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
এই ঝুঁকি এড়াতেই কালিহাতি হাসপাতালে সেবাদান প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত টিকেটদাতা, চিকিৎসক এবং ফার্মাসিস্টকে চারকক্ষ বিশিষ্ট একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সেফটি চেম্বারের মধ্যে রেখে সেবা দেওয়ার সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। যেখানে প্রথম চেম্বার থেকে রোগীর তথ্য নিয়ে টিকেট করে তার নম্বর রোগীকে জানিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ওই টিকিট সেফটি চেম্বারের মধ্যে থাকা ডাক্তারকে দেওয়া হয়। ডাক্তার চেম্বারের ভেতরে থেকেই গ্লাসে লাগানো বিশেষ গ্লাভসের সাহায্যে স্টেথোস্কোপের মাধ্যমে রোগীকে পরীক্ষা, ডিজিটাল থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে তাপমাত্রা পরিমাপ, ডিজিটাল মাধ্যমে রোগীর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা এবং পালস পরিমাপ করতে পারেন।
এখানে ডাক্তার রোগীর জন্য প্রেসক্রিপশন লিখেন কম্পিউটারে। যার প্রিন্ট বের হয় চেম্বারের ভেতরে থাকা ফার্মাসিস্টের কাছে। তিনি রোগীর কাছ থেকে টিকিট নম্বর জেনে প্রিন্টেড প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী তাকে ওষুধ ও প্রেসক্রিপশনটি সরবরাহ করেন।
গত শনিবার (২৩ মে) দুপুরে কালিহাতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এই উদ্ভাবনটি উদ্বোধন করেন টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম। এ সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারী, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ আনছার আলীসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
ডক্টরস সেফটি চেম্বার নিয়ে কালিহাতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম আরা নিপা সারাবাংলা’কে বলেন, ‘সাধারণ রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে সবার আগে। ডক্টরস সেফটি চেম্বারে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা সম্পৃর্ণরূপে সরক্ষা পাচ্ছেন। এই আইডিয়াটি বাস্তবায়নে উৎসাহ ও সহযোগিতা করেছেন স্থানীয় সাংসদ, ডিসি মহোদয় ও উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা প্রমুখ।’
এখানেই শেষ নয়। আউটডোরে ডাক্তারদের রোগী দেখার সেফটি নিশ্চিত করার পরপরই এই কর্মকর্তা করোনা ওয়ার্ডে ডাক্তারদের সেফটি নিশ্চিত করতে হাসাপাতালে একটি ডক্টরস সেফটি কার্টও চালু করেন।
উদ্যোগটি সম্পর্কে ইউএনও শামীম আরা নিপা বলেন, ‘মূলত মাশরাফি বিন মর্তুজার নড়াইলে নির্মিত ডক্টরস সেফটি চেম্বার দেখেই আইডিয়াটি এসেছে। এয়ারপ্রুফ চেম্বার বা বুথকে মুভ করিয়ে সেবা নিশ্চিতের চিন্তা আসে তখন। যার নাম দেই ডক্টরস সেফটি কার্ট। এটি ব্যাটারিচালিত একটি ছোট্ট গাড়ি। যা অনায়াসেই হাসপাতালের ওয়ার্ডে চালানো যায়। গাড়ির ভেতর থেকেই ডিজিটাল থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে রোগীর তাপমাত্রা মাপা, স্টেথোস্কোপের মাধ্যমে রোগীকে পরীক্ষা করা এবং গাড়ির সঙ্গে সংযুক্ত ডিজিটাল পালস অক্সিমিটারের সাহায্যে রোগীর শরীরের অক্সিজেনের মাত্রা এবং পালস মাপাও সম্ভব হচ্ছে। রোগীর সঙ্গে কথোপকথনের জন্য ভেতরে ও বাইরে রয়েছে মাইক্রোফোন। ফলে ডাক্তার এই সেফটি কার্টের মধ্যে বসেই রোগীর বিষয়ে প্রয়োজনীয় নোট নিতেও পারছেন।’
জানা গেছে, ডক্টরস সেফটি কার্ট বাস্তবায়নের নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজে কর্মরত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ মোঃ শাহ আলম, আরেক উদ্যোগী অফিসার বুয়েটপাশ প্রকৌশলী মুহাম্মাদ তালুত ও কলেজ পড়ুয়া স্থানীয় তরুণ আল আমিন ও তার টিম। আইডিয়াটি নিজের হলেও এর সফলতা বাস্তবায়নে যুক্ত সবারই বলে মনে করেন শামীম আরা নিপা। পাশাপাশি তিনি জানান খুব শীঘ্রই তারা ডাক্তারদের সুরক্ষার মাধ্যমে বাড়ি থেকে করোনা টেস্টের নমুনা সংগ্রহের জন্য ডক্টরস সেফটি কারও নামাবেন।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. সাইদুর রহমান সারাবাংলা’কে বলেন, ‘ইউএনও মহোদয়ের এমন উদ্যোগ ডাক্তারদের সুরক্ষা দিয়েছে। ডক্টরস সেফটি চেম্বার ও সেফটি কার্ট ব্যবহার করে কালিহাতিতে ডাক্তাররা রোগী দেখতে অনেক বেশি নিরাপদ বোধ করছেন। এমন উদ্যোগ সারাদেশে চালু করা গেলে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান নিঃসন্দেহে আরো নিরাপদ ও শঙ্কামুক্ত রাখা সম্ভব হবে।’