বালিশকাণ্ডে ১৬ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়
১৫ অক্টোবর ২০১৯ ২১:১৭ | আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৯ ২১:২৯
ঢাকা: পাবনার রূপপুরে ‘বালিশকাণ্ডে’ জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় পাবনায় গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাসুদুল আলমসহ গণপূর্ত অধিদফতরের ১৬ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। এছাড়া ওই প্রকল্পের যাচাই-বাছাই ও বিল দেওয়ার সঙ্গে জড়িত ১৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) হাইকোর্টে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দাখিল করা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে— পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প এলাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার জন্য গ্রিন সিটি আবাসন প্রকল্পে বিছানা, বালিশ ও আসবাবপত্র কেনা এবং সেগুলো ফ্ল্যাটে ওঠানোর ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। প্রকল্পটির অধীনে এসব কর্মকাণ্ডে অস্বাভাবিক ব্যয় করার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ১৬ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন- রূপপুরে বালিশকাণ্ড: ৩৪ কর্মকর্তা জড়িত, বিভাগীয় ব্যবস্থা
প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাসুদুল আলম ছাড়া সাময়িক বরখাস্ত হওয়া বাকি ১৫ কর্মকর্তা হলেন— মো. শাহিন উদ্দিন, মো. জাহিদুল কবীর, মো. শফিকুল ইসলাম, মো. রফিকুজ্জামান, মো. রওশন আলী, মো. আবু সাঈদ, সুমন কুমার নন্দী, মো. ফজলে হক, মো. আমিনুল ইসলাম, মো. রুবেল হোসাইন, এ কে এম জিল্লুর রহমান, আহম্মেদ সাজ্জাদ খান, মো. তারেক, মো. তাহাজ্জুদ হোসেন ও মো. মোস্তফা কামাল।
এছাড়া গ্রিন সিটি আবাসন প্রকল্পের যাচাই-বাছাই ও বিল দেওয়ার সঙ্গে জড়িত ১৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও দায়ের করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকার ওই প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে গত ১৬ মে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বিষয়টি নিয়ে ১৯ মে হাইকোর্টে রিট করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। ওই রিটের শুনানিতেই বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রিটকারী আইনজীবী সুমন সারাবাংলাকে বলেন, আমি এখনো প্রতিবেদনটি হাতে পাইনি। তবে শুনেছি, এরকম একটি রিপোর্ট আদালতে এসেছে।
সংশ্লিষ্ট আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার কাজী মাইনুল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে, সেটি পেয়েছি। শিগগিরই সংশ্লিষ্ট আদালতে প্রতিবেদনটি দাখিল করা হবে।
এর আগে, ব্যারিস্টার সুমনের দায়ের করা রিটের শুনানিতে গত ২ জুলাই তুলতে প্রকল্পটিতে ‘বিশ্বাস ভঙ্গের ব্যর্থতা’ কেন অবৈধ হবে না— তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ওই ঘটনায় গঠিত দু’টি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়। পাশাপাশি প্রতিবেদন অনুযায়ী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেটাও দুই সপ্তাহের মধ্যে জানাতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব, গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী, রাজশাহী অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলী এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালককে রুলে বিবাদী করা হয়।
পরে ১৫ জুলাই ওই প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত শেষে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দু’টি কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়। ওই দুই প্রতিবেদনে রূপপুর ‘বালিশকাণ্ডে’র ঘটনায় ৩৬ কোটি ৪০ লাখ ৯ হাজার টাকার গরমিল পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ঘটনায় গণপূর্ত বিভাগের পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশও করা হয়।
পরে ২১ জুলাই ওই প্রতিবেদন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে দাখিল করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমাতুল করিম। ওই দিন বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদীর হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্রিন সিটি আবাসন প্রকল্পের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে সরকার কী ব্যবস্থা নেয়, তা হাইকোর্ট দেখবেন। আগামী ২০ অক্টোবর এ রিটের ওপর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
গণপূর্ত অধিদফতর গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় গ্রিন সিটি আবাসন প্রকল্প টপ নিউজ ফার্নিচার কেনায় দুর্নীতি বালিশ বালিশকাণ্ড রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সাময়িক বরখাস্ত