খেলাপি ঋণ বৃদ্ধিতে নতুন রেকর্ড
২৮ নভেম্বর ২০১৯ ১৭:৫৬ | আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৯ ১৭:৫৮
ঢাকা: চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধিতে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৯ সালের প্রথম নয় মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২২ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বছরের কম সময়ে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধিতে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।
এর আগে ২০১৮ সালে ব্যাংকিং খাতে একবছরে সর্বোচ্চ ১৯ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ বেড়েছিল। চলতি বছরে মাত্র ৯ মাসে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধিতে সে রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য পর্যালোচনা করলে এ চিত্র উঠে আসে।
সূত্র জানায়, চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সব ব্যাংকের এমডি ও চেয়ারম্যানদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বলেছিলেন, আজ থেকে খেলাপি ঋণ আর এক টাকাও বাড়বে না। অর্থমন্ত্রীর এমন ঘোষণার পর চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২২ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা।এর মধ্যে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশে খেলাপি ঋণ ছিল ৯৩ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন: দেশে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা
২০১৯ সালের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ)খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৬ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা। ফলে মার্চ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে অর্থাৎ (মার্চ থেকে জুন) পর্যন্ত খেলাপি ঋণ বাড়ে ১ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা। ফলে জুন শেষে খেলাপি ঋণ হয় ১ লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। সর্বশেষ বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) খেলাপি ঋণ ৩ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা বেড়ে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়।
৬ বছরে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি: ২০১৮ সালে ব্যাংকিং খাতে নতুন করে খেলাপি ঋণ যুক্ত হয়েছে ১৯ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা।এটি ছিল আগের ৫ বছরের মধ্যে একক বছর হিসাবে সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি। এর আগে ২০১৭ সালে ১২ হাজার ২৩১ কোটি টাকা, ২০১৬ সালে ২ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে ২০১৪ ও ২০১৫ সালে খেলাপি ঋণ বাড়ে যথাক্রমে ৯ হাজার ৫৮০ কোটি ও ৯ হাজার ২৫০ কোটি টাকা হয়।
আরও পড়ুন: খেলাপি ঋণ অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ: ডিসিসিআই সভাপতি
খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ। গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে খেলাপি ঋণ বাড়ছে।এর লাগাম টেনে ধরতে না পারলে অর্থনীতির জন্য মহাবিপদ দেখা দিতে পারে।’
তিনি আরো বলেন, ‘যে কোনো মূল্যে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ উদ্ধার করতে হবে। এটা উদ্ধার করতে না পারলে ব্যাংকগুলোর আমানত ও ঋণ দেওয়ার প্রবৃদ্ধি কমে যাবে। যার প্রভাব এরইমধ্যে আর্থিকখাতে পড়তে শুরু করেছে।’
বাংলাদেশের প্রকৃত খেলাপি ঋণ: বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী গত সেপ্টেম্বর পযন্ত দেশে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা হলেও বাস্তবে ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণের বেশি।আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)‘র হিসাবে ব্যাংকিং খাতে প্রকৃত খেলাপি ঋণ ২ লাখ ৪০ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা। অন্যদিকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট ৪০ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা ঋণ অবলোপন করা হয়েছে। এর সঙ্গে গত সাড়ে ছয় বছরের ১ লাখ ২৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং ঋণ পুনর্গঠনের ১৫ হাজার কোটি টাকা ধরা হলে খেলাপি ঋণ দাড়াবে ২ লাখ ৯৬ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা।
খেলাপি ঋণের সহনীয় মাত্রা: আন্তর্জাতিকভাবে খেলাপি ঋণ ২ থেকে ৩ শতাংশ হলে একে সহনীয় বলে ধরে নেওয়া হয়। তার চাইতে বেশি হলে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অন্যদিকে খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশ হলে তাকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়। বাংলাদেশে ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ ১২ শতাংশ। আর আইএমএফ‘র ধরা হলে এর পরিমাণ ২৫ শতাংশের বেশি।
আরও পড়ুন: আগামীতে খেলাপি ঋণ বাড়বে না: অর্থমন্ত্রী
সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে ৫৯টি ব্যাংক রয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি ব্যাংক ৪১টি, রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক ৯টি এবং অবশিষ্ট বাকি ৯টি হলো বিদেশি ব্যাংক। এর মধ্যে ৪০টি বেসরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ৫৪ হাজার ৫৪৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। যা বিতরণ করা ঋণের ৭ দশমিক শূন্য ৪৩ শতাংশ। সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৪ হাজার ৯২২ কোটি টাকা, যা তাদের বিতরণ করা ঋণের ৩১ দশমিক ৫২ শতাংশ। অন্যদিকে সেপ্টেম্বর শেষে বিদেশি ৯ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৯১ কোটি ২৪ লাখ টাকা, যা ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের ৬ দশমিক ১ শতাংশ। আর দুই বিশেষায়িত ব্যাংকের (কৃষি ও রাকাব) খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ৭০০ কোটি ৪১ লাখ টাকা, ব্যাংক দুটির বিতরণ করা ঋণের ১৭ দশমিক ৮১ শতাংশ খেলাপি।