খালেদার নিরাপত্তায় ৫ সিএসএফ, নেই পুলিশ!
২৯ মার্চ ২০২০ ২০:১৬ | আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২০ ২৩:২০
ঢাকা: বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে ২৫ মার্চ বিকেলে সাময়িক মুক্ত পেয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ৪০১ ধারায় নির্বাহী আদেশে মুক্তি পাওয়ার পর সরকারের দেওয়া শর্ত মেনে সোজা গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় উঠেছেন তিনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের চিকিৎসকদের দেওয়া পরামর্শ অনুযায়ী এই মুহূর্তে হোমকোয়ারেনটাইনে আছেন তিনি।
কিন্তু খালেদা জিয়ার সার্বিক নিরাপত্তা ও বাসভবন পাহারায় এখন পর্যন্ত কোনো পুলিশ মোতায়েন করা হয়নি। ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনী ‘চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্সের্র (সিএসএফ)’ মাত্র পাঁচ জন সদস্য খালেদা জিয়া এবং তার বাসার নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন।
দলীয় সূত্রমতে, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৭টি আসনে জয় এবং পাঁচটি সংরক্ষিত মহিলা আসন নিয়ে সংসদে বিরোধী দলের নেতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। নিকট অতীতে বিরোধী দলের নেতা স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) সুবিধা পেলেও বিএনপি-জামায়াত আমলে সেটা বাতিল করা হয়। সঙ্গত কারণে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে পুলিশি নিরাপত্তা যেটুকু পাওয়ার কথা ছিল, সেটুকুই পেয়ে আসছিলেন খালেদা জিয়া।
কিন্তু সেই সময় সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী, দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলের চেয়ারপারসন হিসেবে আত্মমর্যাদা ও সামাজিক অবস্থানের সঙ্গে ওই ‘যৎসামান্য’ পুলিশি নিরাপত্তা যথার্থ মনে হয়নি খালেদা জিয়ার। তাই নিজের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ২০০৯ সালে ‘চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ)’ গঠন করেন তিনি। শুরুর দিকে এই ফোর্সের সদস্য সংখ্যা ছিল ১১।
সূত্রমতে, ক্যান্টমেন্টের মঈনুল রোডের বাসা থেকে গুলশান-২-এর ৮৬ নম্বর সড়কে রাজনৈতিক কার্যালয়ে আসা-যাওয়ার পথে খালেদা জিয়ার সার্বিক নিরাপত্তার পাশাপাশি তার অফিস ও বাসার নিরাপত্তার জন্য এই ১১ জন সিএসএফ সদস্য এবং সংসদে বিরোধী দলীয় নেতার জন্য বরাদ্দ পুলিশ প্রটোকলকেই খালেদা জিয়ার জন্য যথেষ্ট মনে করেছে বিএনপি।
২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর ক্যান্টনমেন্টের মঈনুল রোডের বাসা থেকে খালেদা জিয়াকে বেরিয়ে আসতে হয়। ২০১১ সালের ২২ এপ্রিল গুলশান-২-এর ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় ওঠার পর এসএসএফ সদস্য ১১ থেকে বাড়িয়ে ১৬ করা হয়। ২০১১ সালের জুনে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করার পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলন শুরু হলে সিএসএফ সদস্য সংখ্যা আরেক দফা বাড়িয়ে ২২ জন করা হয়। ছয় জন কর্মকর্তাসহ তখন এর জনবল দাঁড়ায় ২৮ জনে। এদের মধ্যে অন্তত ১০ জন ছিলেন অস্ত্রধারী।
২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট এবং ২০১৫ সালের ৩ জানুয়ারি থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯২ দিনের অবরোধ ও দফায় দফায় হরতাল শেষে কার্যত মাঠের আন্দোলন থেকে ছিটকে পড়ে বিএনপি। মাঠের আন্দোলন এবং খালেদা জিয়ার মুভমেন্ট কমে যাওয়ায় তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় থাকা সিএসএফ সদস্য সংখ্যাও কমতে থাকে। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যাওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সিএসএফ সদস্য সংখ্যা ছিল ১৬। আর পুলিশ সদস্য ছিল চার জন।
জানা গেছে, খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার কয়েক দিনের মাথায় তার বাসার সামনে থেকে পুলিশ সদস্যদের সরিয়ে নেওয়া হয়। সিএসএফ সদস্যদেরকেও একেক করে বিদায় করে দেয় বিএনপি। কেবল মাত্র তার বাসা দেখে-শুনে রাখার জন্য চার জন সিএসএফ সদস্য রেখে দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এরই মধ্যে বিদায় নেওয়া ও বেকার হওয়া সিএসএফ সদস্যরা মনে করেছিলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির পর তারা ডাক পাবেন। আবার ডিউটি করতে পারবেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিধানে। কিন্তু রোববার (২৯ মার্চ) দুপুরে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সিএসএফের পুরনো কোনো সদস্য বা কর্মকর্তাকে বিএনপির পক্ষ থেকে ডাকা হয়নি। সিএসএফ সুপার ভাইজার সার্জেন্ট নুরুন নবীর নেতৃত্বে শেষ পর্যন্ত থেকে যাওয়া সেই চার জনই দায়িত্ব পালন করছেন।
জানা গেছে, আপাতত সিএসএফ সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনাও নেই বিএনপির। খালেদা জিয়া যেহেতু এখন বাসাতেই অবস্থান করবেন, অফিস করবেন না এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে আপাতত সক্রিয় হওয়ার সুযোগ তার নেই, সেহেতু সিএসএফ সদস্য সংখ্যা এই মুহূর্তে বাড়াবে না বিএনপি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং সিএসএফ প্রধান সাবেক সেনা কর্মকর্তা ফজলে এলাহী আকবর সারাবাংলাকে বলেন, ‘নিরাপত্তার তো কোনো সীমা নেই। যত নিরাপত্তাই দেই, তারপরও গ্যাপ থেকেই যাবে। তাছাড়া ম্যাডাম তো এখন মুভ করছেন না। তাই যে ক’জন আছে, সেটাই যথেষ্ট। যদি মুভ করেন, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে সিএসএফ সংখ্যা বাড়ানো যাবে। সেদিন বিএসএমএমইউ থেকে আসার সময় ১২ জন্য সিএসএফ সদস্য তার সঙ্গে ছিল। প্রয়োজন হলে আবারও বাড়ানো হবে।’
তবে দলীয় সূত্রগুলো বলছে, সিএসএফ সদস্য সংখ্যা না বাড়ানোর পেছনে তাদের বেতন-ভাতা, থাকা-খাওয়ার বিষয়টিও কাজ করছে। খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর প্রায় এক বছর ১৫/১৬ জন সিএসএফ সদস্যকে বেতন-ভাতা দিয়ে পুষেছে বিএনপি। দেশের একজন ডাকসাইটে ব্যবসায়ী এবং দলের ভাইস চেয়ারম্যান সিএসএফের বেতন-ভাতা দিতেন। শেষের দিকে এসে বেতন-ভাতা অনিয়মিত হয়ে যায়। গত বছর মার্চ মাসে চাকরি ছেড়ে যাওয়া এক সিএসএফ সদস্য সারাবাংলাকে জানান, এখনো তার দুই মাসে বেতন বাকি রয়েছে। আর যে পাঁচ জন কর্মরত আছেন, তাদের বেতনও প্রায় ৪০ ভাগ কমানো হয়েছে!
এদিকে খালেদা জিয়ার বাসার পশ্চিম কর্নারে টিনশেড যে আধাপাকা ঘরটাতে সিএসএফ সদস্যরা থাকতেন, সেটাও ভেঙে ফেলা হয়েছে। ফলে থাকা-খাওয়ার সুবিধাটুকুও সিএসএফ সদস্যদের দিতে পারছে না বিএনপি। সে কারণেই আপাতত সিএসএফ সদস্য বাড়ানোর পরিকল্পনা নেই তাদের।
এদিকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনার বাইরে সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার নিরাত্তার যে ব্যবস্থাটুকু ছিল, সেটুকু না থাকায় কিছুটা হতাশ বিএনপি। এরই মধ্যে দলের পক্ষ থেকে পুলিশের সংশ্লিষ্ট দফতরে যোগাযোগও করা হয়েছে। বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসেবে না হোক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়ার পুলিশি প্রটোকল চায় বিএনপি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম কামরুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনো আবেদন আমাদের কাছে আসেনি।
এর আগে খালেদা জিয়াকে নিরাপত্তা প্রটোকল দেওয়া হতো, এখন দেওয়া হচ্ছে না কেন— এ প্রশ্নের জবাবে ওসি কামরুজ্জামান বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান রেঞ্জের একাধিক পুলিশ কর্মকর্তাকে একাধিকবার ফোন দিলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।
খালেদা জিয়া খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা টপ নিউজ পুলিশ প্রটোকল সিএসএফ