কে এই জি কে শামীম?
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২২:০৬ | আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২২:১৪
ঢাকা: ৭ দেহরক্ষী, ১৬৫ কোটি টাকার এফডিআর, বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ, অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেফতার ‘যুবলীগ’ নেতা জি কে শামীম এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে পাল্টে ফেলে যুবদল থেকে আওয়ামী লীগে ভেড়া শামীম নিজেকে পরিচয় দেন যুবলীগের সমবায়-বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে।
জানা গেছে, জি কে শামীম নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার সন্মানদী ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত মো. আফসার উদ্দিন মাস্টারের ছেলে। আফসার উদ্দিন মাস্টার ছিলেন হরিহরদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিন ছেলের মধ্যে শামীম দ্বিতীয়। বড় ছেলে গোলাম হাবিব নাসিম ঢাকায় জাতীয় পার্টির রাজনীতি করেন।
নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, প্রাইমারি ও হাইস্কুল পাস করার পর শামীমকে আর এলাকায় দেখা যায়নি। ঢাকার বাসাবো আর সবুজবাগ এলাকায় বেড়ে উঠেছে সে। ক্ষমতার দাপট ছিল তার আকাশ সমান। সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় জি কে শামীম প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবে পরিচিত। গণপূর্ত ভবনের বেশির ভাগ কাজই শামীম নিয়ন্ত্রণ করতো। বিএনপি-জামায়াত শাসনামলেও গণপূর্তের ঠিকাদারিও তার নিয়ন্ত্রণে ছিল। বাংলাদেশের যেকোনো ঠিকাদারকে গণপূর্তে কাজ করতে হলে তাকে বলে করতে হতো। বাংলাদেশের প্রথম সারির অনেক ঠিকাদার তার ভয়ে কথা বলার সাহস পেতেন না।
এদিকে যুবলীগ সূত্রে জানা গেছে, সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায়-বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দেন শামীম। ওই পদে এর আগে ছিলেন এসএম মেজবাহ হোসেন বুরুজ। ২০১৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর মারা যান।
এ বিষয়ে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘যুবলীগের নেতা পরিচয় দিয়ে ঠিকাদারি ব্যবসা চালিয়ে আসা গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম সংগঠনের কোনো পর্যায়ে নেই। ’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া সারাবাংলাকে জানান, জি কে শামীম আওয়ামী লীগের কোনো কমিটিতে নেই। সে আওয়ামী লীগের কেউ না।
যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ বাবলু সারাবাংলাকে বলেন, ‘যুবলীগে জি কে শামীমের কোনো পদ নেই। সে নিজেই নিজেকে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সমবায়-বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিতেন। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় যুবলীগে কয়েকবার আলোচনাও হয়েছে।’
কেন্দ্রীয় যুবলীগের পরিচয়ে শামীম আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। বাংলাদেশে কনস্ট্রাকশনের যত বড় বড় কাজ হতো তার সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করত সে। তার নির্বাচিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই কাজগুলো পেত। যদি কেউ শামীমকে না জানিয়ে দরপত্র কিনতেন তবে তার পরিণাম হতো ভয়ঙ্কর।
ছয়জন অস্ত্রধারী দেহরক্ষীর প্রোটেকশনে চলেন জি কে শামীম। সবার হাতেই শটগান। গায়ে বিশেষ সিকিউরিটির পোশাক। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর অবৈধ অস্ত্রসহ একবার গ্রেফতারও হয়েছিল সে। বাসাবো এলাকায় পাঁচটি বাড়ি এবং একাধিক প্লট রয়েছে শমীমের। বাসাবোর কদমতলায় ১৭ নম্বরের পাঁচতলা বাড়িটিও তার।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, শামীম কয়েক বছর বাসাবোর ওই বাড়িতে বসবাস করলেও এখন থাকছেন বনানীর ওল্ড ডিওএইচএসে নিজের ফ্ল্যাটে। নিজের কার্যালয় বানিয়েছিলেন নিকেতন এলাকার একটি ভবনে। বাসাবোতে তার আরও তিনটি ভবন রয়েছে। এছাড়া ডেমরা, দক্ষিণগাঁও, সোনারগাঁও উপজেলা, বান্দরবান ও গাজীপুরে কয়েকশ’ বিঘা জমি রয়েছে তার।
উল্লেখ্য, যুবলীগের নেতা পরিচয় দিয়ে ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করে জি কে শামীমের নিকেতনের বাসা ও অফিসে শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) অভিযান চালায় র্যাব। এ সময় তাকে তার সাত দেহরক্ষীসহ গ্রেফতার করা হয়। পাশাপাশি দেহরক্ষীদের অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গুলি জব্দ করা হয়। এছাড়া ১৬৫ কোটি টাকার এফডিআর চেকসহ বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি মুদ্রা, অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করা হয়।