‘অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব ঠেকাতে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা’
৩১ মার্চ ২০২০ ২২:৪৭ | আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২০ ২২:৫৯
ঢাকা: এই মুহূর্তে করোনাভাইরাস থেকে মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব মোকাবিলাকে সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আর করোনাভাইরাস সংকট পরবর্তী সময়ের অর্থনীতি মোকাবিলায় সরকার স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করছে বলেও জানান তিনি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, এই মুহূর্তে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার মানুষ ও অর্থনীতিকে রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। সরকার সেটাই করছে। সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি, আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ প্রণয়ন, সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বাড়ানো, মুদ্রার সরবরাহ বাড়ানোর মতো উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। অর্থনীতিতে করোনার বিরূপ প্রভাব থেকে উত্তরণের জন্যও সরকার স্বল্পমেয়াদি ও মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তার বাসভবনে কয়েকজন সচিবের সঙ্গে করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে বাংলাদেশে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব ও উত্তরণে করণীয় শীর্ষক এক বৈঠকে এসব কথা বলেন। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, আইআরডি সিনিয়র সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে অর্থমন্ত্রী বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার মানুষকে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা। পাশাপাশি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনীয় আহারের ব্যবস্থা করা।
বৈঠকে আসন্ন বাজেট নিয়েও প্রাথমিক আলোচনা হয়। সেখানে বলা হয়, বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রভাবে বাজেটে যেন আর্থিক সংকট না হয়, সেজন্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাজেট সহায়তাপ্রাপ্তির বিষয়ে যোগাযোগ অব্যাহত আছে।
বাংলাদেশের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাবে বাংলাদেশকে অন্যান্য দেশের মতো নানামুখী অর্থনৈতিক সমস্যার মোকাবিলা করতে হতে পারে। আমরা এখনো জানি না, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কতদিন প্রলম্বিত হবে। আমাদের আমদানি ব্যয় ও রফতানি আয়ের পরিমাণ গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কম হয়েছে। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে অর্থবছর শেষে এর পরিমাণ আরও কম হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
এ সময় তিনি বলেন, চলমান মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন ও অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় দেরির কারণে বেসরকারি বিনিয়োগ প্রত্যাশিত মাত্রায় অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা আছে। হোটেল-রেস্টুরেন্ট, পরিবহন ও এভিয়েশন খাতেও বিরূপ প্রভাব পড়বে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বিরূপ প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে। বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে এর দাম ৫০ শতাংশের বেশি কমে গেছে, যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে প্রবাসী আয়েও। তবে যেহেতু গত আট মাসে প্রবাসী আয়ে ২১ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি ছিল, তাই আগামী চার মাসে প্রবাসী আয় কিছুটা কম হলেও বছর শেষে গত অর্থবছরের তুলানায় কম হবে না বলে আশা করা যায়।
অর্থমন্ত্রী বলেন, সারাবিশ্বের অর্থনীতি করোনার প্রভাবে কী পরিমাণ ক্ষতি হবে, তার সামগ্রিক প্রাক্কলন এখনই সম্ভব নয়। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের প্রাক্কলন বলছে, করোনার প্রভাব খুব বাজে হলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৩০২ কোটি মার্কিন ডলার হতে পারে।
মন্ত্রী আরও বলেন, দীর্ঘ ছুটি বা কার্যত লকডাউনের ফলে রফতানিমুখী শিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং কুটিরশিল্পসহ উৎপাদনমুখী সব প্রতিষ্ঠানে বিরূপ প্রভাব পড়বে। পরিবহন সেবা ব্যহত হওয়ায় স্বল্প আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমবে। সরবরাহ চেইনেও সমস্যা হতে পারে। রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রেও আমরা শঙ্কিত। তা সত্ত্বেও করোনা সংকটের এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুকূল ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নিম্ন আয়ের মানুষের সহায়তায় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিল্প উৎপাদন ও রফতানি বাণিজ্যের আঘাত মোকাবিলাতেও কিছু আপৎকালীন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এসময় রফতানি খাতের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা, ব্যাংক ঋণের কিস্তিু জুন মাস পর্যন্ত শিথিল করাসহ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব অর্থমন্ত্রী অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল করোনার প্রভাব