স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ‘অপ্রাপ্তি’র বিবরণ পুলিশ কর্মকর্তাদের
৭ জানুয়ারি ২০২০ ২৩:২৫ | আপডেট: ৮ জানুয়ারি ২০২০ ০১:১৭
ঢাকা: সাংগঠনিক কাঠামো ও কার্যক্রম শক্তিশালী করতে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পুলিশের পদোন্নতি না হওয়া, মামলার জট বৃদ্ধি, পর্যাপ্ত যানবাহন না থাকাসহ বিভিন্ন ‘অপ্রাপ্তি’র বিবরণ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। জেলার আইনশৃঙ্খলা রিভিউ কমিটির কার্যক্রম ও মাদক সংক্রান্ত কমিটিতে পুলিশের উপযুক্ত অবস্থান না থাকার কারণে ‘অসন্তষ্টি’ও জানিয়েছেন তারা। পুলিশ কর্মকর্তারা বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে পুলিশকে আরও গতিশীল সংস্থায় পরিণত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার দাবি জানান।
পুলিশ কর্মকর্তাদের অপ্রাপ্তি-অসন্তোষের এই বিবরণ মন দিয়ে শুনেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি জানিয়েছেন, সবগুলো সমস্যা সমাধান করতেই তিনি সচেষ্ট।
জবাবদিহিতার জন্য প্রস্তুত আছে পুলিশ: স্বরাষ্টমন্ত্রী
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামালের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন পুলিশ কর্মকর্তারা। সভায় ১০ এসপিসহ ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের ১৯ পুলিশ কর্মকর্তা নানা বিষয়ে কথা বলেন।
এ সময় র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ বলেন, মানুষ আদালতের বারান্দায় ঘোরে, বছরের পর বছর মামলা ঝুলে থাকে। পুলিশের পক্ষ থেকে যথাসময়ে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হলেও মামলা ঝুলে থাকায় জনমনে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এর দায়ও পুলিশের ওপরই বর্তায়। দ্রুত নিষ্পত্তির মাধ্যমে মামলাজট নিষ্পত্তি করা দরকার। এজন্য আইন মন্ত্রণায়ের সঙ্গে সমন্বয় থাকা জরুরি।
তিনি আরও বলেন, মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য দরকার প্রসিকিউশন ও জুডিশিয়ারি। এ দু’টির কোনোটিই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নাই। তাহলে মামলা জট কমাতে রিভিউ কমিটির কাজটা কী? একজন ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিদিন ৩০০ মামলার শুনানি দেন। কিন্তু একজন জজের পক্ষে তা হচ্ছে?
র্যাব ডিজি বলেন, একেকটি মামলা নিষ্পত্তি হতে সময় লাগে ১২ থেকে ১৫ বছর। সেই মামলার আলামত কোথায় থাকবে? নিয়ম অনুযায়ী এসব আদালত তার মালখানায় মজুত রাখবে। কিন্তু কয়টি কোর্টে মালখানা আছে? এক লাখ মামলার দুইটি করে পৃষ্ঠা হলেও তো ২ লাখ আলামত হয়ে যায়।
র্যাব ডিজি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পুলিশ হচ্ছে বাংলাদেশে ন্যাশনাল শক অ্যাবজরভার। যত দোষ পুলিশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু কাজের কাজটা আসলে কারা করছে? আসলে গোড়ায় হাত না দিয়ে কমিটির পর কমিটি বানিয়ে কোনো লাভ হবে না।
র্যাব ডিজি বলেন, পুলিশ হচ্ছে বেস্ট ল অ্যান্ড এজেন্সি ইন কান্ট্রি। যা বলবেন তাই করবে। কিন্তু পুলিশের ফোর্স গাড়ি কম। অ্যাডিশনাল এসপি হচ্ছেন অপারেশনাল ফোর্স। অথচ তার কোনো গাড়ি নেই। তাহলে তিনি ডিউটি কিভাবে করবেন? তিনি কি তবে বাবার জমি বিক্রি করে ডিউটি করবেন? তাকে দায়িত্বই দেওয়া হয়েছে ডিউটি করার জন্য। কিন্তু গাড়ি ছাড়া ডিউটি কিভাবে করবেন? একই পদমর্যাদার ও কম পদমর্যাদার অন্যরা যদি গাড়ি পায়, তবে পুলিশ কেন পাবে না? আমাদের বাজেট হচ্ছে ৪ লাখ কোটি টাকা। র্যাব ২০০৪ সালে যে গাড়ি ব্যবহার করছে, সেই গাড়ি এখনো চলছে। অথচ এখন ২০২০। যত দেবেন, কাজের এফিশিয়েন্সি তত বাড়বে। দেশের স্বার্থে যখন যা বলবেন, পুলিশ তা করবে। আশা করছি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এ বিষয়গুলো দেখবে।
এ সময় আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, পদোন্নতির ক্ষেত্রে যতে দিন যাচ্ছে পুলিশ তত পিছিয়ে যাচ্ছে। আগে ২৪ বছরে অ্যাডিশনাল আিইজিপি হতে পারতেন, কিন্তু এখন ৩০ বছরেও হতে পারেন না। আমি কিন্তু ২১ বছর বয়সে অ্যাডিশনাল আইজিপি হয়েছি। আমাদের সামনে এখন কী অবস্থাটা দাঁড়াচ্ছে? ছয়শ জন এসপি হয়ে গিয়েছেন। এর মধ্যে অ্যাডিশনাল ডিআইজি হবে মাত্র ১০৭ জন। বাকিরা কেউ হতে পারবেন না। তারপরে ডিআইজি ৬৭ জন। অর্ধেকও ডিআইজি হতে পারবেন না। অ্যাডিশনাল আিইজি হচ্ছেন ১৭ জন। এ অবস্থার উত্তরণ না হলে তো যে ব্যাচগুলো আসছে, তারা এসপি’ই হতে পারবে না। কমিটি গঠন করে সমস্যাগুলো উত্তরণের ব্যবস্থা করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
ডিজি র্যাবের বক্তব্যের জের ধরে আইজিপি বলেন, ৩৫ লাখ মামলা কেন জমে আছে? আইন মন্ত্রণালয়কে যদি দায়িত্ব দেওয়া যায়, তাহলে ঠিকমতো সমাধান করতে পারবেন। কিন্তু যে রিভিউ কমিটি গঠন করা হয়েছে, এসপি ও ডিসির তো ৩৫ লাখ মামলা কমানোর কোনো সুযোগ নেই।
অপারেশনাল গাড়ির বিষয়ে আইজিপি বলেন, আগে চার জন ফোর্স নিয়ে অ্যাডিশনাল এসপি যেতে পারতেন। এখন যে গাড়ি দেওয়া হচ্ছে, তা অপারেশনাল গাড়ি নয়। এখানে একজনের বেশি বসার অবস্থা থাকে না। আগের মতো অপারেশনাল গাড়ি সরবরাহের অনুরোধ জানান আইজিপি।
মাদক সংক্রান্ত কমিটিতে আইজিপি নেই, বিভাগীয় পর্যায়ে ডিআইজি তিন নম্বরে। জেলা পর্যায়েও একই অবস্থা। এ বিষয়েও সমাধান দাবি করেন তিনি।
সিআইডির ডিআইজি শাহ আলম ফৌজদারি মামলায় যথাযথ সমন্বয়ের জন্য পুলিশের হাতে প্রসিকিউশন ফিরিয়ে আনার দাবি জানান। মেট্রোপলিটন থানাগুলোতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অফিসার ইনচার্জ হিসেবেও নিয়োগের অনুরোধ জানান তিনি।
অ্যান্টিটেরোরিজম ইউনিটের প্রধান আবুল কাসেম ইউনিটের জায়গার জন্য মন্ত্রণালয়ের পাঠানো প্রস্তাবটি দ্রুত অনুমোদনের অনুরোধ জানান। সেই সঙ্গে প্রতিটি জেলায় মাদকসেবীদের জন্য বেসরকারি নিরাময় কেন্দ্রের পাশাপাশি সরকারি নিরাময় কেন্দ্র স্থাপন, সব স্টেকহোল্ডারকে নিয়ে জঙ্গিদের ডির্যাডিকালাইজেশন করার ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানান তিনি।
অপ্রাপ্তি আইজিপি টপ নিউজ পুলিশ কর্মকর্তা র্যাব ডিজি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ক্ষোভ