Thursday 09 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাকা উদ্যানের আতঙ্ক সন্ত্রাসী ‘কানা শামীম’


৯ জানুয়ারি ২০২০ ১৭:০৫ | আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২০ ২১:০৯

ঢাকা: শুধু আগ্নেয়াস্ত্র চালানো নয়, ছুরি-চাপাতি-রাম দা দিয়ে মানুষ কোপানোর অভিযোগ রয়েছে শামীম আহমেদ ওরফে কানা শামীমের বিরুদ্ধে। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকায় এমন কোনো অপকর্ম নেই যে কানা শামীম ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা করে না। এলাকাবাসী তার ভয়ে কথা বলার সাহস পান না। স্থানীয়দের কাছে এই সন্ত্রাসী ‘কানা শামীম’ নামেই পরিচিত।

এই শামীম খুনের আসামি। সাভার, মোহাম্মদপুর থানায় তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা ও জিডি। নোঙর করে রাখা পণ্যবাহী জাহাজ থেকে তেল চুরি, নদীপথে মাছের নৌকা ছিনতাই, আমিন বাজার এলাকায় মাছের গাড়ি ছিনতাইসহ একাধিক ডাকাতি করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া হুমকি-ধমকি, চুরি-ছিনতাই, চাঁদাবাজি তার নিত্যদিনের ব্যাপার। ঢাকা উদ্যান এলাকায় জমি দখল ও নিরীহ লোকদের মারধর করে টাকা আদায়ের মতোও ঘটনা রয়েছে এই কানা শামীমের বিরুদ্ধে।

বিজ্ঞাপন

আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, মোহাম্মদপুরের অপরাধ জগতের অন্যতম মাস্টার মাইন্ড মোশাররফ হোসেন ওরফে লম্বু মোশাররফের হাত ধরে আন্ডারওয়ার্ল্ডে নাম লেখান শামীম আহমেদ ওরফে কানা শামীম। ছোটখাটো চুরি থেকে ধীরে ধীরে কানা শামীম হয়ে ওঠে অপহরণ, ছিনতাই ও ডাকাত দলের নেতা। এখন ঘরে বসেই আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করছে এই উঠতি সন্ত্রাসী। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাকে খুঁজলেও পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে পুলিশ।

অভিযোগ রয়েছে কানা শামীমের মদদ দাতা লম্বু মোশাররফ এলাকা ছাড়া হওয়ার পর ইউসুফ হোসেন ওরফে পাঠা ইউসুফের সঙ্গে মিলেছে এই কানা শামীম। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে কোনো বাসা-বাড়িতে বেশিদিন থাকে না সে। বারবার ঠিকানাও পরিবর্তন করে। ফলে পুলিশ তাকে ধরতে চাইলেও খুঁজে পায় না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুলিশের চোখ এড়িয়ে আত্মগোপনে থাকে ঢাকা উদ্যানের এই সন্ত্রাসী শামীম আহমেদ।

বিজ্ঞাপন

পুলিশ জানিয়েছে, কানা শামীমের অপহরণ, ছিনতাই, ডাকাতি ও মাদক কারবারী নিয়ন্ত্রণে তার রয়েছে বিশাল বাহিনী। বিশেষ করে ঢাকা উদ্যানের বেড়িবাঁধ ঢাল থেকে ঢাকা উদ্যান হাউজিং, নবীনগর হাউজিং, চন্দ্রিমা হাউজিং, নবোদয় হাউজিং, শেখেরটেক এলাকায় মাদক বিক্রিতে তৎপর তার লোকজন। এ চক্রের সদস্যরা দিনের বেলায় ছোট-ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে ছিনতাই করে। আবার রাত হলে সংঘবদ্ধ হয়ে ডাকাতি করে। ছিনতাই কাজে ব্যবহার করে মোটরসাইকেল ও মাইক্রোবাস।

এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, নিরীহ সাধারণ মানুষকে তুলে নিয়ে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, স্বর্ণালঙ্কার, ভ্যানিটি ব্যাগ, টাকা, মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, কাভার্ড ভ্যানসহ বিভিন্ন দ্রব্য লুট করা ছাড়াও আদায় করে মুক্তিপণ। রাতের বেলা দুই বা ততোধিক দল একত্র হয়ে নির্দিষ্ট ফ্ল্যাটে বা ফাঁকা বাড়িতে গ্রিল কেটে ও তালা ভেঙে লুটপাট চালায় কানা শামীমের দল। এ নিয়ে মোহাম্মদপুর, আদাবর ও সাভার থানায় একাধিক অভিযোগ রয়েছে কানা শামীমের বিরুদ্ধে।

সাভার থানায় দায়ের করা একটি মামলার খুনের আসামি শামীম আহমেদ ওরফে কানা শামীম। সেই মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকায় অভিযান চালিয়ে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে কারাগারেও পাঠায়। এছাড়া ভুক্তভোগী বেশ কয়েকজন জিডিও করেছেন।

সম্প্রতি ঢাকা উদ্যান এলাকার এক ব্যবসায়ীকে মোবাইলে খুনের হুমকি দেয় এই কানা শামীম। আতঙ্কে ওই ব্যবসায়ী মোহাম্মদপুর থানায় জিডিও করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যবসায়ী সারাবাংলাকে বলেন, ‘শুধু আমি নই, আমার মতো আরেক অনেককে হুমকি দিয়েছে কানা শামীম। সে কাউকে তোয়াক্কা করে না। র‌্যাব-পুলিশকেও কোনো ভয় করেন না। আইনকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখায় কানা শামীম। যার ফলে সবাইকে সে হুমকি ধমকি দেয়।’

ঢাকা উদ্যানের ৬ নম্বর রোডের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম সারাবাংলাকে জানান, শামীম আহমেদের বিরুদ্ধে সাভার থানায় হত্যা মামলা রয়েছে। কানা শামীম ঢাকা উদ্যানে নদীর ওপারে আকাশলীনা হাউজিংয়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মিরাজুল ইসলাম রাজু নামে এক যুবককে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে। এই মামলার বাদী রাজুর বড় ভাই জামাল আহমেদ।

কানা শামীমের সহযোগী ইউসুফ ওরফে ‘পাঠা ইউসুফ’ও এসব অপকর্মের সাথে জড়িত বলে জানিয়েছে ঢাকা উদ্যানের একাধিক ব্যবসায়ী। ঢাকা উদ্যান এলাকায় জমি কেনা বেচা করেন আব্দুর রহমান। তিনি বলেন, ‘কানা শামীম বাহিনীর অত্যাচারে কেউ এখানে শান্তিতে নেই। তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।’

কানা শামীমের সহযোগী ইউসুফ ওরফে ‘পাঠা ইউসুফ’ এ বিষয়ে সারাবাংলাকে বলেন, ‘কানা শামীমকে আমি চিনি। তবে তার সঙ্গে কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত নই। আমি একটি হাউজিং কোম্পানিতে এখন চাকরি করি। রাজু হত্যা মামলার আসামি কানা শামীম। কানা শামীম ও আরও দুইজন মিলে রাজুকে খুন করেছে।’

আকাশলীনা হাউজিং প্রকল্পের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান বলেন, ‘খুন হওয়া রাজু তার কর্মচারী ছিল। কানা শামীম তাকে গুলি করে হত্যা করে। রাজুর ভাই জামাল আহমেদ হত্যা মামলা করে। সেই মামলা এখনও চলছে।’

কানা শামীমের বিষয়ে ঢাকা উদ্যানের বিট ইনচার্জ ও মোহাম্মদপুর থানার এসআই বুলবুল বলেন, ‘কানা শামীম ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি। এ কারণে তাকে একবার গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে খুনের মামলাসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে। ইউসুফের সঙ্গে মিলে কানা শামীম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘ছিনতাইয়ের পাশাপাশি নানা অপরাধে জড়িত এই শামীম। আমরা তাকে ধরতে অভিযান চালিয়েছি। কিন্তু আমাদের কাছে খবর আছে সে পুলিশের হাত থেকে বাঁচার জন্য এখন নদীর ওপারে থাকে। ওখান থেকে এসে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। তাকে দেখামাত্রই গ্রেফতার করা হবে।’

কানা শামীম ঢাকা উদ্যান মোহাম্মদপুর রাজু খুন সন্ত্রাসী শামিম

বিজ্ঞাপন

লস অ্যাঞ্জেলসে দাবানল, নিহত ৫
৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:৪৩

২৪ ম্যাচ পর হারল লিভারপুল
৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:৩১

সাভারে তিন গাড়িতে আগুন, নিহত ৪
৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:০৮

আরো

সম্পর্কিত খবর