৪ বছরে সফটওয়্যার আমদানি বেড়েছে ৬ গুণ!
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৬:৩৫
ঢাকা: বৈদেশিক আয়ের ক্ষেত্রে নীতি নির্ধারক পর্যায়ে সফটওয়্যার রফতানিকে বড় একটি খাত হিসেবে দেখা হচ্ছে অনেকদিন থেকেই। সফটওয়্যার রফতানির পরিমাণও বছর বছর বাড়ছে। তবে একইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সফটওয়্যার আমদানিও। মাত্র চার বছরের ব্যবাধানেই দেশে সফটওয়্যারের আমদানি বেড়েছে ছয় গুণ! ২০১৬ সালে যেখানে ২১ লাখ ডলারের সফটওয়্যার আমদানি হয়েছিল, সর্বশেষ ২০১৯ সালে তা সোয়া কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। সংশ্লিষ্টরা উদ্বেগ জানিয়ে বলছেন, দেশীয় সফটওয়্যার শিল্পের উন্নতির পথে এ পরিসংখ্যান শঙ্কার কারণ।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে দেশে ২১ লাখ ৫৯ হাজার ৮৮৪ ডলার সমমূল্যের সফটওয়্যার আমদানি হয়েছিল। পরের বছর আমদানি বেড়ে দাঁড়ায় ৩২ লাখ ৩২ হাজার ৯২ ডলারে। ২০১৮ সালে এর পরিমাণ ছিল ৫৩ লাখ ১৬ হাজার ৩৯০ ডলার। আর সর্বশেষ ২০১৯ সালে সফটওয়্যার আমদানির পরিমাণ ছিল আগের বছরের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি— ১ কোটি ৩০ লাখ ২ হাজার ৮৫৩ ডলার।
বেসিসের এই তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালের পর চার বছরে দেশে সফটওয়্যার আমদানির পরিমাণ বেড়েছে ৬ গুণ। সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, এ বছরে সফটওয়্যারের আমদানি আগের বছরের রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে যাবে।
জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার সারাবাংলাকে বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি বিপদে না পড়লে বিদেশি সফটওয়্যার ব্যবহারের পক্ষে নই। আমি মনে করি, এক্ষেত্রে সঠিকভাবে নীতি নির্ধারণ করা হয়নি। এটা অবশ্যই প্রতিরোধ করা উচিত।
তিনি বলেন, সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে প্রথমে দেশীয় বাজারকে বড় করতে হবে। দেশে উৎপাদিত সফটওয়্যার যদি দেশের মানুষই ব্যবহার না করে, তাহলে বহির্বিশ্বের ক্রেতারা কেন তা কিনবে? আমাদের ছেলে-মেয়েদের সক্ষমতা আছে, সুযোগ পেলে তারা যেকোনো সফটওয়্যারকে রিপ্লেস করতে পারবে। দেশীয় সফটওয়্যার ব্যবহার না করলে উৎপাদনের সক্ষমতাও বাড়বে না। আর সার্বিকভাবে সফটওয়্যার আমদানি বেড়ে যাওয়া নিঃসন্দেহে উদ্বেগের বিষয়।
এদিকে, বিদেশে অবস্থান করায় এ বিষয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম সারাবাংলাকে বলেন, সফটওয়্যারের আমদানি বাড়ার তথ্যটি আমাদের কাছে নেই। তবে সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের রফতানি অনেক বেড়েছে। এছাড়া আমরা সরকারি প্রতিষ্ঠানে দেশীয় সফটওয়্যার ব্যবহারকে প্রাধান্য দিচ্ছি। হয়তো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমদানি নির্ভর সফটওয়্যারের ব্যবহার বেড়েছে।
দেশ ডিজিটালাইজেশনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে বলেই সফটওয়্যারের আমদানি বেড়েছে বলে মনে করেন বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর। এক প্রশ্নের উত্তরে সারাবাংলাকে তিনি বলেন, “দেশ দ্রুত ডিজিটালাইজেশনের দিকে অগ্রসর হওয়ায় দেশে সফটওয়্যার আমদানি বাড়ছে। দ্রুত ডিজিটালাইজেশনের পক্ষে এটি একটি ভালো লক্ষণ। দেশে যে সফটওয়্যার তৈরি হচ্ছে, সেগুলোর আমদানি কিন্তু কমছে। মূলত ওরাকল, এসএপি’র মতো ‘হাই ভ্যালু সফটওয়্যার’ আমদানি হচ্ছে, যেগুলোর একেকটির দামই ২ থেকে ৫ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ সফটওয়্যার আমদানি বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন নই। বরং ডিজিটালাইজেশনের ক্ষেত্রে এটি একটি ইতিবাচক দিক।”
বেসিসের সিনিয়র সহসভাপতি ফারহানা এ রহমান অবশ্য মনে করছেন, স্থানীয়ভাবে তৈরি সফটওয়্যার প্রচারে পিছিয়ে রয়েছে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশে লোকাল সফটওয়্যারের প্রমোশন হচ্ছে না। দেশি সফটওয়্যার ব্যবহারে তৈরি হচ্ছে না, কারণ আস্থার জায়গাটি তৈরি হয়নি। আমদানি কমাতে হলে দেশি সফটওয়্যারের ব্যবহার আরও বাড়াতে হবে। ব্যবহার করার সুযোগ থাকতে হবে। সরকারি প্রকিউরমেন্টে এখনও বিদেশি সফটওয়্যারকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এসব কারণেই সফটওয়্যারের আমদানি বাড়ছে।’ বেসিস সভাপতির মতো তিনিও সফটওয়্যার আমদানি বেড়ে যাওয়াকে উদ্বেগ হিসেবে দেখতে রাজি নন।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে সফটওয়্যার ও আইটি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ২ হাজার। আর খাতটিতে কর্মরত রয়েছেন প্রায় ১০ লাখ মানুষ। তা সত্ত্বেও দেশের সফটওয়্যার খাত এখনও বিদেশি সফটওয়্যারের নির্ভরতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। অপারেটিং ও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সফটওয়্যারে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো বিদেশ নির্ভর। তবে সফটওয়্যার ব্যবহারে ব্যাংকিং খাত এক সময় পুরোটা বিদেশ নির্ভর হলেও এখন তা কেটেছে। ব্যাংকগুলোতে বেড়েছে কোর ব্যাংকিংসহ দেশীয় ছোটখাটো সফটওয়্যারের ব্যবহার। তারপরও সফটওয়্যারের খাতের আমদানি ব্যায় বেড়ে চলছে।
বর্তমানে টাইগার আইটি, ডেটা সফট, সাউথ টেক, টেকনো ও সিনেসিস আইটি, জেনেক্স, সার্ভিস আইটি, বিজেআইটি ও ব্রেইন স্টেশনসহ আরও একাধিক প্রতিষ্ঠান দেশের বাইরে সফটওয়্যার রফতানি করছে। দেশের বিভিন্ন সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান বিজনেস সফটওয়্যার, গ্রাফিক্স, অ্যানিমেশন, ডাটা অ্যানালাইসিস, ওয়েবপেজ, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন, গেমস ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এআর ও ভিআর নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে দেশে ও দেশের বাইরে সবচেয় বেশি চাহিদা রয়েছে বিজনেস সফটওয়্যারের। আর এসব সফটওয়্যারই দেশের বাইরে রফতানি হচ্ছে। বিপরীতে বিদেশ থেকে আমদানি হচ্ছে অপারেটিং সিস্টেম, ডাটাবেজ, ডেভেলপমেন্ট, ব্যাংকিং ও সিকিউরিটিসহ উচ্চ ক্ষমতার বিভিন্ন সফটওয়্যার, যেগুলো বেশিরভাগই উচ্চমূল্যের।
পরের পর্বে পড়ুন: দেশীয় সফটওয়্যারে চলছে অর্ধেকেরও বেশি ব্যাংক