‘পারভেজ মোশাররফের বিচার অসাংবিধানিক, মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল’
১৩ জানুয়ারি ২০২০ ১৯:৪৩ | আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২০ ২০:১০
পাকিস্তানের সাবেক সেনা ও স্বৈরশাসক পারভেজ মোশাররফের মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল ঘোষণা করেছেন লাহোর হাইকোর্ট। তার বিচার প্রক্রিয়ায় যে বিশেষ আদালত গঠন করা হয়েছিল, সেটিকেও অসাংবিধানিক বলে আখ্যা দিয়েছেন উচ্চ এই আদালত। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এর ফলে জেনারেল মোশাররফ ‘মুক্ত’ বলে গণ্য হবেন।
বিবিসির খবরে বলা হয়, সোমবার (১৩ জানুয়ারি) পাকিস্তানের হাইকোর্ট এ রায় ঘোষণা দিয়েছেন। গত ১৭ ডিসেম্বর দেশটির বিশেষ আদালতে তার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর পারভেজ মোশাররফ তার বিচারে ওই বিশেষ আদালত গঠনের প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন। সে আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত এ রায় দিয়েছেন।
পাকিস্তানের সরকারপক্ষের আইনজীবী ইশতিয়াক এ খান বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, রায়ে পারভেজ মোশাররফের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের, বিশেষ আদালত গঠন ও প্রসিকিউশন টিম গঠনের পুরো প্রক্রিয়াকেই অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে ওই আদালতের ঘোষণা করা রায়ের কোনো মূল্য থাকে না। এতে করে মোশাররফের বিরুদ্ধে আর কোনো দণ্ড নেই বলেও জানান তিনি।
পারভেজ মোশাররফের আইনজীবী আজহার সিদ্দিকি রয়টার্সকে বলেন, তার বিরুদ্ধে যে রায় ঘোষণা করা হয়েছিল, হাইকোর্ট সে রায়কে বাতিল করে দিয়েছেন।
এর আগে, গত ১৭ ডিসেম্বর পেশওয়ার হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ওয়াকার আহমেদ শেঠের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের বিশেষ আদালতের বেঞ্চ মোশাররফের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করায় তাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।
বিশেষ আদালতের রায়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন পারভেজ মোশাররফ। তিনি এ রায়কে ‘প্রতিশোধমূলক’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। দেশটির কোনো সেনাপ্রধানের প্রথমবারের মতো মৃত্যুদণ্ডের আদেশ পাওয়ার রায় প্রত্যাখ্যান করেছিল দেশটির সামরিক বাহিনীও। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নিজেও বিশেষ আদালতের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
মোশাররফ ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তবে তিনি বর্তমানে পাকিস্তানে থাকেন না। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি দুবাইয়ে পাকাপাকিভাবে বসবাস করছেন।
দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সরকারের পক্ষে আইনজীবী আলী জিয়া বাজওয়া সাবেক এই সামরিক শাসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপনের জন্য আদালতের কাছে আবেদন করেছিলেন। রাষ্ট্রদ্রোহ, জরুরি অবস্থা জারি, বেআইনিভাবে বিচারপতি বরখাস্ত, বেনজির ভুট্টো হত্যা এবং লাল মসজিদ তল্লাশি অভিযান সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি মামলায় বর্তমানে পলাতক রয়েছেন সাবেক এই পাক সেনাপ্রধান।
২০০৭ সালের ৩ নভেম্বর জরুরি অবস্থা জারির অভিযোগে দেশটির আদালতে মোশাররফের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দায়ের হয় ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে। সংবিধান লঙ্ঘন করে জরুরি অবস্থা জারির অভিযোগে ওই বছর মোশাররফকে দোষী সাব্যস্ত করেন আদালত।
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে আদালত সাবেক এই স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রমাণ বিশেষ আদালতের কাছে হস্তান্তর করেন। বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘ হওয়ার সুযোগে ২০১৬ সালের মার্চে দেশ ত্যাগ করেন সাবেক এই পাক প্রেসিডেন্ট। আদালতের অনুমতি নিয়েই তিনি দেশ ছাড়েন সেই সময়।
টপ নিউজ পাকিস্তানের হাইকোর্ট পারভেজ মোশাররফ বিচার প্রক্রিয়া অসাংবিধানিক মৃত্যুদণ্ড মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল