করোনায় আক্রান্ত জনপদে ফেসবুকে ফিরেছে অতীত বৈশাখ
১৪ এপ্রিল ২০২০ ১৯:৪৫ | আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২০ ০০:১৩
ঢাকা: শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা পৃথিবীটাকে লকডাউন করেছে দিয়েছে নভেল করোনাভাইরাস! এমন কোনো দেশ, শহর, জনপদ নেই— যেখানে হানা দেয়নি এই ক্ষুদ্র জীবাণু। সারাপৃথিবীর মানুষ ভয়ে দুমড়ে-মুচড়ে ঘরে ঢুকে গেছে! স্থবির হয়ে গেছে গোটা পৃথিবী! থমকে গেছে ব্যাবসা-বাণিজ্য, ক্রীড়াবিশ্ব, বিনোদন জগৎ,আনুষ্ঠানিক ধর্মাচার। স্থগিত হয়ে গেছে বিশ্ব কাঁপানো সব ফুটবল আসর, ক্রিকেট সিরিজ, ‘গ্রেটেস্ট শো অন দ্যাআর্থ’খ্যাত অলিম্পিক গেমস।
এমন এক বিশ্ব বাস্তবতায় বাঙালি তথা ভারতীয় উপমহাদেশের বিশাল এক জনগোষ্ঠীর সামনে হাজির হয়েছে ‘বাংলা নববর্ষ-১৪২৭’। নতুন বছরের প্রথম দিনটির যে ক্ষণটাতে এই লেখা তৈরি হচ্ছিল, তার একটু আগে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় কোভিড-১৯-এ নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২০৯ জন, মারা গেছেন ৭ জন!
এই মৃত্যুর মিছিল আর আক্রান্তের খবরের মধ্যে সঙ্গত কারণেই বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনটিতে ঢাকার অলি-গলি-রাজপথ, রমনার উদ্যান, চারুকলার বকুলতলা, শাহবাগ মোড়, টিএসসি, দোয়েল চত্বর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, হাতিরঝিল— কোথাও নেই উৎসবের ছোঁয়া। শুধু রাজধানী নয়, সারাদেশেই পহেলা বৈশাখ পালনের ক্ষেত্রে কৃচ্ছতা সাধন করেছে।
লাল পেড়ে শাড়ি, মাথায় ফুলের টায়রা, হাতে কাচের চুড়ি, খোঁপায় রঙিন ফুল, কানে মাটির দুল, লালে-সাদায়, বর্নিল সুতায় বোনা পাঞ্জাবি-ফতুয়া, কাঁধে ঝুলানো বাহারি রঙের গামছা, হাতে ধরা তালের পাখা-একতারা-দোতারা— কোনো কিছুই চোখে পড়েনি এই বৈশাখে!
তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পহেলা বৈশাখ ঠিকই ফিরে এসেছে! বিগত বছরগুলোর বৈশাখী স্মৃতি ফিরিয়ে দিয়েছে ফেসবুক। হোক তা পুরোনো! এই পুরোনো স্মৃতিগুলোই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন অনেকেই। ভার্চুয়াল জগতে ফিরিয়ে এনেছেন বাংলা নববর্ষ!
ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম বাবুকে ফেসবুক ফিরিয়ে দিয়েছে ১৪২৫ বঙ্গাব্দের চমৎকার একটি ছবি। গোলাপি রিবন দিয়ে ঝুঁটি বাঁধা মিষ্টি মেয়ে গহনের সঙ্গে তোলা ছবিটি শেয়ার করেছেন শহীদুল ইসলাম বাবু। লাল পাঞ্জাবির সঙ্গে কাঁধে হলুদ গামছা, ছোট্ট মেয়ের পরনে হলুদ-সাদা-কলাপাতা রঙ্গের জামা— কী দারুণ ছিল দুই বছর আগের বৈশাখটি। কিন্তু এবারের বৈশাখ এসেছে নিদারুণ আতঙ্ক আর অজানা শঙ্কা সঙ্গে করে।
মোবাইল ফোনে এ প্রতিবেদককে শহীদুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ তো আমাদের চিরায়ত উৎসব। কিন্তু এবার আর উৎসব নয়, গাইতে হচ্ছে মানবতার গান। মানুষের পৃথিবীতে মানুষ যদি বাঁচে, তাহলে উৎসব ফিরে পাওয়া যাবে। তখন সবাই মিলে আমরা উৎসবের গান গাইব।’
কবি ও শিক্ষক চামেলী বসুও ফেসবুকের কল্যাণে ফিরে পেয়েছেন দুই বছর আগের এক বৈশাখ। সদ্যপ্রয়াত বাবা, ছায়ার মতো সঙ্গে থাকা মা’ সংগীত শিল্পী স্বামী এবং একমাত্র পুত্র সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে তোলা ১৪২৫ বঙ্গাব্দের পহেলা বৈশাখের ছবি শেয়ার করছেন ফেসবুকে।
এবারের বৈশাখ নিয়ে অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে এ প্রতিবেদককে চামেলী বসু বলেন, ‘মুহূর্তের মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে আমাদের এই পৃথিবী। নিরানন্দের মুহূর্ত দূর হয়ে ফিরে আসুক আনন্দক্ষণ— আপাতত এটুকুই চাওয়া। কল্যাণময় হোক পৃথিবী।’
সাংবাদিক শিপন হাবিবকে ফেসবুক ফিরিয়ে দিয়েছে গত বৈশাখের কিছু স্মৃতি। একমাত্র কন্যাসন্তান মানহা আজমেরি হাবীব লাল-সাদার মিশেলে তৈরি বৈশাখী জামা পরে ঢোল বাজাচ্ছে। ফুলের মতো সুন্দর ছোট্ট মানহার কপালের লাল টিপ, মুখের ওপর ঝুলে পড়া চুল, বিস্ময়কর চাহনী এবারের বৈশাখকেও রাঙিয়ে দিতে পারত। কিন্তু করোনা দুর্যোগ সেটা হতে দেয়নি। ঘরবন্দি করে ফেলেছে তাকেও।
এ প্রতিবেদককে মানহার ‘বাবা’ শিপন হাবিব বলেন, ‘ফেসবুক মেমোরির ছবি দেখে মানহাও বুঝতে পেরেছে, আজ পহেলা বৈশাখ। বাইরে যাওয়ার জন্য কান্নাও করেছে। কিন্তু মানহার জন্য, সারাদেশের মানুষের জন্য, গোটা পৃথিবীর জন্য ঘরে থাকাটাই এখন বেশি প্রয়োজন। পৃথিবী শান্ত হলে আবার আমরা উৎসব করব। এক সঙ্গে মিলিত হব। মানহাদের পৃথিবী মানহাদের ফিরিয়ে দেবো।’
ফেসবুক মেমোরি থেকে পাওয়া ছবি শেয়ার করেছেন সাংবাদিক ফারজানা প্রিয়দর্শিনী আফরিন। বিগত বছরগুলোতে বৈশাখী সাজের ওই ছবি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঘুরাঘুরি, পেশাগত দায়িত্বপালন, প্রিয়জনের সঙ্গে আড্ডার মধুর স্মৃতি সামনে এনেছে।
করোনাভাইরাস টপ নিউজ পহেলা বৈশাখ ফেসবুক মেমোরি ফেসবুক স্মৃতিতে বৈশাখ