জেএসসি: পাহাড়ের দুই জেলার কারণে পেছনে চট্টগ্রাম
৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৫:৫২ | আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৬:৫৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো: জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় বিষয়ভিত্তিক পাস, জিপিএ-৫ সহ প্রায় সব সূচকে ভালো ফল এলেও শতকরা হিসেবে গড় পাসের হারে পিছিয়ে আছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড। দেশের ৯টি শিক্ষাবোর্ডের মধ্যে ৭টিই চট্টগ্রামকে পেছনে ফেলেছে। শুধুমাত্র ঢাকা শিক্ষাবোর্ডকে টপকাতে পেরেছে চট্টগ্রাম। গড় পাসের হারে তুলনামূলক পিছিয়ে থাকা নিয়ে হতাশা আছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তাদের মধ্যে। তারা বলেছেন, পাহাড়ের দুই জেলার পরীক্ষার্থীরা আশানুরূপ ভাল ফল না করায় পিছিয়ে গেছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে এবার পাসের হার ৮২ দশমিক ৯৩ শতাংশ। গত দুই বছরের চেয়ে এবার পাসের হার কিছুটা বেড়েছে। ২০১৭ ও ২০১৮ সালে পাসের হার ছিল যথাক্রমে ৮১ দশমিক ১৭ ও ৮১ দশমিক ৫২ শতাংশ। এর আগের দুই বছরে পাসের হার অবশ্য এর চেয়েও ভালো ছিল। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে পাসের হার ছিল যথাক্রমে ৮৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ ও ৯০ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
২০১৯ সালে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডে পাস করেছে ৮২ দশমিক ৭২ শতাংশ পরীক্ষার্থী, যা সব বোর্ডের চেয়ে কম। রাজশাহীতে ৯৪ দশমিক ১০, কুমিল্লায় ৮৮ দশমিক ৮০, যশোরে ৯১ দশমিক ৮, বরিশালে ৯৭ দশমিক ৫, সিলেটে ৯২ দশমিক ৭৯, দিনাজপুরে ৮৩ দশমিক ৯২ এবং ময়মনসিংহে ৮৭ দশমিক ২১ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছে।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে জেএসসি পরীক্ষার ফলাফল তুলে ধরেন চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ।
সার্বিক ফলাফলের মধ্যে পাসের হার সন্তোষজনক নয় উল্লেখ করে নারায়ণ চন্দ্র নাথ বলেন, ‘এই ফলাফলে আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয়। পুরোপুরি অসন্তুষ্টও নয়। আমাদের আরও ভালো করতে হবে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চল আছে। এর মধ্যে পার্বত্য অঞ্চলের তিনটি জেলার মধ্যে রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান থেকে সন্তোষজনক ফল আসেনি। এজন্য গড় পাসের হারে চট্টগ্রাম কিছুটা পিছিয়ে গেছে। পাহাড়ে নানা সীমাবদ্ধতা আছে। অনুন্নত, পর্যাপ্ত সুবিধাবঞ্চিত এলাকা। ভালো মানের শিক্ষকেরও অভাব আছে। এখন আমাদের পাহাড়ের দিকে নজর আরও বেশি দিতে হবে।’
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীন জেলাগুলোর মধ্যে মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় ৮৩ দশমিক ২৪ শতাংশ, কক্সবাজারে ৮৪ দশমিক ১০ শতাংশ, রাঙ্গামাটিতে ৭৯ দশমিক ৫০ শতাংশ, খাগড়াছড়িতে ৮০ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং বান্দরবানে ৭৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছে। রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান ছাড়া বাকি সব জেলায় পাসের হার গত বছরের চেয়ে বেড়েছে। ২০১৮ সালে রাঙ্গামাটিতে ৭৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং বান্দরবানে ৮০ দশমিক ০৩ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছিল।
এবার জেএসসিতে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ১২৭৪টি স্কুলের ২ লাখ ৫ হাজার ৮৭১ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে ছাত্র ৯১ হাজার ৭৯ জন আর ছাত্রী ১ লাখ ১৪ হাজার ৭৯২ জন। পাসের হারে বরাবরের মতো ছাত্রীরা ভালো করেছে। ছাত্রী পাস করেছে ৮৩ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ছাত্র পাসের হার ৮২ দশমিক ৭৯ শতাংশ। অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীদের মধ্যে পাস করেছে ১ লাখ ৭০ হাজার ৭৩৪ জন। ফেল করেছে ৩৫ হাজার ১৩৭ জন।
জিপিএ-৫ এর সংখ্যাও গত বছরের চেয়ে বেড়েছে এবং বরাবরের মতো এক্ষেত্রেও এগিয়ে আছে ছাত্রীরা। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬ হাজার ৪১ জন। এর মধ্যে ছাত্র ২৪১৯ এবং ছাত্রী ৩৬২২ জন। ২০১৮ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৫২৩১ জন। ছাত্র ছিল ২০৩০ জন এবং ছাত্রীর সংখ্যা ৩২০১ জন।
জিপিএ- ৫ প্রাপ্তির দিক থেকে ১০টি শীর্ষ স্কুলের মধ্যে আছে যথাক্রমে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজিয়েট স্কুল, ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মহিলা সমিতি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, নৌবাহিনী স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সরকারি মুসলিম হাই স্কুল, নাসিরাবাদ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ।
বিষয়ভিত্তিক ফলাফলে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলোতে পাসের হার ৯০ শতাংশের ওপরে। বাংলায় ৯৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ, ইংরেজিতে ৯১ দশমিক ৫৯ শতাংশ, গণিতে ৯১ দশমিক ৩০ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছে। গণিতে শতভাগ পাস করেছে ২৭৫টি স্কুলের পরীক্ষার্থীরা। ইংরেজি বিষয়ে পাস করেছে ২২২টি স্কুলের সব পরীক্ষার্থী। এছাড়া ধর্মীয় বিষয়, বিজ্ঞান, বাংলাদেশ পরিচিতিসহ আরও কয়েকটি বিষয়ে পাসের হার ৯০ শতাংশের ওপরে।
বিষয়ভিত্তিক ভালো ফলের পরও গড় পাসের হার তেমন না বাড়ার বিষয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ বলেন, ‘অনেকে গণিতে পাস করেছে, কিন্তু ইংরেজিতে গিয়ে ফেল করেছে। কেউ কেউ ইংরেজিতে পাস করলেও গণিতে ফেল করেছে কিংবা ইংরেজি-গণিতে পাস করলেও অন্য বিষয়ে ফেল করেছে। এর প্রভাবও পড়েছে গড় পাসের হারে।’
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীন ১০২ টি স্কুলের শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করেছে। কেউ পাস করেনি এমন কোনো স্কুল নেই। তবে পাসের হার ৫০ শতাংশের নিচে এমন তিনটি স্কুল আছে রাঙ্গামাটিতে। গণিতে ৫০ শতাংশ পরীক্ষার্থী ফেল করেছে এমন ৮টি স্কুল আছে পাহাড়ের তিন জেলায়।