ঢাকায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি উত্তরায়, বাইরে যশোরে
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৬:২৪ | আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১১:৪৬
ঢাকা: সেপ্টেম্বরে কমতে শুরু করেছে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার। এর আগে আগস্ট মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাংলাদেশের অতীতের সব সংখ্যা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। সামগ্রিকভাবে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমতে শুরু করলেও যশোরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এখনো অন্যান্য জেলার চেয়ে বেশি। অন্যদিকে ঢাকা মহানগরীর হাসপাতালগুলোতে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত এক হাজার ৯১৩ রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে যশোরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে এক হাজার ৬৮৭ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন ২২৪ রোগী।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে নেওয়া তথ্য অনুযায়ী মহানগরীর উত্তরা এলাকা থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী ভর্তি হয়েছে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে।
আইইডিসিআর-এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সাবরিনা ফ্লোরা বলেন, ‘সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আমরা যশোরে অনেক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী দেখছি। সেখানকার সিভিল সার্জনের মাধ্যমে আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি। এর আগে আমরা বরিশাল, কুষ্টিয়া ও মেহেরপুরে জরিপ করেছি।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এ বছর এখন পর্যন্ত ৭৮ হাজার ৬১৭ জন রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এরই মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৯৬ শতাংশ রোগী। ডেঙ্গুর চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৭৫ হাজার ২৫৫ জন। বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিন হাজার ১৬৫ জন রোগী।
আইইডিসিআর আরও জানায়, এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে যারা চিকিৎসা নেন তাদের অধিকাংশের বয়স ১৫ থেকে ২৫ বছর। ২৬ হাজার ৫০৯ জন রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করে এই চিত্র পাওয়া গেছে।
ডা. সাবরিনা ফ্লোরা বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় নানা রকম তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করি। এছাড়া প্রতিটি মৃত্যুর ঘটনা পর্যালোচনা করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করি। ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমাদের কাছে যে তথ্য-উপাত্ত এসেছে তাতে দেখা যায়, বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে পুরুষ রোগীর সংখ্যা বেশি। প্রায় ৬৩ শতাংশ পুরুষ রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অন্য দিকে দেখা যায়, ৩৭ শতাংশ নারী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। ২৮ হাজার ১৬১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর তথ্য যাচাই করে এই সংখ্যা পাওয়া যায়।
তিনি আরও বলেন, রোগীদের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে আক্রান্তদের মধ্যে ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সী রোগী শতকরা ২৮ ভাগ। অনুর্ধ্ব ১ বছর বয়সী বাচ্চাদের ডেঙ্গু আক্রান্তের হার শতকরা এক ভাগেরও নিচে। এক থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের আক্রান্তের হার ৭ ভাগ; ৫ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের ১৭ ভাগ; শতকরা ২১ ভাগ রোগীদের বয়স ২৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। ৩৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সীদের মধ্যে শতকরা ১১ ভাগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। ৮ ভাগ রোগী আক্রান্ত হয়েছেন যাদের বয়স ৪৫ থেকে ৫৫ বছর। চার ভাগ আক্রান্ত হয়েছেন তাদের বয়ষ ৫৫ থেকে ৬৫ বছর। দুই ভাগ রোগী দেখা গেছে যাদের বয়স ৬৫ বছরের বেশি।
মোট ৮৫০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এদের মধ্যে শতকরা ৩৭ ভাগ শিক্ষার্থী, ৩৭ ভাগ চাকরিজীবী, ১৩ ভাগ গৃহিনী, ৫ ভাগ ব্যবসায়ী ও অন্যান্য শ্রেণি-পেশার শতকরা ৮ ভাগ— বলেন সাবরিনা ফ্লোরা।