সবাইকে বিমানের আন্তর্জাতিক নিয়ম মানতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
২৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৫:৪৭ | আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৫:৫৬
ঢাকা: বিমানের নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টিকে সরকার সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘বিমানবন্দরের নিরাপত্তার নিয়মগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেভাবে আছে, সকল যাত্রীকে সেটা মেনে নিতে হবে। কেউ যদি এতে বাধা দেন ভবিষ্যতে তার বিমানে চড়াই বন্ধ হয়ে যাবে।’
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দিকে আমরা বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছি। আমাদের যারা বিদেশে কাজ করে, যাদের অর্থে আমরা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করি। তারা যখন কর্মস্থল থেকে ফেরে তাদেরকে অনেক সময় হয়রানি করা হয়। যদিও এখন এটা অনেকটা কমে গেছে। তারপরও আমি বলব, তাদের সুবিধাগুলি দেখতে হবে। তাদের যেন কোনোরকম হয়রানি করা না হয়। সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে।’
‘এখন আমরা নিরাপত্তার বিষয়টাতে অনেক গুরুত্ব দিয়েছি। নিরাপত্তার যে নিয়মগুলো আছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, আমাদের সকল যাত্রীকে সেটা মেনে নিতে হবে। আমি স্পষ্ট বলতে চাই, এখানে সংসদ সদস্যরা আছেন, মন্ত্রীরা আছেন, বাহিনী প্রধান বা অন্যান্য ঊর্ধ্বতন অফিসাররাও আছেন। বিদেশে গেলে যেভাবে আপনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়, ঠিক সেইভাবে আমাদের বিমানবন্দরেও করতে হবে। এখানে কেউ কোনো বাধা দিতে পারবেন না। আর যদি কেউ এক্ষেত্রে বাধা দেন, তাহলে ভবিষ্যতে তার বিমানে চড়াই বন্ধ হয়েই যাবে। আপনাদের মনে রাখতে হবে, অন্তত আমি সেটা করব।’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
সবাইকে সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘একটা কথা মনে রাখবেন, আমার তো আর কোনো কাজ নাই। সারাদিন আমি দেশের কাজই করি। কোথায় কি হয় না হয় টুকটাক খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করি। কাজেই কেউ কোনো রকম অনিয়ম ঘটাতে গেলে সঙ্গে সঙ্গে আমার কাছে খবর চলে আসে। এটা সবাইকে মনে রাখতে হবে।’
‘মানুষের ঘামে ভেজা অর্থে ভাগ্য গড়া বরদাশত করা হবে না’
বিমানের নানামুখী সমস্যার কথা তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিমানে খালি টিকিট নাই বা এরকম বহু কিছু হত। আর একসময় আমি ঠাট্টা করে বলতাম, স্বর্ণপ্রসবিণী বিমান হয়ে গেছে আমাদের। বিমানে শুধু সোনার বার’ই পাওয়া যায়। বলতাম ভালই তো, আমাদের স্বর্ণের রিজার্ভ বেড়ে যাচ্ছে। আর তো কিছু হচ্ছে না। এইগুলিও বন্ধ করতে হবে। কারণ বিমানের সুনাম আন্তর্জাতিকভাবে যেন বাড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’
বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিমানের যাত্রীসেবা আরও বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা অন্যান্য এয়ারলাইন্সের সঙ্গে কোড শেয়ারিং করতে পারি, তার মাধ্যমে যেন অনেকগুলি স্টেশনে আমাদের যাত্রী পাঠাতে পারি। সেটাও আমরা ভবিষ্যতে করব, এটা আমাদের চিন্তা রয়েছে।’
বিমান বহরে আজ ‘সোনার তরী’ ও ‘অচিন পাখি’ অন্তর্ভুক্ত করার প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অচিন পাখি’ নামটা অবশ্য আমার ছোট বোন রেহানার দেওয়া। আমি ওকে জিজ্ঞেস করছিলাম কি নাম দেওয়া যায়।
বিমান যোগাযোগের দুরবস্থার কথা তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিমান বহরে সবই ঝরঝরে ছিল, আমার নিজেরই অভিজ্ঞতা আছে। আমি যখন বিমানে চড়তাম ঝরঝর করে পানি পড়ত। তখন তোয়ালে বা টিস্যু দিয়ে বন্ধ করতে হত। ইন্টারটেইনমেন্টের কোনো ব্যবস্থাই ছিল না। আমি কোনো এয়ারলাইন্সের নাম বলব না কারণ সেটা তাদের দোষ না, দোষটা ছিল আমাদের এখানে যারা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে ছিল, তাদেরই দোষে এরকম একটা দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থা ছিল।
১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর থেকে বর্তমানে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন হয়ে বিমানবন্দর থেকে আকাশপথে যোগাযোগ উন্নত করার বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি দেশের আঞ্চলিক বিমানবন্দরগুলোকে নতুন করে চালু করে উন্নত করার বিভিন্ন পদক্ষেপও তুলে ধরেন তিনি।
কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসাবে উন্নীত করা হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্য, পাশ্চাত্য থেকে প্রাচ্যে যত প্লেন যাতায়াত করবে, তাদের একটা হাব হতে পারে কক্সবাজার। সেই কাজও শুরু করা হয়েছে।’
বিমানসেবার মান বাড়াতে মোবাইল অ্যাপ উদ্বোধন করার কথা তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যে অ্যাপটা উদ্বোধন করলাম, এখন আপনি অনলাইনে বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে টিকিট কেনা থেকে শুরু করে সবকিছুই করতে পারবেন। অর্থ্যাৎ আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবস্থা যাত্রীদের সেবার জন্য করে দিচ্ছি।’
আমাদের নিজস্ব কার্গো বিমান খুব প্রয়োজন দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শাহজালালে থার্ড টার্মিনালের সঙ্গে আমাদের আধুনিক কার্গো ভিলেজ হবে। তাতে আমাদের মালামাল পাঠানো থেকে এক্সপোর্ট ব্যবসার অনেক সুযোগ-সুবিধা বাড়বে। তাই ভবিষ্যতে আমরা দুটি কার্গো বিমানও কিনব। কারণ কার্গো বিমান ছাড়া বিমান লাভজনক হবে না।’
যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে বিমানের নিজস্ব ব্যবস্থা থাকা দরকার বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে এটা সম্পূর্ণভাবে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত না বলেও মনে করেন তিনি।