সবাই যেন ন্যায়বিচার ও আইনের আশ্রয় পায়: প্রধানমন্ত্রী
৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ১২:৩৫ | আপডেট: ৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৬:২১
ঢাকা: সবারই ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিচারকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আমি চাই না,আমাদের মতো স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে বছরের পর বছর কেউ অপেক্ষা করুক। সবাই যেন ন্যায়বিচার পায়, আইনের আশ্রয় পায়।’
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আয়োজিত জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলন-২০১৯’ র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
পরে বিচারকদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমি আশা করি, দেশ ও জনগণ এবং সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে আপনারা আপনাদের মেধা, মনন ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করবেন। সবাই যেন ন্যায়বিচার পায়, আইনের আশ্রয় পায়, যেটা আমাদের পবিত্র সংবিধানে আছে।’
১৫ আগস্ট জাতির পিতার খুনীদের বিচার বন্ধ করার লক্ষ্যে ইমডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে তৎকালীন সেনাসমর্থিত স্বৈরশাসক সরকারের সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমি চেষ্টা করেছিলাম, আমার বাবা-মার হত্যা বিচারটা মামলা করতে চাই। আমি মামলা করতে পারিনি। কারণ মামলা করার কোনো অধিকার আমার ছিল না। কারণ খুনীদের বিচার না করে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। তাদেরকে রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। রাষ্ট্রপতি প্রার্থীও করা হয়েছিল কোন খুনিকে। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে এই খুনীদের ভোট চুরি করে জাতীয় সংসদের সদস্য করে বিরোধী দলীয় নেতার চেয়ারেও বসানো হয়েছিল। এমনিভাবে খুনীদের মদদ দিতে দেখেছি।
‘আমি যখন সেই সময় সুপ্রীম কোর্টে গিয়েছি বা কোন অনুষ্ঠানে গেছি, আমার খালি এটাই মনে হয়েছে যে, বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে। কারণ আমরা যারা আপনজন হারিয়েছিলাম, কেউ বিচার পেতাম না, বিচার পাওয়ার অধিকার ছিল না।’
‘আমি সব সময় এটি মনে করি, একটি রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গেলে, আইন সভা বিচার বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ; এই তিনটি অঙ্গ একটি রাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য্য এবং এই তিনটি অঙ্গই চলবে তাদের নিজস্ব আইন দ্বারা, নীতি দ্বারা। এটা ঠিক আবার তিনটি অঙ্গের মধ্যে একটা সমন্বয় থাকতে হবে। যা দেশকে শান্তি ও উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। যেটা একান্তভাবে মানুষের ন্যায় বিচার পাওয়া এবং উন্নয়নের জন্য একান্তভাবে অপরিহার্য বলে মনে করি।
বিচারকদের ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি বাংলা ভাষায় রায় লেখারও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের মামলার রায় লেখা হয় শুধুমাত্র ইংরেজী ভাষায়। তাতে সাধারণ মানুষ যারা হয়ত ইংরেজি ভাল বোঝেও না, তারা সঠিকটা জানতে পারে না, রায়টা কি হল! সেইজন্য ইংরেজিতেও লেখা হোক, সাথে সাথে তার একটা বাংলা থাকা উচিত।
এছাড়া, দেশের উন্নতির প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই, জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তুলতে। আজকে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি, আন্তরিকতার সাথে দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে। ইনশাল্লাহ, এই বাংলাদেশ একদিন জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলবো।
মুজিব বর্ষে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মুজিব বর্ষ ঘোষণা দিয়েছি। তিনি আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তার জীবনের সব কিছু ত্যাগ করেছেন এবং তিনি তো বলেই গেছেন, বাংলাদেশের মানুষকেই বেশি ভালবাসেন। আর সেই পিতার ভালবাসার মানুষগুলির জীবনটা উন্নত হোক, সমৃদ্ধশালী হোক, মানসম্মত হোক, বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের জনগণ মাথা উঁচু করে মর্যাদার সাথে চলবে। সেইভাবেই দেশটাকে আমরা গড়ে তুলতে চাই।
এলক্ষ্যে সবার সহযোগিতা কামনা করে জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য দেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বাগত বক্তব্য দেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব গোলাম সারওয়ার এবং মুন্সিগঞ্জ জেলা সিনিয়র দায়রা জজ।