তেল উৎপাদন বাড়াবে কে?
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৮:৫৬ | আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২১:২৩
সৌদি আরব বিশ্বের অন্যতম তেল উৎপাদনকারী দেশ। দেশটির রাষ্ট্রীয় তেল উৎপাদনকারী সংস্থা আরামকোর দুটি স্থাপনায় গত শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ড্রোন হামলা হয়। এতে দেশটির তেল উৎপাদন ব্যাহত হয়ে অর্ধেকে নেমে যায়। সৌদি থেকে তেল সরবরাহ কমে যাওয়ায় বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যায় তেলের।
সৌদির আরামকোর দুটি স্থাপনা আক্রান্ত হওয়ার পর দেশটির দৈনিক ৫৭ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন ব্যাহত হয়। ফলে বিশ্ব বাজারে তেলের দাম সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে যুক্তরাষ্ট্র মজুদ তেল বাজারে ছেড়েছে। মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বাজারে তেলের দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে।
তেলের বাজারে যোগান স্বাভাবিক রাখতে অন্যান্য তেল উৎপাদনকারী দেশ উৎপাদন বাড়াতে পারে। তবে অনেক শীর্ষ উৎপাদনকারী দেশ তাদের সর্বোচ্চ সক্ষমতার প্রায় কাছাকাছি পরিমাণ তেল ইতিমধ্যেই উৎপাদন করছে। তাই সর্বোচ্চ সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে উৎপাদন বাড়তে পারে এমন দেশ রয়েছে হাতেগোনা কয়েকটি।
সৌদি নিজে গত আগস্টে দৈনিক ৯৮ লাখ ৩০ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন করেছে। তবে দেশটির সর্বোচ্চ উৎপাদন সক্ষমতা ১ কোটি ১৫ লাখ ব্যারেল। দেশটির প্রধান তেল শোধনাগার কেন্দ্র আবকাইক ড্রোন হামলায় আক্রান্ত হওয়ায় তেল উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষমতা থাকলেও বাজারে তেল সরবরাহ করা কঠিন। তাই কাগজে কলমে উৎপাদন সক্ষমতা আরও বেশি থাকলেও কোনো কাজে আসবে না সে তেল।
আরও পড়ুন- মাটির নিচে কেন তেল মজুত করেছে যুক্তরাষ্ট্র?
এদিকে অন্যতম তেল উৎপাদনকারী দেশ ভেনিজুয়েলা ও ইরানের ওপর রয়েছে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা। ফলে এসব দেশ থেকে বেশিরভাগ দেশই তেল কিনতে পারে না। এই দেশগুলো তেলের উৎপাদন বাড়ালেও তাতে বাজারে কোনো প্রভাব পড়বে না। বাজারে তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক করতে আরও কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে বলে জানিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ।
উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব আর যেসব দেশে-
আরও পড়ুন- আরামকোর স্থাপনায় হামলা, ইরানকে দায়ী করলেন পম্পেও
সংযুক্ত আরব আমিরাত
গত আগস্টে সংযুক্ত আরব আমিরাত দৈনিক ৩০ লাখ ৭০ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন করে। তবে দেশটির দৈনিক ৩৪ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। অর্থাৎ সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষ যদি উৎপাদন বাড়ায় তবে আরও ২ লাখ থেকে ৩ লাখ ৩০ হাজার ব্যারেল বেশি তেল উৎপাদন করতে পারে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত ২০১৮ সালের নভেম্বরে তাদের ইতিহাসে দৈনিক সর্বোচ্ছ ৩২ লাখ ৭০ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন করে। তার মানে দেশটির সর্বোচ্ছ রেকর্ড পরিমাণ তেল উৎপাদন করলেও আরও ৩ লাখ ৩০ হাজার ব্যারেল উৎপাদন বাড়তে পারে মাত্র।
কুয়েত
আগস্টে দেশটি দৈনিক ২৬ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন করেছে। দেশটির সর্বোচ্চ উৎপাদন সক্ষমতা দৈনিক ৩১ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল।
অর্থাৎ দেশটি তাদের সর্বোচ্চ সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে তেল উৎপাদন করলে দৈনিক আরও ৪ লাখ ৭০ হাজার ব্যারেল তেল বেশি উৎপাদন করতে পারে।
তবে সৌদির সঙ্গে দেশটির অংশীদার এলাকা নিরপেক্ষ অঞ্চলের উৎপাদন ছাড়াই এই পরিমাণ তেল উৎপাদন করতে পারে কুয়েত।
কুয়েত ১৯৭০ সালের পর কখনই ৩০ লাখ ব্যারেলের বেশি উৎপাদন করেনি। বর্তমানে দেশটি দৈনিক ২৬ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন করে। অর্থাৎ দেশটি সর্বোচ্চ সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে তেল উৎপাদন করলেও ৪ লাখ ৭০ হাজার ব্যারেল বেশি তেল উৎপাদন করতে পারে।
নিরপেক্ষ অঞ্চল
এই অঞ্চলে বর্তমানে কোনো উৎপাদন হচ্ছে না। তবে এই অঞ্চল থেকে দৈনিক ৫ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন করা সম্ভব। কুয়েত ও সৌদি আরবের অংশীদার এই এলাকায় ২০১৫ সাল থেকে দুই দেশ উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। নিরপেক্ষ অঞ্চলের দুই তেলক্ষেত্র খাফজি ও ওয়াফরা। রাতারাতি এসব তেলক্ষেত্রে তেল উৎপাদন শুরু করা সম্ভব নয়। গত সাপ্তায় সৌদির জ্বালানি মন্ত্রী আব্দুল আজিজ বিব সালমান বলেন, ‘নিরপেক্ষ অঞ্চলের তেল উৎপাদন বন্ধের ব্যাপারটি কারিগরি বিষয়ক।’
রাশিয়া
আগস্টে দেশটি দৈনিক ১ কোটি ১২ লাখ ৯০ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন করে। দেশটির সর্বোচ্চ তেল উৎপাদন সক্ষমতা ১ কোটি ১৪ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল। অর্থাৎ দেশটি আরও ১ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল উৎপাদন বাড়াতে পারে।
কাজাখাস্তান
গত আগস্টে দেশটি দৈনিক ১৮ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন করেছে। তবে কাজাখাস্তানের দৈনিক তেল উৎপাদনের সক্ষমতা ২০ লাখ ব্যারেল। অর্থাৎ সর্বোচ্চ সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে তেল উৎপাদন করলে দেশটি আরও দেড় লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন বেশি করতে পারে।
এংগোলো
আগস্টে আফ্রিকার এই দেশটি দৈনিক ১৪ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন করেছে। তবে দেশটির সর্বোচ্চ তেল উৎপাদন সক্ষমতা দৈনিক ১৫ লাখ ৩০ হাজার ব্যারেল। অর্থাৎ আরও ৬৫ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন বাড়ানোর সক্ষমতা রয়েছে দেশটির।
আলজেরিয়া
গত আগস্টে দৈনিক ১০ লাখ ২০ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন করেছে আলজেরিয়া। তবে উত্তর আফ্রিকার এই দেশটির সর্বোচ্চ তেল উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক ১০ লাখ ৭০ হাজার ব্যারেল। উৎপাদন সর্বোচ্চ মাত্রায় নিয়ে গেলে আরও ৫০ হাজার ব্যারেল অধিক তেল উৎপাদন করতে পারবে দেশটি।
ওমান
গত আগস্টে ওমান দৈনিক ৯ লাখ ৭০ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন করেছে। দেশটির দৈনিক সর্বোচ্চ তেল উৎপাদনের সক্ষমতা ১০ লাখ ব্যারেল। অর্থাৎ আরও ৩০ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।
যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্র জ্বালানী তেলের সবচেয়ে বড় ভোক্তা রাষ্ট্র। গত আগস্টে দৈনিক উৎপাদন ছিলো ১ কোটি ২৩ লাখ ৭০ হাজার। তবে দেশটির সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক ১ কোটি ২৫ লাখ ব্যারেল। অর্থাৎ উৎপাদন বাড়ালে আরও ১ লাখ ৩০ হাজার ব্যারেল বেশি তেল উৎপাদন করতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র।
ইরান
আগস্টে দেশটি দৈনিক ২২ লাখ ১০ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন করেছে। তবে দেশটির সর্বোচ্চ তেল উৎপাদন ক্ষমতা ৩৮ লাখ ৩০ হাজার ব্যারেল। ইরান থেকে তেল আমদানির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থাকায় দেশটি আরও ১৬ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন বাড়ালেও তা বিশ্ব বাজারে খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারবে না। এছাড়া সৌদির তেল ক্ষেত্রে হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ইরানকেই দায়ী করেছে। এ অবস্থায় ইরান থেকে তেল আমদানির ওপর কড়াকড়ি আরও বাড়তে পারে।
আরও পড়ুন- ইরানের বিরুদ্ধে সচিত্র প্রমাণ হাজির করেছে যুক্তরাষ্ট্র
ওপেকের অন্যান্য সদস্য
তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংস্থা (ওপেক) এর অন্য কোনো সদস্যেরই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ তেল উৎপাদন বাড়ানোর সক্ষমতা নেই। ইরাক গত আগস্টে তাদের তেল উৎপাদন ৪৭ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেল পর্যন্ত নিয়ে গেলেও সেপ্টেম্বরে তারা তেল উৎপাদন আরও কমিয়েছে। তেল উৎপাদন বাড়ানোর কোনো সম্ভাবনা নেই দেশটির। অন্যান্য ওপেক সদস্য দেশগুলো ইতিমধ্যে তাদের সর্বোচ্ছ সক্ষমতা দিয়ে তেল উৎপাদন করছে। খুব বেশি উৎপাদন বাড়ানোর সক্ষমতা নেই কোনো দেশেরই।
ওপেকের সদস্য নয় এমন রাষ্ট্র যেমন আজারবাইজান, বাহরাইন, ব্রুনেই, মালেয়েশিয়া, মেক্সিকো, দক্ষিণ সুদান সবাই যার যার সর্বোচ্চ সক্ষমতা অনুযায়ী তেল উৎপাদন করছে।
সূত্র: ব্লুমবার্গ