মৌসুম শেষে সরবরাহ কমের অজুহাতে বাড়লো চালের দাম
৯ নভেম্বর ২০১৯ ০৮:৪১ | আপডেট: ৯ নভেম্বর ২০১৯ ০৮:৪৩
ঢাকা: গত ২ মাস ধরে পেঁয়াজের দাম নিয়ে সাধারণ মানুষের যখন নাভিশ্বাস অবস্থা তখন আরেকটি দুঃসংবাদ হয়ে এলো চালের দাম। রাজধানীর খুচরা ও পাইকারি দুই বাজারেই কেজিতে চালের দাম ২ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
রাজধানীর কারওয়ানবাজারের খুচরা বাজারে মিনিকেট ৫০ টাকা, আটাশ ৪০ টাকা ও নাজির ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ৪৫ টাকা, ৩৫ টাকা ও ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কারওয়ানবাজার কিচেন মার্কেটের মায়ের দোয়া স্টোরের কর্মচারী বাবলু বলেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে সব ধরণের চালের দাম ৫ টাকা বেড়েছে।
বরিশাল রাইস মিলের কর্মচারী, হাছান মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, বস্তা প্রতি (৫০ কেজি) চালের দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। প্রতি বস্তা মিনিকেটে দাম বেড়েছে ১৫০ টাকা। আর আতপ চালের বস্তা বেড়েছে ৩০০ টাকা করে।
চাটখিল রাইস এজেন্সীর মালিক বেলাল হোসাইন বলেন, মৌসুম শেষ হয়ে আসায় চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। সামনে নতুন চাল উঠলে তখন দাম কমে যাবে।
মেসার্স হাজী ইসমাইল এন্ড সন্সের মালিক জসিম উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, আমরা এতদিন ২০০০ থেকে ২০৫০ টাকা বস্তাতে চাল বিক্রি করেছি। শুক্রবার যে চাল কিনেছি তা বিক্রি করতে হবে ২১০০ থেকে ২২০০ টাকায়। মিনিকেট এখন ২১০০ থেকে ২২০০ টাকা বস্তাতেও বিক্রি হচ্ছে। আটাশ ১৫০০ থেকে ১৫৫০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা ১৬০০ টাকা বস্তা। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাজারে এখনও কিছু পুরাতন চালানের চাল রয়েছে। তাই দাম কিছুটা কম। নতুন চালানের চালের দাম আরও বাড়বে। এই আড়তদারের অভিযোগ মিলাররা চালের অর্ডার নিচ্ছে না। তাই সরবরাহ না বাড়ায় দাম বাড়াতে হচ্ছে।
হটাৎ করে দাম বাড়ার পেছনে ব্যবসায়ীদের যুক্তি হচ্ছে, মৌসুম শেষ হয়ে আসাই চালের দাম বাড়ার কারণ। তবে কোনো কোনো ব্যবসায়ী মিলারদের কারসাজিকে দায়ী করছেন। আবার মিলাররা বলছেন, সরকার আমন মৌসুমে ধান চাল সংগ্রহের ঘোষণা দেওয়ায় তাদের বাড়তি দামে ধান কিনতে হচ্ছে। ফলে বাজারে এর প্রভাব পড়েছে।
এদিকে, কৃষকের মাঠে এখন আমন ধান রয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, অনেক জমিতেই আমন ধান পাকতে শুরু করেছে। সবমিলিয়ে আমন ধানের নতুন চাল বাজারে উঠবে শিগগিরই।
এদিকে, গেল বোরো মৌসুমে প্রায় ২ কোটি মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছিল। বাম্পার ফলন ও দাম না পেয়ে মাঠেই ধান পুড়িয়ে ফেলেছিল কৃষক। এ ঘটনায় সরকার নড়েচড়ে বসলেও ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে পারেনি। অভিযোগ ছিল, মিলাররা ঠিকমতো ধান কিনছেন না। বাধ্য হয়ে ৫০০ টাকা মণেও ধান বিক্রি করতে হয়েছিল কৃষককে। চাল আমদানিতে শুল্ক দ্বিগুণ করা হলেও মাঠে তার ফল লক্ষ্য করা যায়নি। উল্টো পাঁচ মাস যেতে না যেতেই চালের দাম বাড়তে শুরু করেছে। এরইমধ্যে দেশের কোথাও কোথাও বোরোর বীজতলা তৈরি শুরু হয়েছে। আগামী বছরের এপ্রিল মে মাসের দিকে কৃষকের গোলায় বোরো ধান উঠতে শুরু করবে।
জানতে চাইলে নওগাঁ ধান-চাল আড়তদার সমিতির সভাপতি নিরোধ চন্দ্র সাহা সারাবাংলাকে বলেন, মিনিকেট চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। অন্যান্য চালের দাম তেমন বাড়েনি। মৌসুম শেষ হওয়াই দাম বাড়ার মূল কারণ। তিনি বলেন, বোরো মৌসুম থেকেই মিনিকেট হয়। অন্য মৌসুমের চাল থেকে মিনিকেট হয়না। বোরো মৌসুম আসতে আরও ৫ থেকে ৬ মাস। আর মৌসুমের শেষ দিকে সব সময় তো চালের দাম বাড়েই।
বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী সারাবাংলাকে বলেন, সরকারই তো চালের দাম বাড়াতে চাচ্ছে। চালের দাম বৃদ্ধি ভালো লক্ষণ। সরকার আমন মৌসুমে ২৬ টাকা কেজিতে ধান কিনবে। আগে আমরা ১৫ টাকা কেজিতে ধান কিনতে পারলেও এখন ২০ থেকে ২২ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে। ফলে বাজারে চালের দাম বেড়েছে।
জানতে চাইলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিরুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, সরকার আমন মৌসুমে ধান চাল সংগ্রহের ঘোষণা দেওয়ায় বাজারে চালের দাম বেড়ে থাকতে পারে। আমরা চাই কৃষক যাতে ন্যায্যমূল্য পায়, এ কারণে প্রথমবারের মতো আমন মৌসুমে ৬ লাখ টন ধান সংগ্রহের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এর প্রভাবে হয়তো চালের দাম কিছুটা বেড়ে থাকতে পারে।
তবে বাণিজ্য সচিব জাফর উদ্দীন বাজার পর্যবেক্ষণের পর চাল নিয়ে মন্তব্য করতে চান।