মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলায় কানাডা-নেদারল্যান্ডসের সমর্থন
৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ২৩:০১ | আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৮:৪৯
ঢাকা: রাখাইনে রোহিঙ্গা গণহত্যা ও নিপীড়নের ঘটনায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডের হেগে অবস্থিত জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে (আইসিজে) গাম্বিয়া যে মামলা দায়ের করেছে তাতে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছে কানাডা ও নেদারল্যান্ডস। আইসিজেতে মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) থেকে এই মামলার শুনানি শুরু হবে।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে গাম্বিয়া মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার যে অভিযোগ এনেছে, তাতে কানাডা এবং নেদারল্যান্ডস গাম্বিয়ার প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করছে। রাখাইনে গণহত্যার যে ঘটনা মিয়ানমার ঘটিয়েছে, সেই ঘটনার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কানাডা ও নেদারল্যান্ডস যৌথভাবে কাজ করে যাবে। এই মামলায় গাম্বিয়াকে কানাডা ও নেদারল্যান্ড যৌথভাবে সহায়তা করবে।
যৌথ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দশকের পর দশক ধরে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। গত ২০১৭ সালে রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর অমানবিক নির্যাতন, অত্যাচার, ধর্ষণ, হত্যা, যৌন সহিংসতাসহ তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে ফেলার সাক্ষী এই বিশ্ববাসী। জাতিসংঘের জাতিসংঘের সেনাবাহিনী দ্বারা সংঘটিত এই হত্যাযজ্ঞ এবং জেনোসাইড এবং গণহত্যার তথ্য তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে তুলে ধরেছেন কানাডা এবং এই গণহত্যার বিচার নিশ্চিত এবং দোষীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে বদ্ধপরিকর। এই বিষয়ে এই দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করে যাবে এবং গাম্বিয়াকে সহায়তা আইনি করবে।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালত এক বার্তায় জানিয়েছে, গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলার শুনানি মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) থেকে শুরু হচ্ছে। প্রথমদিন গাম্বিয়া তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করবে। পরদিন বুধবার (১১ ডিসেম্বর) মিয়ানমার বক্তব্য দিবে। তার পরদিন বৃহস্পতিবার (১৩ ডিসেম্বর) প্রথমার্ধে গাম্বিয়া মিয়ানমারের যুক্তি খণ্ডন করবে, দ্বিতীয়ার্ধে মিয়ানমার গাম্বিয়ার যুক্তি খণ্ডন করবে।
সূত্রগুলো জানাচ্ছে, জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতর বিচারকের সংখ্যা ১৫ জন। এই মামলার শুনানি প্রত্যক বিচারকের উপস্থিতিতেই হবে। তিনদিনের টানা শুনানি শেষে আদালত অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিবেন। অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের পর তার বাস্তবায়ন প্রতিবেদন আগামী চারমাসের (অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের তারিখের পরদিন থেকে) মধ্যে গাম্বিয়া ও মিয়ানমার উভয়কেই জানাতে হবে।
মিয়ানমার বিষয়ক কানাডার প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত বব রি এক বার্তায় বলেন, ‘আইসিজে আদালতে শুনানিতে অংশ নিতে এরই মধ্যে হেগে পৌঁছেছি। রাখাইনে ঘটে যাওয়া গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করতে কানাডা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবে। মিয়ানমারের ঘটানো এমন লজ্জাজনক বিষয়ের বিচার নিশ্চিত করতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ায় কানাডার সরকারের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ এবং একই সঙ্গে গর্ববোধ করছি’।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের লক্ষ্য করে অভিযান চালায় দেশটির সেনাবাহিনী। ওই অভিযানে রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যা, ধর্ষণ ও তাদের সম্পদ লুণ্ঠনের অভিযোগ উঠে। অভিযানের মুখে ১১ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত সংলগ্ন বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়। সে সময় মিয়ানমারের সেনাসদস্য, পুলিশ ও বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী রোহিঙ্গাদের নিধনে সরাসরি অংশ নিয়েছে বলে জাতিসংঘের তদন্তে প্রমাণ মিলেছে।