করোনা ভাইরাস: ঝুঁকিমুক্ত নয় বাংলাদেশও
২৩ জানুয়ারি ২০২০ ২০:২৮ | আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২০ ০৫:২৪
ঢাকা: চীনসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে সংক্রমণ ঘটেছে নোভেল করোনা ভাইরাসের। এরইমধ্যে ঘটেছে প্রাণহানির ঘটনাও। প্রতিদিন অসংখ্য যাত্রী চীন থেকে বাংলাদেশে আসা-যাওয়া করছে। অন্যান্য যেসব দেশে এই ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে সেসব দেশের সঙ্গেও বাংলাদেশের রয়েছে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা। আর তাই এই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে ঝুঁকিমুক্ত নয় বাংলাদেশও।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সিডিসির পরিচালক এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা এ সব কথা বলেন।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সেমিনার কক্ষে ২০১৯- এনসিওভি (2019- nCoV) ভাইরাস বা নোভেল করোনা ভাইরাস আউটব্রেক সম্পর্কে অবহিতকরণের জন্য এই সভা ও সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সভাটি আয়োজন করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি)।
ডা. সানিয়া তাহমিনা বলেন, ‘কিছু ভাইরাস, মানুষ ছাড়া অন্যান্য পশু-পাখির মধ্যে সংক্রমিত হয়। ধারণা করা হচ্ছে, নোভেল করোনা এ রকমই একটি ভাইরাস। ২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর সর্বপ্রথম এই ভাইরাসের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। ভাইরাসটিকে চিহ্নিত হয় গত ৩১ ডিসেম্বর। এতে এখন পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক লোক আক্রান্ত হয়েছেন এবং ১৭ জনের মৃত্যু ঘটেছে। প্রথমজনের মৃত্যু ঘটে গত ৯ জানুয়ারি।
ডা. সানিয়া বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরীক্ষা করে দেখেছে, যারা এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের সবাই অন্য কোনো শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত ছিলেন। এই ভাইরাসটি চীনের পাশাপাশি থাইল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, হংকং এমনকি আমেরিকায়ও ছড়িয়ে পড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু চীনের সঙ্গে আমাদের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে এবং বিপুল সংখ্যক ব্যবসায়ী ও পর্যটক ভ্রমণ করতে যান, তাই এক্ষেত্রে কিছুটা ঝুঁকি রয়েছে।’
তবে আতঙ্কিত না হওয়ার কথা বলেন ডা. সানিয়া তাহমিনা। তিনি বলেন, ‘২১ জানুয়ারি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বৈঠক করেছি, সেখানে চীন এবং আক্রান্ত দেশগুলো থেকে আসা যাত্রীদের স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদেরকে একটি কার্ড দেওয়া হচ্ছে এবং নতুন এই করোনা ভাইরাসের লক্ষণ থাকলে তাদেরকে ১৪ দিনের মধ্যে আইইডিসিআরের হটলাইন নম্বরে (০১৯৩৭ ১১০০১১, ০১৯৩৭ ০০০০১১, ০১৯২৭ ৭১১৭৮৪, ০১৯২৭ ৭১১৭৮৫) যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে। আর কেউ যদি আক্রান্ত হয়ে যান তাহলে তাদের পর্যবেক্ষণের জন্য কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত রিয়েজেন্ট রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত চীন থেকে আসা দুজন রোগীর নমুনা পরীক্ষা করা হলেও তাদের মধ্যে এ ভাইরাস পাওয়া যায়নি। তারা ইনফ্লুয়েঞ্জা বি ভাইরাসে আক্রান্ত। পাশপাশি গত কয়েকদিনে চীন থেকে আসা বিভিন্ন ফ্লাইটের ৯০০ যাত্রীকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং করা হলেও এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়নি।’
করোনা ভাইরাসের ঝুঁকির বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বরাত দিয়ে ডা. সানিয়া তাহমিনা বলেন, ‘এই ভাইরাসের ঝুঁকি খুবই সামান্য। এছাড়া এই ভাইরাসের সংক্রমণকে জরুরি অবস্থা হিসেবে ঘোষণা করা হবে কি-না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্তে বসেছে সংস্থাটি।’
করোনা ভাইরাসের মাধ্যমে রোগে আক্রান্ত হলে তার লক্ষণ সম্পর্কে অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা বলেন, ‘এ রোগে আক্রান্ত হলে প্রথমে জ্বর, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসকষ্টের সঙ্গে কাশি নিউমোনিয়া হবে। সর্বশেষে কিডনি ফেইলিওরের মাধ্যমে মৃত্যুবরণ করার ঘটনা ঘটে।’
সংবাদ সম্মেলনে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও পর্যটকদের নিয়মিত যাতায়াত থাকায় নোবেল করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি রয়েছে। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।’
তিনি জানান, দেশে কোনো রোগী পাওয়া গেলে তাদের আলাদা করে রেখে চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সরকারি কুর্মিটোলা হাসপাতালে পৃথক ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এখানে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নমুনা পরীক্ষার ফল পাওয়া যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশে ভাইরাসটির সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থাগুলো সম্পর্কে দেশের বিভিন্ন স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরগুলোতে ইমিগ্রেশন ও আইএইচআর স্বাস্থ্য ডেস্কগুলোতে সতর্কতা ও রোগের সার্ভেইল্যান্স জোরদার করা হয়েছে।
হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরসহ দেশের বিভিন্ন প্রবেশপথে নতুন করোনা ভাইরাস স্ক্রিনিং কার্যক্রম চালু হয়েছে। নতুন ভাইরাস সম্পর্কে ডাক্তার ও স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি চীনের উহান শহরের একটি মাছের বাজার থেকে এ ভাইরাসটি ছড়িয়েছে। নিউমোনিয়া-সদৃশ এ ভাইরাসটি নতুন এক ধরনের করোনা ভাইরাস। নোবেল করোনা ভাইরাস, উহান করোনা ভাইরাস, উহান ফ্লু, উহান সি ফুড মার্কেট নিউমোনিয়া ভাইরাস ও উহান নিউমোনিয়া নামে বিশ্বব্যাপী পরিচিত হয়েছে ভাইরাসটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে বলছে 2019-nCoV।