পবিত্র শবে বরাত আজ, ঘরে বসে ইবাদতের আহ্বান
৯ এপ্রিল ২০২০ ০৯:৫০ | আপডেট: ৯ এপ্রিল ২০২০ ১২:৩১
ঢাকা: আজ পবিত্র শবে বরাত। রাতভর নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির আজগার ও মহান আল্লাহার কাছে সারা বছরের ভুল-ভ্রান্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থনার মধ্য দিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা পবিত্র শবে বরাত পালন করে থাকে।
হিজরি বর্ষের শাবান মাসের ১৪ তারিখে দিবাগত রাতটিকে মুসলমানগণ সৌভাগ্যের রজনী হিসেবে পালন করে থাকেন। ধর্ম অনুযায়ী মহান আল্লাহ তাআলা এ রাতে বান্দাদের জন্য অশেষ রহমতের দরজা খুলে দেন।
শবে বরাত বৃহস্পতিবার, ঘরে পড়তে হবে নামাজ
পাশাপাশি আল্লাহর কৃপা লাভের আশায় অনেকে গরিব, এতিম, মিসকিনদের টাকা পয়সা দান করে থাকেন। এছাড়া মৃত আত্মীয়-স্বজনের কবর জিয়ারত করে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। না না ধরনের হালুয়া রুটি তৈরি করে আত্মীয় স্বজনসহ অসহায় দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করে থাকে মুসলমানেরা।
তবে এবারের শবে বরাত সেই আনুষ্ঠানিকতা না করেই পালন করতে হচ্ছে। মহামারি করোনা ভাইরাসের কারনে এরই মধ্যে মসজিদে জামাতসহ সব ধরনের গণজমায়েত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ অবস্থায় বাসায় থেকেই শবে বরাত পালন করতে বলা হয়েছে।
এ কারণে দিনটি উপলক্ষে দেখা যায়নি রুটি হালুয়া নিয়ে ঘরে ঘরে কোনো ব্যস্ততাও। মসজিদগুলোতেও নেই বাড়তি কোনো আয়োজন।
শবে বরাতে ঘরে বসে নামাজ আদায়ের পরামর্শ দিয়ে রাজধানীর শাহজাদপুর ঈদগাহ জামে মসজিদের খতিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ মোহাম্মদ কুতুব উদ্দিন লিখেছেন, শাবান মাসের মধ্য রজনী (শবে বরাত) একটি বরকতপূর্ণ রজনী। বিশুদ্ধ হাদিসের দ্বারা এ রাতের ফজিলত প্রমাণিত। প্রিয় নবী হযরাতম মুহাম্মদ (স.), সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ী ও আইম্মায়ে মুজতাহিদীনের যুগে এ রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘটা করে কোনো আমল করা, বিশেষ ধরণের কোনো অনুষ্ঠানাদী করা, আলোক সজ্জা করা, হালুয়া-রুটির আয়োজন করা ইত্যাদীর কোনো ছহিহ প্রমাণ পাওয়া যায় না।
বুজুর্গানে দ্বীন ও আল্লাহর অলি-আউলিয়াগণ এ রাত অনানুষ্ঠানিকভাবে ব্যক্তিগত ইবাদত বন্দেগী, যিকির-আযকার, তাওবা-ইসতিগফার ইত্যাদীর মাধ্যমে কাটিয়েছেন। আর তারাবীর নামাজ ব্যতিত সুন্নাত-নফল নামাজ মসজিদের চেয়ে বাসায় একাকী আদায় করলেই বেশি ছাওয়াব হয়।
আমার শ্রদ্ধেয় কিছু মুসল্লিদের মধ্যে কেউ কেউ এবার শবে বরাতে মসজিদে সবাই মিলে প্রতি বছরের ন্যায় ইবাদত করতে পারব না বিধায় আক্ষেপ প্রকাশ করছেন।
শবে বরাতে নিজ ঘরে ইবাদত করুন: আহমদ শফী
তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, প্রতি বছরই আমরা সবাই খুব ঘটা করে শবে বরাত পালন করে আসছি বিধায় সাধারণ মুসুল্লিদের এমনই একটি ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে যে, শবে বরাত মসজিদ কেন্দ্রীক ইবাদতেরই নাম। আমার মসজিদও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে প্রতি বছরই শবে বরাতের আলোচনায় বিষয়গুলোকে সুস্পষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে। যার ফলে আল্লাহর রহমতে আমাদের শাহজাদপুর ঈদগাহ মসজিদের মুসুল্লি ভাইয়েরা এসব বিষয়ে অনেক বেশী সচেতন আছেন আলহামদুলিল্লাহ।
সম্মানিত ধর্মপ্রাণ মুসলমান ভাই বোনদের অনুরোধ করছি, এ বছর মহান আল্লাহ আমাদেরকে সুযোগ দান করেছেন শবে বরাতটি নিজ নিজ ঘরে পালনের জন্য, এটিই উত্তম পন্থা, তাই আসুন সবাই আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি, তাওবা ইসতিগফারের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত লাভ করি, এই মহামারী হতে পরিত্রাণ চাই, সব ধরণের গোনাহ হতে তাওবা করে নতুন জীবন শুরু করি। ফরজ পরিমাণ ইলম অর্জনে অবসর সময়টিকে কাজে লাগাই।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে পরিত্রাণ কামনা করে পবিত্র শবে বরাতের রাতে বিশেষ দোয়া করতে কবরস্থান ও মাজারে জনসমাগম না করার আহ্বান জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা)।
গতকাল বুধবার ইফার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্বে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়ংকর আকার ধারণ করছে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব দৃশ্যমান। বিরাজমান এ পরিস্থিতিতে মহিমান্বিত এ রজনীতে নিজ নিজ বাসস্থানে অবস্থান করে ইবাদত বন্দেগির সময় ব্যক্তিগত দোয়া ও প্রার্থনা ছাড়াও করোনাভাইরাসের মহামারির আক্রমণ থেকে দেশবাসী, প্রিয় মাতৃভূমি, মুসলিম উম্মাহ ও বিশ্ববাসীকে সুরক্ষা ও নিরাপদ রাখতে মহান আল্লাহর দরবারে বিশেষ দোয়া করার জন্য দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে ।
দেশের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ, মসজিদের খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, শিক্ষকসহ সব ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে দোয়া করার অনুরোধ জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
এছাড়া পবিত্র শবে বরাতের রাতে মসজিদে না গিয়ে নিজ নিজ ঘরে একাকি ইবাদত করার জন্য দেশবাসী প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমির আহমদ শফী। বুধবার (৮ এপ্রিল) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে আহমদ শফী বলেন, ‘মহিমান্বিত রজনী হিসেবে মুসলিম সমাজে শবে বরাতের গুরুত্ব অনেক। এ রাতে মানুষ ইবাদত বন্দেগীতে সময় পার করেন এবং দিনে রোজা রাখেন। আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করে, কান্নাকাটি করে শবে বরাত পালন করেন।’
‘কিন্তু করোনাভাইরাসের ক্ষতি থেকে বাঁচতে বর্তমানে অনেক জেলা-উপজেলায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এমনকি মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জামাতে সীমিত উপস্থিতির পরামর্শ দিয়েছেন দেশের শীর্ষ আলেম সমাজ। এই পরিস্থিতিতে একাকিভাবে শবে বরাতের যাবতীয় আমল ঘরে করা উচিত। আর সুন্নাহর তাকাজাও এটাই।’
শবে বরাতের রাতে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাসহ সকল রোগ থেকে মুক্তির জন্য বিশেষ দোয়ার আহ্বান জানিয়ে শফী বলেন, ‘শবে বরাতে একাকি ইবাদত করা রাসূলের সহীহ হাদীস ও সাহাবীদের আমল থেকে প্রমাণিত। তাই বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করুন। নিজেদের কৃত গুনাহ থেকে তওবা করুন। মহান আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। যিকির করুন। দান-সদকা করুন। কবর জেয়ারত করুন। পরিবার পরিজনকে দ্বীনি কাজে বেশি বেশি সম্পৃক্ত করুন।’
হেফাজত আমির আরও বলেন, ‘শবে বরাতকে কেন্দ্র করে আমাদের দেশে বেশ কিছু কুসংস্কার চালু হয়েছে। অনেকে হালুয়া রুটির ব্যবস্থা ও মসজিদ আলোকসজ্জা করে থাকেন। নির্দিষ্ট পরিমাণ রাকাতে জামাত সহকারে নামাজ পড়ে থাকেন। এসব বিদআত কাজ। বাড়াবাড়িতে না গিয়ে নিজ নিজ ঘরে একাকি ইবাদতের মাধ্যমে শবে বরাত পালন করা উচিত।’