‘সুসংগঠিত দল সরকারের জন্য বিরাট শক্তি’
৩ জানুয়ারি ২০২০ ১৪:০৯ | আপডেট: ৩ জানুয়ারি ২০২০ ১৬:২১
ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, একটা সরকার তখনই সফলভাবে কাজ করতে পারে যখন তার পেছনে দল সুসংগঠিত থাকে। সুসংগঠিত দল হচ্ছে একটা সরকারের জন্য বিরাট শক্তি। এই শক্তিই সব চেয়ে বেশি কাজে লাগে। যে কারণে সংগঠনের ওপর সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেই।
শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে র আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথসভার সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শুরুতেই দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের প্রতি যৌথসভা উৎসর্গ করেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ইতিহাস আর বাংলাদেশের ইতিহাস ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালে মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করে দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বভার নিয়ে এই সংগঠনকে তিনি সুসংগঠিত করার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।’
আরও পড়ুন: রাজনীতির স্মার্টনেস আওয়ামী লীগই দেখিয়েছে: শেখ হাসিনা
তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণত মানুষ দল ছেড়ে দেয় মন্ত্রিত্বের লোভে। আর জাতির পিতা মন্ত্রিত্ব ছেড়েছিলেন সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য। কারণ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী তিনি আওয়ামী লীগ ছেড়ে চলে গিয়ে আরেকটি দল গঠন করেছিলেন। তখন খুব প্রয়োজন ছিল দলকে সুসংগঠিত করা।’
আওয়ামী লীগের এই ভাঙনের পরের বছর ১৯৫৮ সালে মার্শাল ল জারি হয়- সে কথাও উল্লেখ করেন তিনি। জাতির পিতার সাংগঠনিক নেতৃত্বের দূরদর্শিতার কথা তুলে ধরে তার কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘তার এই যে দূরদর্শিতা, নেতৃত্ব এবং সংগঠনকে সুসংগঠিত করা; যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছিলেন বলেই আমরা আজ স্বাধীন দেশ পেয়েছি। জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছি।’
স্বাধীনতা পরবর্তী জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করার ঘটনা তুলে ধরে ‘৭৫ পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর নেমে আসা অকথ্য অত্যাচার নির্যাতনের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এই অত্যাচার-নির্যাতনের মধ্য দিয়েও কিন্তু আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে পারেনি। উদ্দেশ্যই ছিল আওয়ামী লীগকে শেষ করে দেওয়া। ১৯৯৬ সালে আমরা যখন সরকারে এসে জনগণের জন্য যখন কাজ শুরু করতে শুরু করলাম এবং তার শুভফল জনগণ পেতে শুরু করল, তার পূর্বে আওয়ামী লীগের নামে অপবাদ ছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশ বেঁচে দেবে। কেউ কেউ বলেছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মসজিদে উলুধ্বনি শোনা যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তখন নানা ধরনের অপপ্রচার ছড়ানো হতো। দুভার্গ্যবশত, তখন ওইভাবে প্রতিবাদ করা যায়নি। তখন একটা মাত্র টেলিভিশন। সব সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা থেকে বিভিন্ন জায়গায় এই অপপ্রচারগুলো এমনভাবে প্রচার করা হতো যে, আমাদের জন্য তখন সেগুলো মোকাবিলা করা কঠিন ছিল।’
‘তারপরও আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মী এই প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে ৭ই মার্চের ভাষণ, বাংলাদেশের ইতিহাস ও জয় বাংলা স্লোগানকে মানুষের সামনে তুলে ধরে ইতিহাসের বিকৃতিকে ঠেকানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অনেক ত্যাগের বিনিময়েই কিন্তু এই সংগঠনকে ধরে রেখেছে এবং এটা করতে যেয়ে বহু পরিবার একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছে। কত যে নির্যাতনের ইতিহাস, সেটা হয়ত হিসাব করে বলা যাবে না। সেই প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়েই কিন্তু আবারও আমরা সরকারে আসতে পেরেছি।’- বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি আরও বলেন, ‘তারপর ২০০৯ সালে জনগণ ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছে। এরপর ক্ষমতায় ১০ বছর পেরিয়ে ১১ বছর পূর্ণ হলো। আজ বলতে পারি, আমরা মানুষের আস্থা-বিশ্বাস-সমর্থন পেয়েছি। এখন মানুষ জানে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নয়ন হয়। বাংলাদেশকে আর কেউ তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ বলতে পারবে না। এখন বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে সারাবিশ্বে মর্যাদা পেয়েছে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিবার থেকে উঠে এসেছি। ছোটবেলা থেকেই রাজনীতি করতাম। কিন্তু দলের দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথম কাজ ছিল দলকে সুসংগঠিত করা। অনেকবার দল ভেঙেছে, আবার নতুন করে গড়তে হয়েছে সব। মার্শাল ল, ইমার্জেন্সি- এগুলোও মোকাবিলা করতে হয়েছে। কিন্তু সবসময় আমাদের তৃণমূল সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে সংগঠনককে সবসময় ধরে রেখেছে।’
তৃণমল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত হলে সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে বিরাট সহায়ক শক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখে বলে দাবি করেন শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা তিন বছর মেয়াদী কমিটি করেছি। এখন লোকসংখ্যা বেড়েছে। আমাদের জেলা বেড়ে গেছে। আমাদের কার্যপরিধি বেড়ে গেছে। যেসব জেলাগুলোর সম্মেলন করা দরকার তা আমরা করতে পারিনি। অনেক জায়গায় সময় দিয়ে তা আবার স্থগিত করতে হয়েছে। কারণ ডিসেম্বর মাসে আমাদের রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি থাকে, দলীয় কর্মসূচি থাকে, সবকিছু মিলিয়ে আমাদের সময় ছিল না। তাই এখন পরিকল্পনা নিয়ে যেসব জেলার মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি আছে সেগুলোর কাউন্সিল করে শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।’
২১তম জাতীয় সম্মেলনে সফলভাবে সম্পন্ন করার প্রসঙ্গ তুলে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এটা আমাদের আওয়ামী লীগ অফিস। আমরা বিল্ডিংটাও তৈরি করেছি। কাজেই আমি চাইছি যে, আমাদের প্রথম সভা নিজেদের অফিসেই শুরু করব। এখানে আমরা করতে পারি। তবে এখানে সমস্যা হল যে, এই এলাকায় বিভিন্ন অফিস রয়েছে, তারপর অনেক হকাররা থাকে। বিভিন্ন জীবন-জীবিকার লোক থাকে। আমি এলে সিকিউরিটির কারণে তাদের এই জীবন-জীবিকা ব্যহত হয়। সেজন্য ছুটির দিন শুক্রবার সভার সময় বের করেছি। আমরা এখানে শুরু করে দিচ্ছি। পরবর্তী সময়ে মুলতবি করে আরেকটা তারিখ ও সময়টা ঠিক করে সভাটা করব।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে যৌথসভায় দলটির কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের প্রায় সকল সদস্য উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে এ সভা শুরু হয়ে কিছুক্ষণ চলার পর মূলতবি ঘোষণা করা হয়। সভা শেষে আওয়ামী লীগের দফতার সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া জানান, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম যৌথসভা আগামীকাল শনিবার (৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। শনিবার ফের ৬টায় গণভবনে সভা শুরু হবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি টপ নিউজ শক্তিশালী শেখ হাসিনা সরকার সুসংগঠিত দল