Saturday 11 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আন্তর্জাতিক আদালতের আদেশ আজ, ন্যায় বিচারের আশায় রোহিঙ্গারা


২৩ জানুয়ারি ২০২০ ০৭:৩৮ | আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২০ ১১:২২

কক্সবাজার: রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলার অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ আজ বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি)। আন্তর্জাতিক আদালতের এ আদেশে ন্যায় বিচার পাবেন বলে আশা করছেন বাংলাদেশে রিফিউজি ক্যাম্পে অবস্থান করা রোহিঙ্গারা।

এই আদেশকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি শরণার্থী শিবিরে আশ্রিত সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিরাজ করছে প্রত্যাশা ও একইসঙ্গে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। তাদের প্রত্যাশা, ন্যায় বিচার পাওয়ার পাশাপাশি নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া পরিস্থিতি তৈরি হবে এ রায়ের মাধ্যমে।

বিজ্ঞাপন

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা গণহত্যা, ধর্ষণ ও বাস্তুচ্যুত করার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পক্ষে মামলা করে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। গত নভেম্বরে করা এই মামলার রায় পেতে দীর্ঘ সময় লাগবে, তাই রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের আবেদন করে গাম্বিয়া। পরে ন্যাদারলেন্ডসের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক আদালত ২৩ জানুয়ারি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের দিন ধার্য করেন।

এদিকে আইসিজে’র রায়কে কেন্দ্র করে মিশ্র অনুভূতি বিরাজ করছে কক্সবাজারে রিফিউজি ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের মাঝে। কেমন হতে পারে মামলার রায়, এ নিয়ে ক্যাম্পজুড়ে চলছে আলোচনা। সরেজমিনে কথা বলে জানা যায়, রোহিঙ্গারা গাম্বিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রত্যাশা করছেন আন্তর্জাতিক আদালতে যেন তাদের পক্ষে রায় হয়। এ রায়ের মাধ্যমে যেন তারা পুনরায় নিরাপত্তাসহ নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে গিয়ে বসবাস করতে পারেন।

বিজ্ঞাপন

কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের রোহিঙ্গা আব্দুল কাদের গাম্বিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আমরা সঠিক রায় প্রত্যাশা করছি। আমাদের উপর যে হত্যা চালানো হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে তার বিচার চাই। আমরা পূর্ণ নাগরিকত্ব নিয়ে স্বদেশে ফিরতে চাই। ইতিমধ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী আমাদের সহায় সম্পদ সব ধ্বংস করে দিয়েছে।

বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে লিয়াকত মিয়া বলেন, মিয়ানমারের অং সান সূচি সরকার ও সেনাবাহিনী আমাদের উপর যে বর্বরতা চালিয়েছে সেই অপরাধে আন্তর্জাতিক আদালতে তাদের কঠিন বিচার হওয়া উচিত। আশা করছি আমরা সেই বিচার পাব।

তিনি আরও বলেন, সুচি আদালতে অসত্য তথ্য ও গণহত্যা অস্বীকার করে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা করছেন। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। আশা করছি রোহিঙ্গাদের পক্ষে একটি ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা হবে।

ওই রোহিঙ্গা ক্যাম্পের রাবেয়া খাতুন বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সকল ধর্মাবলম্বীদের উপর যে নির্যাতন করেছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আমরা আজকে আদেশের মাধ্যমে স্বদেশের ফিরে যাওয়ার পথ সুগম হবে এমনটি প্রত্যাশা করি। আশাকরি এই আদেশের মাধ্যমে বিশ্ববাসী আবারো জানতে পারবে গণহত্যা ও নির্যাতন করে আমাদের বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে।

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাহমুদুল হক চৌধুরী বলেন, আন্তর্জাতিক আদালতে সঠিক বিচারের মাধ্যমে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে গেলে দীর্ঘদিনের সমস্যা ও অস্থিরতা থেকে বাংলাদেশ মুক্তি পাবে। এর ফলে বাংলাদেশের ৩ দশকের একটি বড় সমস্যার অবসান ঘটবে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ কে এম মাসুদ হোসেন জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইতিমধ্যে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যেকোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত নভেম্বরে রাখাইন অঞ্চলে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিষয়ে জরুরী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে ওআইসির পক্ষে মামলা করে গাম্বিয়া। এতে অভিযোগ করা হয়, সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার। নেদারল্যান্ডসের হেগে এই অভিযোগের শুনানি হয় গত ১০ ডিসেম্বর। আদালতে গাম্বিয়ার পক্ষে বলা হয় মিয়ানমার ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে। মিয়ানমারের পক্ষে আদালতের শুনানিতে নেতৃত্ব দেন অং সান সুচি।

কক্সবাজার মিরানমার রোহিঙ্গা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর