লকডাউন উঠলে ১৫ দিনের মধ্যে এইচএসসি পরীক্ষা
১১ মে ২০২০ ২২:০৬ | আপডেট: ১২ মে ২০২০ ০০:২০
ঢাকা: করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্তের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির মেয়াদ কতদিন পর্যন্ত বাড়বে, তা বলা যাচ্ছে না এখনই। কিছু কিছু খাত সীমিত পরিসরে চালু হলেও কবে নাগাদ মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে, সে বিষয়েও কেউ কিছু বলতে পারছে না। এত অনিশ্চয়তার মধ্যেও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, আগামী জুলাই মাসেই অনুষ্ঠিত হতে পারে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষা!
দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, এইচএসসি পরীক্ষা আয়োজনের জন্য আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে হবে। সেটার জন্য দিনক্ষণ ঘোষণার মতো পরিস্থিতি এখন নেই। আর ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যানও মে মাসে এইচএসসি পরীক্ষা আয়োজনের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলছেন, লকডাউন উঠে গেলে ১৫ দিনের মধ্যে এই পরীক্ষা আয়োজন সম্ভব।
সম্প্রতি ভারতে দ্বাদশ শ্রেণির পাবলিক পরীক্ষার সময়সূচি পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। দেশটিতে জুলাই মাসে এই পরীক্ষা আয়োজনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সেই খবরেই মূলত বাংলাদেশেও এইচএসসি পরীক্ষা আয়োজনের দিনক্ষণ নিয়ে আলোচনা শুরু হয় নতুন করে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সূত্রটি বলছে, ভারতের বিষয়টি আলোচনা হয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে। সে আলোচনায় বোর্ডের অনেক কর্মকর্তাই জুলাই মাসে এইচএসসি পরীক্ষার আয়োজনের পক্ষে মত দিয়েছেন।
সূত্রের এমন বক্তব্য অবশ্য নাকচ করে দিয়েছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয়ক মু. জিয়াউল হক। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ভারতে যে পরীক্ষাটির রুটিন করা হয়েছে সেটি আংশিক। বেশিরভাগ পরীক্ষা আগেই হয়ে গেছে। তিনটি পরীক্ষা বাকি ছিল, সেগুলো জুলাইয়ে হবে। তবে আমাদের এখানে তেমন কিছু হওয়াকে আমরা আত্মঘাতী মনে করছি। এটা করোনা সংক্রমণ বাড়িয়ে দেবে।
জিয়াউল হক বলেন, এইচএসসি অনেক বড় পরীক্ষা। লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ। করোনাভাইরাসের মতো অত্যন্ত সংক্রামক একটি রোগের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে আমরা এই পরীক্ষা আয়োজন করতে পারি না। এই সিদ্ধান্ত আমাদেরকে ভোগাবে। তবে জুনের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে এলে জুলাইয়ে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।
সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ না বলতে পারলেও করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে জানান ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, লকডাউন উঠে গেলে ১৫ দিনের মধ্যে পরীক্ষা আয়োজন করা যাবে।
এইচএসসির মতো একটি পাবলিক পরীক্ষা আয়োজনের জন্য প্রথমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলতে হবে বলে জানালেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খুললে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়। পরীক্ষা আয়োজনের জন্য ভবন লাগবে, লোকবল লাগবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যতদিন না খুলবে, ততদিন পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে গেলে অগ্রাধিকার দিয়ে দুই সপ্তাহ পরই এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা আয়োজন করা যেতে পারে বলে মনে করছেন এই সচিবও।
এর আগে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এক অনুষ্ঠানে ইঙ্গিত দিয়েছেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকতে পারে। এইচএসসি পরীক্ষাও তাই সেপ্টেম্বরে গিয়ে ঠেকতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানও এই পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়ার কথাই বলছেন। তিনি জানান, এইচএসসি পরীক্ষা আপাতত তাদের অগ্রাধিকার নয়। তারা এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল তৈরির কাজকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। ওএমআর শিট যাচাই করা হচ্ছে। মে মাসের মধ্যে যেন ফল প্রকাশ করা যায়, সেই চেষ্টাই তারা করছেন। এই লক্ষ্য পূরণ হলে ঈদুল ফিতরের পর মূলত তারা এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার নতুন সময়সূচি নিয়ে বৈঠক শুরু করবেন। সেক্ষেত্রে পরীক্ষাটির ভাগ্য আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পিছিয়ে যেতে পারে।
এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষায় আছে দেশের প্রায় ১২ লাখ শিক্ষার্থী। গত ১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়ার ছিল এই পাবলিক পরীক্ষা। তবে দেশে ৮ মার্চ করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হলে ১৭ মার্চ ঘোষণা দেওয়া হয়, ২৮ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পাঁচ দিন পর ২২ মার্চ ঘোষণা দেওয়া হয়, এইচএসসি পরীক্ষাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হচ্ছে।
[২০১৯ সালের এইচএসসি পরীক্ষা, চট্টগ্রাম থেকে তোলা ছবি]
এইচএসসি পরীক্ষা এইচএসসি পরীক্ষা আয়োজন টপ নিউজ ঢাক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ঢাকা শিক্ষা বোর্ড মু. জিয়াউল হক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ সময়সূচি পুনঃনির্ধারণ