ধর্ষণের পর মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ বিজিবি সদস্যের বিরুদ্ধে
৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৮:৫০
ঢাকা: ধর্ষণ করার সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে কারাগারে যান বিজিবি সদস্য আল আমিন। এরপর বিয়ে করার শর্তে জামিন পান আল আমিন। জামিনে বেরিয়ে বিয়ে তো পরের কথা উল্টো ধর্ষণের শিকার মেয়েটি ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানি করছেন। এসব মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই ও ধর্ষকের বিচার দাবিতে ভুক্তভোগী নারী সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ধর্ষণের শিকার মেয়েটি ও তার পরিবার এসব অভিযোগ করেন।
ধর্ষণের শিকার মেয়েটি বলেন, নওগাঁ বিজিবিতে (ব্যাটালিয়ন নম্বর-১৬, সদস্য নং-১০৩১১৮ ) কর্মরত আল আমিনের বাড়ি ভোলা সদরের চন্দ্র প্রসাদ গ্রামে। পাশাপাশি বাড়ি হওয়ায় আল আমিনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে মেয়েটির। বিয়ে করবে এবং ফুসলিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক সম্পর্ক চালিয়ে আসছিল আল আমিন। গত বছরের ১৩ মেয়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে আমার নানা বাড়িতে এসে ফের ধর্ষণ করেন। এ সময় স্থানীয় জনতা টের পেয়ে তাকে হাতেনাতে ধরে পুলিশে সোপর্দ করে। ১৪ মে মামলা হলে তিনি কারাগারে যান।
উভয়পক্ষের সালিশি বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত হয় আল আমিন মেয়েটিকে বিয়ে করবেন। এ শর্তে মেয়েটি আদালতে আপত্তি না জানালে আল আমিন জামিন পান। আল আমিন জামিনে বের হয়ে পরিবারকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দেয়। গত বছরের ৪ আগস্ট আল আমিন আদালতে হাজিরা দিতে গেলে মেয়েটির সঙ্গে দেখা হয়। এ সময় আদালতের মধ্যে মেয়েটি ও তার মাকে মারধর করে আসামি আল আমিন।
মারধরের শিকার হয়ে মেয়েটি যখন ভোলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন, ঠিক ওই সময় (১৩ অক্টোবর ২০১৯) আল আমিনের মা জোৎস্না বেগম বাদী হয়ে আদালতে মেয়েটি, তার ভাই ও দুই মামাকে আসামী করে মারধরের মামলা করে। মামলা নম্বর-৩৩৫/১৯। মামলাটি এখন বিচারাধীন।
এরপর গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর ভোলার আদালতে আল আমিনের খালু বাচ্চু খান দুই মামা নুরুল ইসলাম ও দীন ইসলাম এবং ভাইয়ের নামে মামলা করেন। এছাড়া আল আমিন ও তার পরিবার, মেয়েটিকে ও তার পরিবারের সদস্যদের অব্যাহতভাবে প্রাণনাশের হুমকি ধমকি দিয়ে আসছে। উদ্দেশ্য আল আমিনের নামে যে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা রয়েছে তা তুলে নেওয়া।
এ অবস্থা চলা অবস্থায় গত ৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সাভার থানায় এক নারী ধর্ষণ মামলা করেন মঞ্জু নামে এক লোকের বিরুদ্ধে। সেই মামলায় মেয়েটির মামা দীন ইসলামকেও আসামি করা হয়। মামলায় দীন ইসলামকে মঞ্জুর বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মামলাতে যাকে সাক্ষী করা হয়েছে, সেই সাক্ষী আকবর হোসেন হলেন আল আমিনের আপন মামা। আল আমিন মামাকে দিয়ে সাভারের ধর্ষণ মামলায় মেয়েটির মামা দীন ইসলামকে আসামি করেছেন বলে অভিযোগ করেন মেয়েটি।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি আল আমিনের মামা আকবর হোসেন মেয়েটি ও তার পরিবারের সদস্যদের হুমকি দিয়েছেন, বাংলাদেশের সব আদালতে তোমাদের নামে মামলা দেওয়া হবে। বাঁচতে চাইলে ধর্ষণের মামলাটি যেন তুলে নেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মেয়েটি বলেন, যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে আল আমিনের বিচার করা না হলে আমার আত্মহত্যা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। তাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির কাছে আমার আকুল আবেদন মিথ্যা মামলা থেকে পরিত্রাণ ও আল আমির উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা হয় যেন।
এই মামলার বিষয়ে মেয়েটির মামা দীন ইসলাম বলেন, ‘আমি ঢাকায় থাকি না। সাভারে কোনো দিন যাইনি। মঞ্জু নামে আমার কোনো বন্ধুও নেই। ওই মেয়ে ভোলায় আমার ঠিকানা পেলেন কীভাবে? মেয়েটির মামলা হয়ত সত্য হতে পারে। তবে সেই মামলায় আল আমিনের মামা আমার নাম ঢুকিয়ে দিয়েছে। আমি এর উপযুক্ত বিচার চাই।’
দীন ইসলাম আরও বলেন, ‘মেয়েটির বাবা দিনমজুরের কাজ করেন। তাই মেয়েটির পরিবারকে সাহায্য সহযোগিতা করে আসছি। মামা হয়ে বিপদের সময় পাশে থাকি। এটাই আমার কাল হয়ে দাঁড়ায়। আমার নামে বর্তমানে তিনটি মামলা দিয়েছে। যশোর ও পিরোজপুরে আরও দুটো মামলা করেছে বলে জানতে পেরেছি।’
এ বিষয়ে জানতে বিজিবি সদস্য আল আমিনকে ফোন করা হলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘মেয়েটির সাথে আমার কোনো সম্পর্ক ছিল না। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। আমার নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। তাদের নামে কারা মামলা করেছে তা আমি জানি না।’