চট্টগ্রামের দুই বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড-১৯ চিকিৎসার নির্দেশ
২৬ মে ২০২০ ২০:১৭ | আপডেট: ২৬ মে ২০২০ ২৩:২৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চাপ সামলাতে চট্টগ্রামে দুটি বেসরকারি হাসপাতালকে কোভিড-১৯ হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এগুলো হচ্ছে- নগরীর খুলশীতে বেসরকারি বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল ও ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের।
মঙ্গলবার (২৬ মে) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. সিরাজুল ইসলামের স্বাক্ষরিত এক আদেশে হাসপাতাল দুটিকে কোভিড-১৯ চিকিৎসায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ এবং চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের চিঠিতে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল ও ইম্পেরিয়াল হাসপাতালকে বিশেষায়িত কোভিড-১৯ হাসপাতাল হিসেবে নির্ধারণের অনুরোধের প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের আদেশের পর স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. নাসিমা সুলতানা চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালককে হাসপাতাল দুটিতে রোগী ভর্তির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেন। পরিচালক চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে চট্টগ্রামের দুটি বেসরকারি হাসপাতালকে কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা বসব। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে তারা যাতে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।’
নগরীর খুলশীর ফয়’সলেক এলাকায় প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলামের গড়ে তোলা বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালে ইতোমধ্যে ছয়টি আইসিইউসহ ১০০টি আইসোলেশন শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসায়।
হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রথমে সিএমপির পক্ষ থেকে আমাদের বলা হয়েছিল যে, তাদের হাসপাতালে করোনায় আক্রান্তদের আর চিকিৎসা দেওয়ার শয্যা সংকুলান হচ্ছে না। আমরা যেন সহযোগিতা করি। আমরা রাজি হয়েছি। তারাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিল। মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করেছে। আমাদের ১০০ আইসোলেশন শয্যা প্রায় প্রস্তুত আছে, এর মধ্যে ছয়টি আইসিইউ। কিন্তু যেসব ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী চিকিৎসা সেবা দেবেন, তাদের সুরক্ষা তো আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। তাদের কোয়ারেনটাইনে রাখার জন্য বাড়ি নির্ধারণ করতে হবে। সুরক্ষা সামগ্রী, যানবাহনের ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মিটিংয়ে বসব। সরকারিভাবে আমাদের কোনো সহযোগিতা করবে কি না সেটা দেখব। তারপর হয়ত রোগী ভর্তির অনুমতি দেব।’
২০১৯ সালের ১৫ জুন চট্টগ্রাম নগরীর খুলশীতে অত্যাধুনিক সুবিধাসম্বলিত ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের উদ্বোধন হয়। তবে নানা জটিলতায় হাসপাতালটি এখনো পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়নি।
করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় সরকার প্রথমে ১০০ শয্যার চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল এবং ৫০ শয্যার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি) হাসপাতাল নির্ধারণ করে। দুই হাসপাতালে রোগীর চাপ সামাল দিতে না পারায় গত ১৮ মে জেনারেল হাসপাতালে আরও ৫০ শয্যা বাড়ানোর অনুমতি দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এছাড়া মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে গত ২১ মে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চালু হয়েছে ১০০ শয্যার করোনা ইউনিট। বেসরকারি হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালকে জেনারেল হাসপাতালের ইউনিট-২ হিসেবে ঘোষণা করা হলেও সেটি এখনো চালু হয়নি।
চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী-বাকলিয়া আসনের সংসদ সদস্য শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত প্রতিদিন বাড়ছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে আর সংকুলান হচ্ছে না। দুটি বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তির অনুমতি মন্ত্রণালয় দিয়েছে। আমরা সন্তুষ্ট। তবে অতীতেও করোনা চিকিৎসায় সরকারের অনেক সিদ্ধান্ত আঞ্চলিক বাধায় কার্যকর হয়নি। ক্লিনিকগুলোতে করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। আমরা চাই, এই দুটি হাসপাতাল চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত দ্রুত কার্যকর হোক।’
সোমবার (২৫ মে) পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলায় এ পর্যন্ত ১৮৮৭ জনের মধ্যে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। মারা গেছেন ৬০ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১৭৯ জন।