রোহিঙ্গাদের হাতে এনআইডি: ইসির ৪ কর্মী পুলিশ হেফাজতে
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১২:৫৪ | আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৭:৩৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি ও তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আরও চার কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। চারজনের মধ্যে একজন নারীও আছেন।
রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর লাভ লেনে আঞ্চলিক সার্ভার স্টেশন থেকে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়।
সিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার পলাশ কান্তি নাথ বলেন, ‘চারজনের মধ্যে একজন নারী ও তিনজন পুরুষ রয়েছে। তারা নির্বাচন কমিশনের অধীনে অস্থায়ীভাবে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পদে কর্মরত ছিলেন। রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি ও তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার ঘটনায় সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়ায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া চার জন হলেন— শাহীন, জাহিদ, ফাহমিদা নাসরিন ও পাভেল বড়ুয়া।
এদের মধ্যে শাহীন ও ফাহমিদা কোতোয়ালী থানা নির্বাচন কর্মকর্তা, পাভেল ডবলমুরিং থানা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং জাহিদ বন্দর থানা নির্বাচন কর্মকর্তার অধীনে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর হিসেবে কর্মরত আছেন।
চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো.মুনীর হোসাইন খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘চার জন আউটসোর্সিংয়ের ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া কর্মচারী। তারা ডাটা এন্ট্রির কাজ করতেন।’
সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপকমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা গ্রেফতার হওয়া ডবলমুরিং থানা নির্বাচন কার্যালয়ের অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদিনকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করি। জয়নাল আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত অনেকের নাম প্রকাশ করেছেন। সেই তথ্যের ভিত্তিতে আমরা পাঁচ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এনেছি। জিজ্ঞাসাবাদে যদি তাদের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যায়, তাহলে মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হবে।’
আঞ্চলিক সার্ভার স্টেশন থেকে নগরীর দামপাড়ায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কার্যালয়ে নেওয়ার পর তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক রাজেস বড়ুয়ার কক্ষে প্রথমে শাহীন ও ফাহমিদাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর জাহিদকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্ত কর্মকর্তা রাজেস। বিকেল পর্যন্ত জাহিদকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছিল।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া চার জনই গ্রেফতার জয়নাল আবেদিনের ঘনিষ্ঠ কর্মচারী বলে জানিয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে চট্টগ্রাম নগরীর ডবলমুরিং থানা নির্বাচন কার্যালয়ের অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদিনসহ তিন জনকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন জেলা নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তারা। বাকি দু’জন হলো— জয়নালের বন্ধু বিজয় দাশ ও তার বোন সীমা দাশ ওরফে সুমাইয়া। জয়নালের হেফাজতে থাকা নির্বাচন কমিশনের লাইসেন্স করা একটি ল্যাপটপও উদ্ধার করা হয়, যেটি বিজয় ও সীমার কাছে রেখেছিলেন জয়নাল। রাতেই ডবলমুরিং থানা নির্বাচন কর্মকর্তা পল্লবী চাকমা বাদি হয়ে কোতোয়ালি থানায় পাঁচ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
ওই মামলায় জয়নালকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) জয়নাল আবেদিন আদালতে জবানবন্দি দেন। জিজ্ঞাসাবাদে জয়নালের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মোস্তফা ফারুক নামে নির্বাচন কমিশনের আরেকজন অস্থায়ী কর্মচারীকে ২০ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। তার কাছ থেকেও নির্বাচন কমিশনের লাইসেন্স করা একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়েছে। মোস্তফা ফারুককে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে তদন্তকারী সংস্থা।