Thursday 09 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ট্রাম্প অভিশংসিত হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু?


২৮ নভেম্বর ২০১৯ ১৩:৩৮ | আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ১০:১৬

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট দেশটির সর্বোচ্চ নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী ও রাষ্ট্রের অভিভাবক। তবে নীতি-নৈতিকতার বরখেলাপ কিংবা দায়িত্বে অবহেলা করলে তাকেও নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতাচ্যুত করার উপায় রয়েছে। এই প্রক্রিয়ার একটি ধাপ ইমপিচমেন্ট বা অভিশংসন।

পশ্চিমা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যেহেতু সুসংহত, তাই খুব গুরুতর কোনো অন্যায় না করলে প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করার নজির নেই। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এর আগের ৪৪ জন মার্কিন প্রেসিডেন্টের মধ্যে মাত্র ২ জনকে প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত করা হয়েছিল। তারা হলেন, প্রেসিডেন্ট আন্দ্রে জনসনকে ১৮৬৮ সালে এবং বিল ক্লিনটনকে ১৯৯৮-৯৯ সালে। তবে তাদের কাউকেই পদচ্যুত করা যায়নি।

বিজ্ঞাপন

মার্কিন রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অভিশংসন কি?

যুক্তরাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থায় ভারসাম্য রাখতে প্রেসিডেন্টকে অপসারণের যে উপায় রয়েছে তাতে মূল ভূমিকা পালন করে মার্কিন কংগ্রেস। যে কয়টি অপরাধের জন্য প্রেসিডেন্টকে অভিশংসিত করা যাবে সেগুলো হলো, ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতা’ ‘ঘুষ গ্রহণ’ ‘বাজে আচরণ’ বা ‘অন্যকোনো গুরুতর কাজ’।

কীভাবে বাস্তবায়িত হয় এই প্রক্রিয়া?

কোনো প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিশংসনের প্রস্তাব উঠলে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ বা হাউজের বিচার বিভাগীয় কমিটি অথবা বিশেষ কমিটি এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করে। শুনানির পর যদি ওই বিষয়ের  সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে হাউজের ৪৩৫ সদস্যের ভোট নেওয়া হয়। শুধুমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের ভিত্তিতে অভিশংসন প্রস্তাব পাস করা যায় হাউজে।

তারপর বিষয়টি গড়ায় ১০০ সদস্য বিশিষ্ট কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে। প্রধান বিচারপতির তত্ত্বাবধানে এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। সিনেটে প্রেসিডেন্টকে পদচ্যুত করার প্রস্তাব পাস হতে হলে দুই-তৃতীয়াংশ সিনেটরের তাতে সমর্থন প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ অন্তত ৬৭ জন সিনেট সদস্য প্রেসিডেন্টকে বিতারণের পক্ষে থাকতে হবে।

বিজ্ঞাপন

এ পর্যন্ত কোনো প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে?

উত্তর হলো, না। অভিশংসনের দোরগোড়ায় আন্দ্রে জনসন ও বিল ক্লিনটনের মধ্যে জনসনের অবস্থাই ছিল সবচেয়ে বাজে। ক্ষমতার অপব্যবহার অভিযোগে হাউজে ডেমোক্র্যাটদলীয় জনসনকে অভিশংসিত করা গেলেও সিনেটে এক ভোটের জন্য তাকে পদচ্যুত করা যায়নি। সে সময়ের সিনেটের ৫৪ সদস্যের ৩৫ জন জনসনের বিপক্ষে ভোট দিলেও তার পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন ১৯ জন। যা দুই-তৃতীয়াংশের শর্ত পূরণ করেনি।

অপরদিকে বিল ক্লিনটন তার ওপর আনা দুটি অভিযোগে সিনেটে উতরে যান (৪৫-৫৫) ও (৫০-৫০) ভোটে। নারী কেলেঙ্কারির জন্য তিনি নিন্দিত হয়েছিলেন। এছাড়া ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির কারণে প্রেসিডেন্ট নিক্সন প্রায় নিশ্চিত অভিশংসিত হওয়ার মুখে ১৯৭৪ সালে পদত্যাগ করেন।

ট্রাম্প কেন অভিশংসনের মুখে পড়ছেন?

২০২০ সালে অনুষ্ঠিত হবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। রিপাবলিকান ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লড়তে পারেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। অভিযোগ উঠেছে, বাইডেনকে হয়রানি করতে বা বিপদে ফেলতে ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির আনুকূল্য চেয়েছেন। তা হচ্ছে ইউক্রেনে ৪ শ’ মিলিয়ন ডলারের সামরিক সাহায্য পাসের বিনিময়ে, জেলেনেস্কি যাতে জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে কথিত দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করে। এ বিষয়ে ফোন কলের কথা ফাঁস হয়েছে।

প্রসঙ্গত জো বাইডেন ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকাকালে তার পুত্র হান্টার বাইডেন ইউক্রেনের একটি প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানির পরিচালনা বোর্ডের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সেখানে তার কিছু কাজ নিয়মবিরোধী বলে প্রশ্ন উঠেছে। জো বাইডেন এবং হান্টার বাইডেনকে তদন্তের সম্মুখীন করতে পারলে ট্রাম্প আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এ বিষয়ে শোরগোল তুলতে পারতেন। আর তার এই চেষ্টাটাই অনৈতিক।

হাউজ বা প্রতিনিধি পরিষদের গোয়েন্দা কমিটির ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রধান অ্যাডাম শিফ যেটাকে আখ্যায়িত করছেন রিচার্ড নিক্সনের ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির চেয়েও গুরুতর।

অভিযোগ নিয়ে প্রেসিডেন্ট কি বলছেন?

হাউজে তার বিরুদ্ধে তদন্তের শুরু থেকে ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, ডেমোক্র্যাটরা তাকে বিপদে ফেলতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসব করছে। যদিও তার জন্য তা তা ভালো হবে। তাকে অভিশংসিত করার চেষ্টা করলে নিশ্চিতভাবে ডেমোক্র্যাটরা আগামী নির্বাচনে হারবে বলে মন্তব্য করেন ট্রাম্প।

ট্রাম্প টুইটারে আরও অভিযোগ করেন, এত কাজ ও সফলতার মাঝে ডেমোক্র্যাটরা ‘উইচ-হান্টকেই’ বেছে নিয়েছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আশা করছেন রিপাবলিকানদের এ বিষয়ে তার পাশে পাবেন। কারণ তার আর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের ফোনালাপে ভুল কিছু ছিল না।

ট্রাম্পের অভিশংসনের ভবিষ্যত কি?

মার্কিন হাউজে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগটি এখন শুনানি পর্যায়ে রয়েছে। হাউজে বর্তমান ৪৩৫ কংগ্রেস সদস্যের মধ্যে ডেমোক্র্যাট সমর্থক ২৩৩ জন, রিপাবলিকান ১৯৭ জন। অর্থ্যাৎ ডেমোক্র্যাটরা এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ।

অপরদিকে সিনেটে এগিয়ে আছে রিপাবলিকানরা। ১০০ সিনেট আসনে রিপাবলিকান সিনেটর ৫৩ জন, ডেমোক্র্যাট ৪৫ জন, আর স্বতন্ত্র ২ জন।

অর্থাৎ ডেমোক্র্যাটরা চাইলে হাউজ বা প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিংশসন প্রস্তাব এনে তা পাস করাতে পারবে। তবে সিনেটে যেহেতু তারা এমনিতেই পিছিয়ে, তাই প্রেসিডেন্টের বিপক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সিনেটরের সমর্থন পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। ২০ জনের বেশি রিপাবলিকান সিনেটর ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অবস্থান করবেন এমনটা প্রায় অসম্ভব।

তথ্যসমূহ আল-জাজিরা ও উইকিপিডিয়া থেকে নেওয়া।

অভিশংসন তদন্ত টপ নিউজ প্রেসিডেন্ট অভিশংসিত হওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন ২০২০