‘খালেদা জিয়ার জামিনের চাবি হাসিনার হাতে’
২৬ অক্টোবর ২০১৯ ১২:৩৫ | আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৯ ১২:৫১
ঢাকা: সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিনের চাবি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এ মানববন্ধন আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আজকে তারা ভোটারবিহীনভাবে ক্ষমতায়। তাদেরকে কী সরকার বলব? আজকে এই দেশ চালাচ্ছে মাফিয়া সিন্ডিকেট। এই সরকার, সরকার নয়। এটি একটি মাফিয়া সিন্ডিকেট। তা না হলে বেগম খালেদা জিয়ার জামিন হবে না কেন? এ রকম মামলায় অসংখ্য জামিন হয়েছে।’
তিনি বলেন, “তারা (সরকার) নিজ থেকেই বলেছে— ‘তারেক যদি বাড়াবাড়ি করে, তাহলে কিন্তু তার মা মুক্ত হবেন না।’ কারণ, এই জামিনের চাবিটা শেখ হাসিনার হাতে আছে। শেখ হাসিনা যতক্ষণ পর্যন্ত না তালা খুলবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্ত হবেন না।”
খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়টি উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘মাঝে মাঝে তার আত্মীয়-স্বজনরা যাচ্ছেন, খবর নিয়ে আসছেন। তিনি (খালেদা জিয়া) হাত নাড়াতে পারছেন না। প্রতিদিন সেটা ফিক্সড হয়ে যাচ্ছে। কোটি কোটি মানুষের সমর্থন যার প্রতি, তিনি আজ হুইল চেয়ারবাইন্ড হয়ে গেছেন। তাকে দুইজনে ধরে তুলতে হয়।’
‘অথচ তিনি হেঁটে কারাগারে গেছেন। তার আজকের এই চরম, শোচনীয় শারীরিক অবনতির জন্য দায়ী স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। তার ক্ষোভ, তার হিংসা, তার জিঘাংসা এবং তার রাষ্ট্রক্ষমতা ভোগ দখলের জন্য খালেদা জিয়া ধুঁকে ধুঁকে কারাগারের মধ্যে জীবনযাপন করছেন,’— অভিযোগ রিজভীর।
রিজভী বলেন, ‘যে হাসপাতালে তিনি (খালেদা জিয়া) রয়েছেন, সেখানে তার চিকিৎসা হচ্ছে না। তার আত্মীয়-স্বজনরা বলেছেন, তিনি মুক্ত হলে তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাবেন। কিন্তু পরিবারের এই আকুতি সরকারের কানে ঢোকে না।’
‘আজকে কোথায় যাব? মানুষের শেষ আশ্রয় আদালত। সেই আদালতে কোনো বিচার নেই। সেখানে কোনো বিচার পাওয়া যায় না। তাহলে আর কোথায় কোন জায়াগায় গিয়ে দাঁড়াবে মানুষ? তাই আমরা মনে করি, অবিলম্বে বেগম জিয়ার মুক্তি আমাদেরকেই নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের গণতন্ত্র আমাদেরকেই ফিরিয়ে আনতে হবে,’— বলেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র ফিরিয়ে না আনলে আরও আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের শিকার হবে। আপনাদের (সরকার) মনের মধ্যে যদি এতই পরিবর্তন হতো, তাহলে আবরার হত্যাকণ্ডের পর গোটা জাতি যেভাবে শোকে মুহ্যমান হয়েছে, তারপর মনে হয়েছিল সরকার বোধ হয় তার দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে নিভৃত করবে। কিন্তু ঘটনার কয়েক দিন পরই তারা ছাত্রদলকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আক্রমণ করে রক্তাক্ত করেছে।’
রিজভী বলেন, ‘সরকারের যে বাণী, সরকারের যে লক্ষ্য— ক্যাম্পাস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোথাও আওয়ামী লীগের বাইরে কোনো আওয়াজ হবে না। আওয়ামী লীগ যা করছে, এই সরকার যা করছে, তার বিরুদ্ধে কেউ যদি স্বাধীন মতামত প্রকাশ করে, তাহলে তাকে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করতে হবে। এই নীতি থেকে সরকার বিচ্যুত হয়নি। হয়তো কিছুটা থেমে আছে। কিন্তু এই থামাটা কেবল বুয়েটে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, বাংলাদেশে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নয়। সেখানে এই মাফিয়া সিন্ডিকেটের ছাত্রলীগ, তাদের বিরোধী যারা আছে, তাদেরকে রক্তাক্ত করার কাজে তারা সদা জাগ্রত, সদা প্রস্তুত।’
মানববন্ধন শেষে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি মিছিল বের করে মহিলা দল। মিছিলটি কাকরাইল নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে আবার নয়াপল্টনে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে অংশ নেন রুহুল কবির রিজভী, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খানসহ সংগঠনের কয়েকশ নেতাকর্মী সমর্থক।