রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সিম বিক্রেতা ও অপারেটরদের শাস্তি দাবি
৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৯:১১ | আপডেট: ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৯:৪০
ঢাকা: রোহিঙ্গাদের কাছে সিম বিক্রেতা বাংলাদেশি নাগরিক ও সিম বিক্রেতা অপারেটরদের আইনের আওতায় আনাসহ আট দফা দাবি জানিয়েছে ‘বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন’। একইসঙ্গে রোহিঙ্গাদের সব ধরনের মোবাইল সেবা দ্রুত বিচ্ছিন্ন করার দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর তোপখানার নির্মল সেন মিলনায়তনে ‘রোহিঙ্গাদের টেলিযোগাযোগ বা ইন্টারনেট ব্যবহার সম্পর্কিত সর্বশেষ পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতারা এসব দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গত ৩১ আগস্ট গণমাধ্যমে ‘অবৈধভাবে টেলিযোগাযোগ সেবা ব্যবহার করে সংগঠিত হচ্ছে রোহিঙ্গা’ শিরোনামে আমরা বিবৃতি পাঠাই। জাতীয় গুরুত্ব বিবেচনা করে বিবৃতিটি বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রকাশিত হয়। সরকারও বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে আমলে নিয়ে বিটিআরসিকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, রোহিঙ্গাদের টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট ব্যবহার সম্পর্কিত বিটিআরসির নির্দেশনা কার্যকর হয়নি।
মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিটিআরসি মোবাইল অপারেটরদের সাত কার্যদিবসের মধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মোবাইল সিম বিক্রি বন্ধের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের সিম ব্যবহার বন্ধের ব্যবস্থা নিয়ে বিটিআরসিকে সে বিষয়টি অবগত করার নির্দেশনা দেয়। পরদিন আরেক নির্দেশনায় সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরদিন ভোর ৫টা পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় থ্রিজি ও ফোরজি সেবা এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধেরও নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে একটি অবৈধ সেবা গ্রহণ করে রোহিঙ্গারা সংগঠিত হচ্ছে, অপরাধ করছে ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি করছে— এমন পরিস্থিতিতে তাদের ৭ দিন দূরে থাক, একঘণ্টার জন্যও বিটিআরসি টেলিযোগযোগ ও ইন্টারনেট সেবা দিতে পারে কি না বা তাদের সেই ক্ষমতা আছে কি না, তা আমাদের প্রশ্ন।
মহিউদ্দিন বলেন, ২০১৬ সালের ৩০ এপ্রিল বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে বৈধ নাগরিকদের সিম নিবন্ধনের সময় শেষ হওয়ার পর অনিবন্ধিত সব সিম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। অথচ রোহিঙ্গাদের বেলায় কেন সাত কার্যদিবসেও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া গেল না, তা আমরা জানতে চাই।
সংগঠনটির আট দফা দাবির মধ্যে রয়েছে— রোহিঙ্গদের হাতে বাংলাদেশি যেসব নাগরিক তাদের নিবন্ধিত সিম বিক্রি করেছেন ও যেসব অপারেটর রোহিঙ্গাদের কাছে সিম বিক্রি করেছে, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে; রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় সব ধরনের করপোরেট সিম বন্ধ করতে হবে; রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরকারি বা আধাসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত ও বৈধ এনজিওগুলোতে কর্মরত ব্যক্তিদের সিম সক্রিয় রেখে বাকি সব সিমের সংযোগ নিষ্ক্রিয় করতে হবে; আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের জন্য ব্যবহৃত টেলিকম সেবা বুথ চালু রাখতে হবে; অবৈধ ভাবে টাওয়ার নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে সীমান্তের ওপারের নেটওয়ার্কও বন্ধ করতে হবে।
মোবাইল ফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন আরও দাবি করেছে, সাত কার্য দিবসে বিটিআরসির নির্দেশনা কেন বাস্তবায়ন হলো না, তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করে সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে; নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোনো গাফিলতি থাকলে তার জন্য দায়ী ব্যক্তিকেও চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে; প্রয়োজনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নির্বাহী হাকিম দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা যায় কি না, সে বিষয়ে সরকারকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের মহাসচিব অ্যাডভোকেট আবু বক্কর সিদ্দিক, সবুজ আন্দোলনের কেন্দ্রীয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, এনপিপি’র প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. আলতাব, জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মো. বাহারানে সুলতান বাহার, জাতীয় উন্নয়ন পার্টির সভাপতি মাহাবুব খোকন, সংগঠনের কেন্দ্রীয় সদস্য কাজী আমানুল্লাহ মাহফুজ, শরীফুল ইসলামসহ অন্যরা।