এবারও চিকুনগুনিয়া ঝুঁকিতে রাজধানীবাসী
৪ মার্চ ২০১৮ ০৮:১০ | আপডেট: ৫ নভেম্বর ২০১৮ ১৯:৪৯
জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: গত বছরে মার্চ মাসের শুরুর দিকেই রাজধানীসহ সারাদেশে ছিল চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ। এ সময় রাজধানীর ঘরে ঘরে একাধিক সদস্য আক্রান্ত ছিল নতুন এ রোগে। এবারও আসছে গ্রীষ্মকাল। তাই চিকুনগুনিয়ার ঝুকি মাথায় রেখে নগরীতে মশক নিধন কার্যক্রম শুরু করেছে দুই সিটি কর্পোরেশন। যদিও স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, আগাম ব্যবস্থা যাই হোক এবারও নগরবাসীর জন্য চিকুনগুনিয়া হয়ে উঠতে পারে এক মুর্তিমান আতঙ্ক।
চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু মৌসুমের আগেই গত ২৮ ফেব্রুয়ারি স্পেশাল ক্রাশ প্রোগ্রাম গ্রহণ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। প্রোগ্রাম শুরুর দিন থেকেই ডিএসসিসির ৫৭টি ওয়ার্ডে মশার ওষুধ ছিটানো হয়। পাশাপাশি উত্তর সিটি কর্পোরেশনও নিয়েছে মশক নিধন কর্মসূচি।
ক্রাশ প্রোগ্রামের উদ্বোধন করে ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, কিছুদিন ধরেই মশার উপদ্রব বেড়েছে। গত বছরের মার্চ মাসে ঢাকায় চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। কিন্তু সে সময় একেবারেই নতুন রোগ হওয়াতে বিষয়টি নিয়ে ধারণা ছিল না। কিন্তু এবার সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে নামা হয়েছে। আর পুরো বর্ষা মৌসুম ধরেই ডিএসসিসির এই ক্রাশ প্রোগ্রাম অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
মেয়র সাঈদ খোকন মশা নিয়ন্ত্রণে তার দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সম্ভাব্য সবকিছু করবে বলেও জানিয়েছেন। কিন্তু এবারে শীত শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গেই রাজধানীবাসীর আতঙ্ক হয়ে দাঁড়ায় মশা। পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ-ঢাকার প্রতিটি এলাকায় মশার রাজত্ব চলছে। মশার কয়েল, স্প্রে, মশা মারার ব্যাট দিয়েও রক্ষা হচ্ছে না রাজধানীবাসীর। রাতের বেলায় মশারির ভেতরে রাজত্ব চলছে দেদারসে। আর তাতে করে রাজধানীবাসী গত বছরের মতো চিকুনগুনিয়ার আতঙ্কে ভুগছে। অভিযোগ রয়েছে, সিটি কর্পোরেশন থেকে মশার ওষুধ নিয়মিত ছিটানো হচ্ছে না বলেই মশার উৎপাত বেড়েছে। সেইসঙ্গে যোগ হয়েছে, রাজধানীজুড়ে খোড়াখুড়ির কাজ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে যে মশার উৎপাত বেড়েছে সেগুলো কিউলেক্স মশা এবং এ মশা থেকে মারাত্মক কোনও রোগের আশঙ্কা নেই। কিন্তু যদি এর সঙ্গে বৃষ্টির মাত্রা বাড়ে তাহলে চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার প্রজনন বাড়বে।
এদিকে, ঢাকার দুইটি কর্পোরেশনে চালানো এক জরিপ সূচিতে চিকুনগুনিয়ার ‘হাই রিস্ক’ পেয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সূত্র। সূত্রটি জানায়, দুই সিটি কর্পোরেশনের ১০০টি এলাকায় এই জরিপ কাজ চলে এবং সেখানে ১৯টি এলাকা চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলেই চিহ্নিত করেছে অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা।
রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা সূত্রে জানা যায়, গত জানুয়ারি মাসে দুই সিটি কর্পোরেশনের ৯৩ টি ওয়ার্ডের ১০০টি এলাকাতে এই জরিপ চালানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে ডিএনসিসির ৪১ টি এবং ডিএসসিসির ৫৯ টি এলাকা। উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, বনানী, গাবতলী, মগবাজার, মালিবাগের কিছু অংশ, মিরপুর-১, নাখালপাড়া, মহাখালী ডিওএইচএস, পূর্ব শেওড়াপাড়া, মিরপুরের টোলারবাগ ও উত্তরার ৯ নম্বর সেক্টর। অপরদিকে, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ধানমন্ডি-১, এলিফ্যান্ট রোড, কলাবাগান, গুলবাগ, মেরাদিয়া, মিন্টো রোড, বেইলি রোড ও শান্তিনগর রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার তালিকায়।
জানতে চাইলে রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা সারাবাংলাকে বলেন, সাধারণত এই শুষ্ক মৌসুমে এডিস মশা থাকার কথা নয়, কারণ এটা এডিসের প্রজনন মৌসুম নয়। কিন্তু আমাদের জরিপে এডিস মশার অস্তিত্ব রয়েছে। বর্ষার সময়ে এটা আরও বাড়বে-সেটা সাধারণভাবেই বলা যায়।
সারাবাংলাকে অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা আরও বলেন, ‘আমরাতো মশা মারতে পারবো না কিন্ত যারা মারবে, তাদেরকে সচেতন করতে পারি।
তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের জানুয়ারিতে জরিপ করেছি এডিস মশা নিয়ে। এডিস জরিপে এখনও কয়েকটি জায়গায় ‘ইনডেস্ক হাই’ পাওয়া গেছে। সুতরাং, বসে থাকা বা চিন্তামুক্ত থাকার অবকাশ নেই। যদিও গতবছরের জুন-জুলাই মাসের মতো ততোটা ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় যাইনি আমরা।’
তিনি জানান, এসব নিয়ে দুই সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, জাতীয় রোগতত্ত্ব , রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটসহ অন্য সহযোগীদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের জরিপের ফলাফল জানানো হয়েছে, তারা এ বিষয়ে কাজ করবে। আগামী এপ্রিলে পরিস্থিতি জানার জন্য আবার জরিপ করা হবে বলে জানান, অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো ইমদাদুল হক সারাবাংলাকে বলেন, আমরা মশক নিধনে বিশেষ ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছি। গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে এ ক্র্যাশ প্রোগ্রাম আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত চলবে। মশক নিধনে সব ধরনের ওষুধ দ্বিগুন করে কাজে লাগানো হচ্ছে। ফগার দিয়ে মশা মারা হচ্ছে, জনবলও বৃদ্ধি করা হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে জানতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের একাধিক কর্মকর্তাকে ফোন করেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
সারাবাংলা/জেএ/এমএস