Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রঙ ছড়াচ্ছে শত অত্যাচারমুক্ত প্রাণ-প্রকৃতি


২৯ মার্চ ২০২০ ২০:০৩ | আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২০ ২০:২৭

আব্দুল জাব্বার খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রোববার বিকাল ৩টা। রাজধানীর বিজয় সরণি পার হয়ে চন্দ্রিমা উদ্যানের সামনের সড়কে পিনপতন নীরবতা। ট্রাফিক সিগনালে দাঁড়িয়ে নেই শত শত যানবাহন। নেই গাড়ির হর্ন, কোনো কালো ধোঁয়া অথবা শব্দদূষণের বালাই। জনমানব শূন্য খাঁ-খাঁ করছে চারপাশ। ফাঁকা সড়কে নেমে এসেছে একদল শালিক। চারদিকের শান্ত-নিবিড় পরিবেশ ও শালিকের কিচিরমিচির শব্দে মনে হবে এ যেন দূষণমুক্ত এক নির্মল শহর।

বিজ্ঞাপন

করোনায় মানবজীবন যখন বদ্ধ ঘরে। প্রকৃতি যেন তার বন্ধ দুয়ার খুলে দিয়েছে। শত অত্যাচার থেকে মুক্ত হয়ে প্রকৃতি যেন তার নিজের রঙ ছড়াতে শুরু করেছে।

ধানমন্ডি লেক পাড়ে নীরব-নিস্তব্ধতায় দোয়েলের শিস, কোকিলের কুহুডাক মুগ্ধ করবে যে কাউকে। কাঠবিড়ালীর আপন মনে খেলা করার দৃশ্য, পাখিদের কিচিমিচির শব্দে মনেই হবে না এ যেন যান্ত্রিক শহর ঢাকা। রাজধানীর ঢাকার এমন চিত্র সবার কাছেই কল্পনাতীত। কারণ কোটি মানুষের এই শহরে কখনোই এমন পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে অফিস আদালত বন্ধ থাকলেও এসব জায়গায় লোক সমাগম থাকতো আরও বেশি।

মহামারি করোনাভাইরাসের আতঙ্ক আর সরকারি নির্দেশনায় পাল্টে গেছে গোটা শহরের দৃশ্য। রোদের তাপ ৩৫ ডিগ্রি হলেও নেই কোনো ভ্যাপসা গরম। নির্মল বায়ু ও ঝলমলে রোদে প্রকৃতি যেন জেগে উঠেছে।

রোববার (২৯ মার্চ) গুলশান, হাতিরঝিল, চন্দ্রিমা উদ্যান, ধানমন্ডি লেক, মিন্টোরোড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘুরে প্রকৃতির এ রূপ দেখা মেলে। বিশেষ করে ধানমন্ডি লেক, মিন্টোরোড ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এলাকায় বাস করা নানা প্রজাতির পাখির গুঞ্জন যেন বেড়ে গেছে বহুগুণ।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া শহরের বিভিন্ন এলাকায় পাখপাখালি অবাধ বিচরণ করে বেড়েছে। সকালে ঘুম ভাঙছে পাখির কিঁচিমিঁচির শব্দে। চিরচেনা সেই ঢাকা যেন নতুন রূপ ধারণ করেছে।

ধানমন্ডি এলাকার বাসিন্দা কামরুল ইসলাম জানান, এখানে যে এত পাখি বাস করে আগে কখনো ফিল (অনুভব) করিনি। ইদানিং সকাল-বিকেল পাখির শব্দে পরিবেশটাই ভিন্ন রকম হয়ে যায়। এখানে আসলে মনে হবে কোনো গ্রামে আছি।

তিনি বলেন, আগেও হয়তো পাখি ছিল। শব্দ দূষণের কারণে আমরা শুনতে পাইনি। এখনতো পুরো ঢাকাই নীরব।

মিন্টোরোড এলাকার রিকশা চালক রাশেদুল বলেন, পাখির শব্দ শুনেই দাঁড়াইছি। খুবই ভালো লাগছে। পাখির শব্দ শুনে মনে হচ্ছে না ঢাকায় আছি।

রিকশা নিয়ে কখন বের হয়েছেন, এখন পর্যন্ত কত টাকা আয় হয়েছে জানতে চাইলে রাশেদুল জানান, রাস্তায় যাত্রী নাই। সকাল সাড়ে ৮টায় বের হয়েছি। বিকাল পর্যন্ত ২ শ টাকাও হয়নি। এর মধ্যে একশ টাকা গাড়ির জমা।

এ অবস্থায় বের হয়েছেন কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ঘরে আমরা স্বামী-স্ত্রীসহ পাঁচজনের সংসার। জমানো টাকা নাই। বের না হলে খামু কি। খাইয়া তো বাঁচতে হবে।

করোনায় শুধুমাত্র ঢাকা নয় গোটা বিশ্বই বদলে গেছে। মানুষ আশ্রয় নিয়েছে তার ঘরে আর প্রকৃতি দখলে নিয়েছে তার জায়গা। এই যেমন ৩০ বছর পর ডলফিন ফিরে এসেছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কাছে। কচ্ছপ দখলে নিয়েছে সী-বিচ। ভারতে রাজপথে নেমে এসেছে জঙ্গলের বিভিন্ন প্রাণী।

গতকাল গবেষণার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গেল ১০ বছরের ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা গড়ে ২শ’র কাছাকাছি ছিল। এই মুহূর্তে যেটি অবস্থান করছে ১০০ থেকে ১২১ এর ঘরে। দূষণ মাত্রায় বিশ্বে ঢাকার অবস্থান ১৫তম। এয়ার কোয়ালিটি ইন্ডেক্স বলছে, গত দুই বছরে এটি ঢাকার সর্বোচ্চ সূচক। এমনকি দেশ হিসেবেও সূচকে ২৫ এর বাইরে রয়েছে বাংলাদেশ। অথচ এই বছরের শুরুতেও দূষণের মাত্রায় প্রথম তিনের মধ্যে ছিল ঢাকা। দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থানও ছিল ৫ থেকে ১০ এর ঘরে।

সারাবাংলা/এজেডকে/এমআই

প্রকৃতি রাজধানী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর