বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা-ব্রিজ মেরামতে উদ্যোগ নেই, ভরসা সাঁকো
৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৮:০০ | আপডেট: ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৭:৩৭
গাইবান্ধা: গাইবান্ধা থেকে বন্যার পানি নেমে গেলেও রাস্তাসহ ব্রিজ-কালভার্ট ভেঙে যাওয়ায় ভোগান্তি কোনোভাবেই কমছে না। স্থানীয় জনগণ স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে যাতায়াতের ব্যবস্থা করলেও সেগুলোও দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এছাড়া রাস্তাগুলোর বেহাল দশার কারণে যানবাহন চলাচল ব্যহত হচ্ছে। ফলে ক্রমেই বাড়ছে জনদুর্ভোগ। এদিকে রাস্তা ও ব্রিজগুলো দ্রুত মেরামতের জন্য সরকারিভাবে আশ্বাস দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা থেকে ত্রিমোহনী ব্রিজ হয়ে সাঘাটা উপজেলার সাথে সহজ যোগাযোগের সড়কটিতে তিনটি ব্রিজসহ পাঁচটি জায়গার কিছু অংশ ভেঙে গেছে। ভেঙে যাওয়া ওই স্থানগুলোতে কাঠ ও বাঁশের সাঁকো দিয়ে সাময়িকভাবে যোগাযোগ সচল রাখা হয়েছে। তবে সেই সাঁকোগুলোও দুর্বল হয়ে পড়েছে। এছাড়া গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ বিভিন্ন রাস্তা পানির চাপে ভেঙে গেছে। এর পাশাপাশি সাঘাটা ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৩০টি গ্রামের কাঁচা-পাকা রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় সাধারণ মানুষদের দুভোর্গ বেড়েই চলছে ।
এদিকে সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী ইউনিয়নের পোরাগ্রাম এলাকায় গাইবান্ধা-সাঘাটা আঞ্চলিক মহাসড়কসহ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ ওয়াবদা বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে যাওয়ায় এই মহাসড়ক দিয়ে বাস-ট্রাক-লেগুনাসহ ভারী যান চলাচল বন্যার আগ থেকেই বন্ধ রয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, জীবিকার তাগিদে তাদের শহরে যেতে হয় মালামাল আনতে। কিন্তু যাতায়াত ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় শহর থেকে পণ্য কিনে গ্রামে আনতে পারছেন না তারা। ফলে অনেকের ব্যবস্যাই বন্ধ হয়ে গেছে। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে খেটে খাওয়া সাধারণ ব্যবস্যায়ীদের।
গাইবান্ধার বোনারপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী শিখা। প্রতিদিন দলদলিয়া গ্রাম থেকে ভ্যানে করে স্কুলে যেতে তার খরচ হতো পাঁচ টাকা। কিন্তু বন্যার কারণে রাস্তা নষ্ট হওয়ায় তাকে ১০ থেকে ১৫ টাকা ভাড়া দিতে হচ্ছে। অভাবের কারণে বাবা-মা প্রতিদিন টাকা দিতে পারে না। ফলে মাঝে মাঝেই তাকে হেঁটেই স্কুলে যেতে হচ্ছে। শিখার মতো আরও শত শত শিক্ষার্থী অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে হেঁটে স্কুলে যাচ্ছে। এতে তারা সময় মতো স্কুলে আসতে পারছে না। ফলে ব্যহত হচ্ছে পাঠদান।
সাঘাটা উপজেলার দলদলিয়া গ্রামের বাসিন্দা রেজওয়ানুল হক সাগর জানান, তার গ্রাম থেকে জেলা ও উপজেলা শহরে যাওয়ার সবগুলো রাস্তার কিছু কিছু অংশ বন্যায় ধসে গেছে। ফলে শহর থেকে ভারী কোনো মালামাল আনা সম্ভব হচ্ছে না। বাঁশ বা কাঠের সাঁকো থাকলেও দৈনন্দিন চাহিদার পণ্য আনতে কয়েক কিলোমিটার ঘুরে আসতে হচ্ছে। কিন্তু বন্যার পর দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলেও রাস্তাগুলো মেরামতে এখনও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বোনারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়ারেছ প্রধান জানান, মানুষের চলাচলের জন্য গ্রামবাসীরা মিলে নিজেদের চেষ্টায় বাঁশ ও কাঠ দিয়ে সাঁকো তৈরি করেছে। কিন্তু মানুষের নিয়মিত চলাচলের কারণে সেগুলোর অবস্থাও বেহাল। ভাঙা রাস্তা, ব্রিজ-কালভার্ট মেরামতের জন্য এখনও সরকরিভাবে কোনো বরাদ্দ আসেনি।
ক্ষয়-ক্ষতির বিষয়ে গাইবান্ধার সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী ছাবিউল ইসলাম জানান, এবারের বন্যায় শুধু সাঘাটা উপজেলার ১১৭টি পাকা রাস্তার ২৫০ কিলোমিটার মধ্যে ৫০ কিলোমিটার বন্যায় ভেঙে গেছে। এছাড়া ১০টি ব্রিজের সংযোগ সড়ক সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা ও ব্রিজ-কালভার্টের তালিকা সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
বন্যায় গ্রামীণ অবকাঠমোর ক্ষয়ক্ষতি বিষয়ে গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, ‘মানুষ যাতে কষ্ট না পায় তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। আশা করছি, অক্টোবরের মধ্যেই মেরামতের কাজ শুরু করা যাবে। ’
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্যনুযায়ী, এ বছর বন্যায় দেড় কিলোমিটার বাঁধ সম্পূর্ণভাবে ধসে গেছে। এছাড়া আংশিক ক্ষতি হয়েছে ৯৭ দশমিক ৫ কিলোমিটার বাঁধের। কাঁচা ও পাকা রাস্তার সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে ২২ কিলোমিটার। আর আংশিক ক্ষতি হয়েছে ৮৩৩ কিলোমিটার। এছাড়াও ৩৯টি কালভার্টের সংযোগ সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। গাইবান্ধাতে প্রায় ৩৬টি পয়েন্টে রাস্তা ও বাঁধ ভেঙেছে। ফলে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে জেলার ৬৩ হাজার ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে।