ডোনাল্ড ট্রাম্পের ১২ মাসে ১২ মিথ্যা
১ জানুয়ারি ২০২০ ১২:০৩
মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে জনমতকে প্রভাবিত করার অভিযোগে বহুদিন ধরেই সমালোচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০১৯ সালে তিনি ২৭০০ মিথ্যা বক্তব্য দিয়েছেন বলে জানিয়েছে সিএনএন। বুধবার (১ জানুয়ারি) সিএনএনের এক প্রতিবেদনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ১২ মাসে ১২টি প্রধান মিথ্যার কথা উল্লেখ করেছে।
জানুয়ারি
২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসের ১৪ তারিখে আমেরিকান ফার্ম ব্যুরো ফেডারেশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ট্রাম্প তার নিজের মেক্সিকো প্রাচীরতত্ত্বের ব্যাপারে জনসমর্থন বাড়াতে উপস্থিত দর্শক স্রোতাদের একটি মিথ্যা ঘটনার উদ্ধৃতিতে দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, মেক্সিকো থেকে অনুপ্রবেশকারীরা এসে মার্কিন নারীদের ধরে বেঁধে গাড়ির পেছনে অপহরণ করে নিয়ে চলে যাচ্ছে, কিম্যু আমরা কিছুই করতে পারছি না। অথচ মেক্সিকো সীমান্তে পরিকল্পনানুসারে দেয়াল নির্মাণ করা হলে এই ঘটনা ঘটতো না।
এখানে, নারীদের অপহরণ হওয়া নিয়ে ট্রাম্পের বক্তব্যটি মিথ্যা ও মনগড়া।
ফেব্রুয়ারি
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখে নর্থ ক্যারোলিনা নির্বাচন বোর্ড সেখানকার নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগের তদন্ত করে নাইন্থ ডিস্ট্রিক্টে পুনরায় নির্বাচন আয়োজনের নির্দেশনা দেন। ২২ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিকরা ট্রাম্পের কাছে নির্বাচনি জালিয়াতির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে ভোট জাল্যাতির একটি মিথ্যা ঘটনার কথা সাংবাদিকদের জানিয়ে দেন।
এখানে, প্রকৃত ভোট জালিয়াতির ঘটনাটি ঘটেছিল নর্থ ক্যারোলিনার নাইন্থ ডিস্ট্রিক্টে।
মার্চ
২০১৯ সালের মার্চ মাসের ২ তারিখে কনসারভেটিভ পলিটিকাল একশন কনফারেন্সে উপস্থিত হয়ে ট্রাম্প বললেন, তিন বছর আগে একবার তিনি ২৫ হাজার লোকের সামনে মজা করে বলেছিলেন, ‘রাশিয়া আসো এসে আমাদের হিলারি ক্লিনটনের ইমেইল গুলো পাইয়ে দাও’। কিন্তু সিএনএনসহ অন্যান্য সংবাদমাধ্যম তার সেই মজার অন্তর্নিহিত অর্থ না বুঝেই তার রাশিয়ার কাছে সাহয্য চেয়ে করা কৌতুককেই সিরিয়াস হিসেবে সামনে নিয়ে আসে।
এখানে, মোটেও ২৫ হাজার লোকের সামনে হাস্যরস করেন নি ট্রাম্প। ২০১৬ সালের একটি প্রেস কনফারেন্সে বেশ শক্ত মুখ করেই হিলারি ক্লিনটনের ইমেইলের ব্যাপারে রাশিয়ার সাহায্য চেয়েছিলেন তিনি।
এপ্রিল
২০১৯ সালের এপ্রিলের ২ তারিখে ন্যাশনাল রিপাবলিকান কংগ্রেসনাল কমিটির তহবিল সংগ্রহ অভিযানে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আপনার বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে যদি উইন্ডমিল থাকে, তাহলে আপনার বাড়ির মূল্য ৭৫ শতাংশ কমে যেতে পারে এবং তারা জানিয়েছে, উইন্ডমিল থেকে সৃষ্ট শব্দের কারণে আপনার ক্যানসার হতে পারে।
এখানে, তারা বলতে ডোনাল্ড ট্রাম্প কাদের বরাত ব্যবহার করেছেন, সে ব্যাপারে তিনি কিছু জানাতে পারেনি।
মে
২০১৯ সালের মে মাসের ৩০ তারিখে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, তিনিই একমাত্র ব্যক্তি হিসবে ২০১৮ সালের ভেটেরান চয়েসে উত্তীর্ণ হয়েছিলে। তিনি বলেছিলেন, ‘জন ম্যাককেইন কখনোই ভেটেরানদের সমর্থন পান নি। তার সমর্থন কেবল পেয়েছি আমি’।
এখানে, একই সাথে দুইটি মিথ্যা। ২০১৪ সালের সমর্থন রচিয়তাদের মধ্যে একজন জন ম্যাককেইন। ২০১৮ সালে ট্রাম্পের পাস করা আইনটির নাম ছিল ভিএ মিশন অ্যাক্ট ।
জুন
২০১৯ সালে জুন মাসের ২৫ তারিখ ট্রাম্প সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, উত্তর কোরিয়ার সাথে কূটনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নের অংশ হিসেবে তার সরকার ইতোমধ্যেই কোরিয়ার উপসাগরীয় যুদ্ধে হত্যা করা কিছু মার্কিন সৈন্যের দেহাবশেষ যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে এনেছে।
এখানে, বাস্তবতা হলো ওই মার্কিন সৈন্যদের দেহাবশেষ এখনো তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়নি। প্রক্রিয়া চলছে ।
জুলাই
২০১৯ সালের জুলাই মাসের ১৭ তারিখে নর্থ ক্যারোলিনার একটি পদযাত্রা থেকে ট্রাম্প বলেন, ইলহান ওমর নামের ওই মুসলিম রাজনীতিবিদ যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ এর সন্ত্রাসী হামলার সময় নেচে ও গান গেয়ে উদযাপন করেছিলেন।
এখানে, ইলহান ওমর সম্পর্কে যে মন্তব্য করা হয়েছে তা মিথ্যা।
আগষ্ট
ট্রাম্প চীনের সাথে বাণিজ্যের ব্যাপারে মিথ্যাচার করেন আগষ্টের ১৮ তারিখ। তিনি সাংবাদিকিদের জানাআন, চীনে মার্কিন পন্য ধুকতে উচ্চ শুল্ক দিতে হচ্ছে না, উলটো চীনা পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে শুল্ক দিতে হচ্ছে ১০০ গুণেরও বেশি।
এই মিথ্যা তথ্য দিয়ে মোট ৪৯ বার তিনি জনগণকে বিভ্রান্ত করেছেন। শুধুমাত্র আগষ্টেই তিনি ২০ বার এই মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করেছেন।
সেপ্টেম্বর
যুক্তরাষ্ট্রে ঘূর্ণিঝড় ডোরিয়ান আঘাত হানার সময় মোট ১২ বার অ্যালাবামা ও ডোরিয়ানের আঘাত হানা সম্পর্কে ভুল ও বানোয়াট তথ্য টুইট করে জনগণকে বিভ্রান্ত করেছেন ট্রাম্প। এমনকি তিনি তার টুইটের সাথে অ্যালাবামার যে ম্যাপটি সংযুক্ত করেছিলেন তাও ভুল।
অক্টোবর
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে ফোন করে হুমকি ধামকি দিয়ে নিজের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ জো বাইডেনকে দমানোর জন্য তিনি যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তার প্রেক্ষিতেই নির্বাহী ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমানোর অভিযোগে প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হয়েছেন ট্রাম্প। কিন্তু ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৪৬ বার এই ঘটনায় অভিযোগকারী হুইসেলব্লোয়ারের ব্যাপারে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মিথ্যা তথ্য দিয়ে তিনি ওই হুইসেল্বলোয়ারের বক্তব্য ভিত্তিহীন তা প্রমাণ করতে চেয়েছেন সবসময়। কিন্তু, শেষরক্ষা হয়নি। এখন, সিনেট ট্রায়ালের অপেক্ষায় রয়েছে তার অভিশংসন তদন্ত।
নভেম্বর
সিরিয়া থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার করা নিয়ে নভেম্বরেই ২২ বার মিথ্যাচার করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ডিসেম্বর
ডোনাল্ড ট্রাম্প পুরাতন ও নতুন ডিশওয়াশারদের মধ্যে একটি তুলনামূলক মিথ্যাচার করে বলেন, আগের দিনের ডিশওয়াশারদের চেয়ে বর্তমান যুগের ডিশওয়াশাররা বেশি পরিমাণ পানি ও বিদ্যুৎ খরচ করে থাকে।
যদিও, এই বক্তব্যের ব্যাপারে তিনি কোনো সূত্র উল্লেখ করতে পারেননি।