Monday 06 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘পাত্রখোলা’ অসাম্প্রদায়িকতার বিরল দৃষ্টান্ত


১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৮:৫৭ | আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৮ ১৭:৪৭

হৃদয় দেবনাথ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জের পাত্রখোলা চা বাগান। বিস্তীর্ণ সবুজের  মাঝে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এখানের একটি সমাধিক্ষেত্রে সমাহিত করা হয় সব ধর্মের মানুষকে। একই মাঠে পালাক্রমে চলে মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব ওয়াজ মাহফিল, হিন্দুদের কীর্তন গান ও খ্রিস্টানদের বড় দিনের উৎসব। এসব উৎসবে সব ধর্মের নেতারা অংশ নেন। সবাই মিলে পাত্রখোলা চা বাগান যেনো অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের একটি রেপ্লিকা। জেলাতো বটেই পাত্রখোলার সুনামের খবর ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের এলাকাগুলোতেও।

বিজ্ঞাপন

এলাকাবাসী জানায়, ব্রিটিশ আমলে ভারত সীমান্ত ঘেঁষা এই চা বাগানের মধ্যে প্রায় ৫ একর জায়গায় রয়েছে বিশাল একটি মাঠ। যেখানে রয়েছে একটি সমাধিক্ষেত্র। সেখানে যুগ যুগ ধরে হিন্দু, খ্রিস্টান ও মুসলিম ধর্মের মৃত ব্যক্তিদের সমাহিত করা হচ্ছে। কোনো ধর্মের জন্য আলাদা করে বিভাজন দেয়াল নেই। তবে খুঁটি দিয়ে কবরগুলি আলাদা করা হয়েছে। প্রথমদিকে শুধু হিন্দু ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের এখানে সমাহিত করা হলেও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সবার সম্মতিক্রমে মুসলিম ধর্মের কবরস্থানটিও স্থানান্তর করে নিয়ে আসা হয় এ জায়গায়। জমি সংকট কিংবা কোন প্রতিবন্ধকতার জন্য এমনটি করা হয়নি। কেবল সব ধর্মের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি গড়তে এমন উদ্যোগ নেন তখনকার স্থানীয় বিশিষ্টজনরা।

সমাধিক্ষেত্রে পাশাপাশি শুয়ে আছেন সনাতন ধর্মের মাখন চাষা, মুসলিম ধর্মের সেলিনা আক্তার, খ্রিষ্টান ধর্মের ফিলিমন বিশ্বাস। জীবিতাবস্থায় তারা যার যার পরিবারে থাকলেও মৃত্যুর পর তাদের স্থান হয়েছে একই কাতারে।

বিজ্ঞাপন

সমাধিক্ষেত্রের পাশে বিশাল মাঠে রয়েছে মসজিদ, মন্দির ও গির্জা। সেখানে বছরের বিভিন্ন সময় পৃথক পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত হয়  ওয়াজ মাহফিল, কীর্তন-কবিগান ও বড়দিনের উৎসব। স্থানীয় মসজিদের ইমাম আব্দুল আজিজ, মন্দিরের পুরোহিত রাজেশ পন্ডিত ও গির্জার ফাদারের মধ্যে রয়েছে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।

এ বিষয়ে পাত্রখোলা চা বাগানের শ্রমিক শ্রমিক রাজেন উড়াং বলেন, এখানে আমার বাপ-দাদা, কাকা-জেঠা যেমন শুয়ে আছেন তেমনি বাবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু পাশের বাড়ির একলাছ চাচাও শুয়ে আছেন। পাত্রখোলা চা বাগান সার্বজনীন পূজা মণ্ডপের পুরোহিত রাজেশ পন্ডিত সারাবাংলাকে জানান, ভবিষৎ প্রজন্ম যেন আমাদের এই বন্ধন থেকে শিক্ষা নিয়ে ধর্মীয় হিংসা মুক্ত সমাজ অব্যাহত রাখে সেটাই আমাদের স্বপ্ন।

পাত্রখোলা চা বাগান জামে মসজিদ ইমাম মো. আব্দুল আজিজ জানান, আমাদের কোন সমস্যা হচ্ছেনা বরং আমরা গর্বিত এমন মিলেমিশে থাকতে পারছি বলে। সমাজের সব ধর্মের মানুষ একে অন্যকে ভালবেসে একসঙ্গে থাকতে পারলে সমাজে শান্তি আসবে।

সারাবাংলা/এসআই

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর