ব্যক্তি স্বার্থে আদর্শকে ভূলুণ্ঠিত করা যাবে না: রাষ্ট্রপতি
৩০ নভেম্বর ২০১৯ ২০:১২ | আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৯ ২০:২৩
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেছেন, মনে রাখবেন, আপনারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। সাধারণ মানুষ আপনাদেরকে সম্মান ও মর্যাদার উচ্চাসনে দেখতে চায়। তাই ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার জন্য নীতি ও আদর্শের সাথে আপস করবেন না। ব্যক্তি স্বার্থের কাছে আদর্শ যাতে ভূলুণ্ঠিত না হয় সে দায়িত্ব আপনাদেরকেই নিতে হবে।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) বিকেল ৫টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ কামাল স্টেডিয়ামে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাদশ সমাবর্তনে সভাপতির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য শিক্ষকদের উদ্দেশে আরও বলেন, ‘আপনারা রাজনৈতিকভাবেও খুবই সচেতন ব্যক্তি। রাজনৈতিক মতাদর্শ ও চিন্তা-চেতনায় পার্থক্য থাকতেই পারে। কিন্তু এর নেতিবাচক প্রভাব যেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ওপর না পরে তাও নিশ্চিত করতে হবে।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সম্প্রতি গণমাধ্যমে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে যে খবর ও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তা দেখে আচার্য হিসেবে আমাকে মর্মাহত করে। আজকাল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় দেখা যাচ্ছে, শিক্ষকরা প্রশাসনের বিভিন্ন পদ পদবি পাওয়ার লোভে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে ঠিকমতো অংশ না নিয়ে বিভিন্ন লবিংয়ে ব্যস্ত থাকেন। অনেকে আবার নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতেও পিছপা হন না। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক ভুলে গিয়ে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট লেনদেনের সম্পৃক্ত হোন, এটা অত্যন্ত অসম্মানের ও অমর্যাদাকর।’
গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘তোমরা দেশের উচ্চতর মানবসম্পদ। দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ও অগ্রগতি নির্ভর করছে তোমাদের ওপর। তোমাদের তারুণ্য, মেধা ও প্রজ্ঞা হবে দেশের উন্নয়নের প্রধান চালিকাশক্তি। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে একজন গ্র্যাজুয়েট হিসেবে সব সময় সত্য ও ন্যায়কে সমুন্নত রাখবে। নৈতিকতা দিয়ে দুর্নীতি ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে।’
‘তোমরা কখনও ব্যক্তিগত সম্মানবোধ আর নৈতিকতাকে ভূলুণ্ঠিত করবে না। বিবেকের কাছে কখনও পরাজিত হবে না। মনে রাখবে, এদেশের খেটে খাওয়া মানুষ তাদের শ্রম ও ঘামের বিনিময়ে তোমাদের শিক্ষার ব্যায়ভার বহন করছে। তাদের কাছে তোমরা ঋণী। এখন সময় এসেছে সেই ঋণ পরিশোধ করার। তোমরা তোমাদের মেধা, কর্ম ও সততা দিয়ে দেশ ও জনগণের কল্যাণ করতে পারলে এই ঋণ কিছুটা হলেও শোধ হবে।’- বলেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মলয় কুমার ভৌমিকের সঞ্চালনায় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও সমাবর্তন বক্তা ছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রঞ্জন চক্রবর্তী।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহা, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান আল-আরিফ প্রমুখ।
অনুষ্ঠান শেষে বিকেল সাড়ে ৫টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময় রাসিক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, রুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম শেখসহ প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, এবারের সমাবর্তনে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে পিএইচডি, এমফিল, স্নাতকোত্তর, এমবিবিএস, বিডিএস ও ডিভিএম ডিগ্রি অর্জনকারী ৩ হাজার ৪৩১ জন গ্রাজুয়েট অংশ নেন।
আবদুল হামিদ টপ নিউজ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রপতি সমাবর্তন