পাস না করেও রাবিতে ভর্তি ৪৩ শিক্ষার্থী, প্রতিবাদে মানববন্ধন
১০ মার্চ ২০২০ ২০:৩৮ | আপডেট: ১০ মার্চ ২০২০ ২০:৫৭
রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস নম্বর না পেয়েও ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন ৪৩ শিক্ষার্থী। এরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা বা কর্মচারীর সন্তান বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্যের সিদ্ধান্তেই পোষ্য কোটায় তাদের ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মানবিক (এ) ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. মো. আহসান কবির।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২১ ও ২২ অক্টোবরে অনুষ্ঠিত ১০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস নম্বর ছিল ৪০। নিয়ম অনুযায়ী পাস নম্বর পাওয়ার পরই পোষ্য কোটা কার্যকর হওয়ার কথা। তবে ৩০ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারির মধ্যে ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটায় ৪০ এর কম এবং ন্যূনতম ৩০ নম্বর প্রাপ্ত পরীক্ষার্থীদের অনলাইনে ভর্তির বিভাগ পছন্দক্রম করতে বলা হয়। এরপর ২ জানুয়ারি তাদের ভর্তির সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকেই ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ৪৩ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন বিভাগে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়।
অধ্যাপক ড. মো. আহসান কবির বলেন, ‘এমনটি প্রতিবছরই হয়ে থাকে এবং ভর্তি পরীক্ষার মূল কমিটিতে উপাচার্য স্যারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই হয়। আসন সংখ্যার শতকরা ৫ ভাগ পোষ্য কোটায় পূরণ করা হয়। এবারে ফল প্রকাশের পর দেখা যায় ওই পরিমাণ আসন সংখ্যার বিপরীতে থাকা শিক্ষার্থীরা পাস নম্বর তুলতে পারেনি। পরে আসন শূন্য থাকার প্রেক্ষিতে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এখানে অনিয়মের কিছু হয়নি।’
এদিকে মানবিক ইউনিট প্রধান বিষয়টিকে স্বাভাবিক বললেও বিজ্ঞান (সি) ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কমিটির প্রধান ড. মো. একরামুল হামিদ বলেন, ‘সবচেয়ে মেধাবীদের মূল্যায়নের জায়গা বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু কোটার নামে উচ্চশিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানে ফেল করা শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা উচিত হয়নি। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দুঃখজনক।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তকে চরম অনিয়ম অ্যাখ্যা দিয়ে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. আকতার বানু বলেন, ‘এটা চরম অন্যায়। এ ধরণের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া যায় না। এরকম হলে ভর্তি পরীক্ষার দরকার কী? তাদের এমনিতেই ভর্তি করা হোক। যারা এই ভর্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন তাদের শাস্তি হওয়া উচিত।’
এ বিষয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা গণমাধ্যমকে জানান, যেহেতু পোষ্য কোটায় সিট খালি ছিল তাই তারা মনে করেছেন যে এদের ক্ষেত্রে নিয়ম আরেকটু শিথিল করা যায়। ভর্তি পরীক্ষা কমিটি সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে উপাচার্য ড. আব্দুস সোবহানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরে মোবাইলে বার্তা পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি।
অন্যদিকে পাস নম্বর না পেয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া ৪৩ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ রাবি শাখা। এই দাবিতে মঙ্গলবার (১০ মার্চ) বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে মানববন্ধন থেকে এই দাবি জানানো হয়।
শিক্ষার্থীরা বলেন, দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে পিছনে ফেলে গবেষণায় প্রথম স্থান অর্জন করা বিদ্যাপীঠে এমন অযোগ্য শিক্ষার্থীদের স্থান দিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা ভুলুণ্ঠিত করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে হলে এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড পরিহার করে ভর্তি পরীক্ষার মান স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক করার আহ্বান জানান তারা।
মানববন্ধন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বরারব স্মারকলিপি দেয় বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ রাবি শাখা।
রাবি শাখা ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. মাজহারুল ইসলামের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন, রাবি শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি মুর্শিদুল আলম, কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মহিউদ্দীন মানিক, ছাত্র অধিকার পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক আমানুল্লাহ খান, যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল ইসলাম, নাইমুল ইসলাম নাঈম, প্রচার সম্পাদক হেলাল উদ্দীন, উন্মুক্ত বিতর্ক অঙ্গনের আহ্বায়ক মাহমুদ সাকী ও আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
পোষ্য কোটায় ভর্তি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রাবিতে ৪৩ শিক্ষার্থী ভর্তি