তারা পাকবাহিনী, আমরা কি নাপাক: বঙ্গবীর
২৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৭:০৩ | আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ২৩:১০
ঢাকা: আ স ম আব্দুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের ( জেএসডি) কাউন্সিলে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে ‘পাকবাহিনী’ হিসেবে উল্লেখ করায় চটেছেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম।
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে মহানগর নাট্যমঞ্চে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বঙ্গবীরের নাম ঘোষণার আগে অনুষ্ঠানের সঞ্চালক শহীদ উদ্দীন মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘এবার বক্তব্য দেবেন পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে রণাঙ্গনে যিনি বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন…।’
বক্তৃতা দিতে উঠে বঙ্গবীর বলেন, ‘যিনি ঘোষণা করছেন, আমি তাকে অত্যন্ত স্নেহ করি। আমাকেও তিনি অত্যন্ত ভালবাসেন। ঘোষণা করতে গিয়ে হানাদার বাহিনীকে তিনি পাকবাহিনী বলে উল্লেখ করলেন। এই পাকবাহিনী শোনার আগে যদি আমার মৃত্যু হতো, তাহলে নিজেকে ধন্য মনে করতাম। আমরা এমন একটা জাতি, যারা ত্রিশ লাখ মানুষকে হত্যা করে, দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জত নষ্ট করে, তাদেরকে পাকবাহিনী বলি। আর যারা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করে, ভবিষ্যতে হয়ত তাদেরকে নাপাক বাহিনী বলব। এই হলো আমাদের চেতনা।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে পাকিস্তানিরা পরাজিত হয়েছে যুদ্ধের ময়দানে। সাহিত্যের ময়দানে তারা হারেনি। তাদের অনেক দালাল সাহিত্যিক ছিল। ব্যবসার ময়দানে তারা হারেনি। আজও পাকিস্তানের বড় বড় ব্যবসায়ী বাংলাদেশে আছেন। বাংলাদেশের ১০/১৫টি বড় ব্যবসায়ীকে একত্রিত করলেও পাকিস্তানের ব্যবসায়ীদের সমান হবে না। বাংলাদেশে যে কটা বড় ব্যবসায়ী আছে, তার প্রত্যেকটার সঙ্গে পাকিস্তানি ব্যাবসায়ীর লিংক আছে। আমরা পাকিস্তানের হাত থেকে প্রশাসনিভাবে মুক্ত হয়েছি। কিন্তু তাদের প্রভাব থেকে এখনও মুক্ত হতে পারিনি।’
বঙ্গবীর বলেন, ‘আ স ম আব্দুর রব প্রথম পতাকা তুলেছেন? দ্বিতীয়বার পতাকা তুলেছেন? তৃতীয়বার পতাকা তুলেছেন? না! আ স ম আব্দুর রব পাকিস্তানের মাটিতে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের পতাকা তুলেছেন। আজকে যে পতাকা জেনারেলরা নিরাপদে তোলেন, রাজনৈতিক নেতারা নিরাপদে তোলেন। পাকিস্তানের কামানের সামনে সেই পতাকা তুলতে গেলে তাদের… হয়ে যেত।’
জনগণকে পাশে না পেলে কেউ জয়ী হতে পারবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই বলছি ভোট হয়নি। দেশের সব মানুষ বলছে ভোট হয়নি। তাহলে সাড়ে তিন শ’ জনকে নিয়ে যে পার্লামেন্ট গঠন করা হয়েছে, সেই পার্লামেন্ট অবৈধ।’
‘ভাত খাবার সময় যেমন প্লেট থেকে দুয়েকটা ভাত পড়ে যায়, তেমনি সাড়ে গত নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আটজনকে তারা নির্বাচিত ঘোষণা করেছিল। সেই আটজনও এই সংসদে আছে। যদি সংসদ অবৈধ হয়, তাহলে আপনাদের (জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট) আটজনও অবৈধ। হয় তারা পদত্যাগ করুক ৩০ তারিখের আগেই। না হয় তাদের বহিষ্কার করা হোক। দেখবেন মানুষ আপনাদের পেছনে দাঁড়াবে’— বলেন বঙ্গবীর।
তিনি বলেন, ‘দ্বি-চারিতা করা রাজনীতিতে শুভ কথা নয়। একদিকে থাকতে হবে। সেদিক হচ্ছে মানুষের দিক। মানুষের দিক ছাড়া অন্যদিকে গিয়ে লাভ নেই।’
জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রবের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড আব্দুল মঈন খান, জাতীয় পার্টি (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাঈদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট মোহসীন রশিদ, বিকল্প ধারার মহাসচিব শাহ আহমেদ বাদল, জেএসডির সহ-সভাপতি তানিয়া রব, বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, জেএসডির যুগ্ম-সম্পাদক শহীদ উদ্দীন মাহমুদ স্বপন ও বিকল্প ধারার সভাপতি নুরল আমীন বেপারীসহ অন্যরা।
আ স ম রব জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি টপ নিউজ বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী