১০০ গজ দূরের দোকানের শাটারও ভেদ করে হাতবোমার স্প্লিন্টার
১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৯:৩৮ | আপডেট: ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৯:৫২
ঢাকা: রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় পুলিশের ওপর হামলায় যে হাতবোমা ব্যবহার করা ছিল, সেই বোমাটি ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। বিস্ফোরণের পর প্রায় ১০০ গজ দূরের একটি দোকানের শাটারও ভেদ করে চলে যায় ওই বোমার স্প্লিন্টার। পরে পুলিশ ওই স্প্লিন্টারটি জব্দ করে। ওই বোমা বিস্ফোরণের পরও বিকট শব্দ হয়।
রোববার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সায়েন্স ল্যাবে হাতবোমা বিস্ফোরণের ওই স্থানে গিয়ে দেখা যায়, পশ্চিম দিকে ধানমন্ডি ১ নম্বর রোডের পূর্ব মাথা, নীলক্ষেত থেকে সিটি কলেজ মোড়ের দিকে আসতে আড়ং শোরুমের পূর্ব-দক্ষিণ কোণায় ফ্লাইওভারের সামনে ঠিক দক্ষিণ দিকে হাতবোমার বিস্ফোরণের ক্ষত চিহ্নটি এখনো স্পষ্ট। রক্তের শুকনো দাগও লেগে আছে। সিআইডি’র ক্রাইম সিন লেখা ফিতা দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে এলাকাটি। পথচারী চলাচল সামলাতে পুলিশি পাহারাও রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন- সায়েন্সল্যাবে হাতবোমা বিস্ফোরণ, দুই পুলিশ সদস্য আহত
সামান্য দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল শাহাদাত ও মহিউদ্দিন। শনিবার (৩১ আগস্ট) রাতে বিস্ফোরণের সময়ও তাদের ডিউটি ছিল সেখানে। মহিউদ্দিন নীলক্ষেত ও শাহবাগের দিক থেকে আসা গাড়ি, আর শাহাদাত কলাবাগানের দিক থেকে আসা গাড়ি সিগন্যালে থামাচ্ছিলেন।
জানতে চাইলে ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল মহিউদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাত সোয়া ৯টার দিকে আমি শাহবাগের দিকের সিগন্যাল থামিয়ে নীলক্ষেতের দিকের গাড়িগুলো ছেড়েছি, এরই মধ্যে এএসআই শাহাবুদ্দিন এসে বললেন, শাহবাগের দিকের রাস্তায় মন্ত্রীর (স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম) গাড়িবহর রয়েছে, রাস্তাটি ছেড়ে দেন। সঙ্গে সঙ্গে নীলক্ষেতের সড়কের সিগন্যাল বন্ধ করে শাহবাগের দিকের সড়কের সিগন্যাল ছেড়ে দেই। ফ্লাইওভারের নিচে (আড়ংয়ের সামনে) সার্জেন্ট ছিলেন, এএসআই শাহাবুদ্দিনকে নিয়ে সেখানে যাচ্ছিলাম।’
মহিউদ্দিন বলেন, পেছনে দেখি নীলক্ষেতের দিক থেকে সিগন্যাল অমান্য করে একটি সিএনজি আসছে। আমি সিএনজিটিকে আটকাতে পেছনে আসি, আর শাহাবুদ্দিন সামনের দিকে যান। এর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে প্রচণ্ড আওয়াজে বোমাটি বিস্ফোরিত হয়। সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। দেখতে পাই রক্তাক্ত অবস্থায় দুই পুলিশ রাস্তায় পড়ে আছেন।
আরও পড়ুন- বোমার টার্গেট পুলিশ, পাঁচ মাসে ৩ হামলা
কনস্টেবল মহিউদ্দিন আরও বলেন, শব্দ শুনেই বুঝতে পারি, বোমাটি খুবই শক্তিশালী। পরে দেখি ওই বোমার স্প্লিন্টার গিয়ে দুই রাস্তার পরে মুজিব মার্কেটের দুই দোকান বেনমাস ফ্যাশন ও কে ক্রাফটসের শাটার ভেদ করে ঢুকে গেছে। পুরো সড়কে বোমার স্প্লিন্টার পড়ে ছিল। পরে বোম ডিস্পোজাল ইউনিটসহ পুলিশ সদস্যরা আলামত হিসেবে সেগুলো জব্দ করে নিয়ে গেছেন।
ট্রাফিক কনস্টেবল বলেন, অল্পের জন্য আমি বেঁচে গেছি। কারণ আমিও শাহাবুদ্দিনের সঙ্গে ছিলাম। আমি দূরে ছিলাম, এরপরও মনে হচ্ছে কানে কম শুনতে পাচ্ছি। বোমার আওয়াজ কানে লেগেছে। ট্রাফিক পুলিশের ওপর সন্ত্রাসীদের ক্ষোভ কেন, তা বুঝতে পারছি না।
প্রত্যক্ষদর্শী আরেক ট্রাফিক কনস্টেবল শাহাদাত হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, অনেক শব্দ জীবনে শুনেছি। তবে বোমার আওয়াজ যে এতটা শক্তিশালী হয়, তা এর আগে শুনিনি। গতকালের কথা মনে হলে এখনো শরীর কাঁপছে।
শাহাদাত বলেন, বোমাটি হয়তো উত্তর দিকের ফ্লাইওভারের ওপর থেকে ছুঁড়েছে। কারণ বোমার যে আলামতগুলো উদ্ধার করা হয়েছে তা ছিল বিস্ফোরণের স্থান থেকে দক্ষিণ দিকে ছড়ানো ছিটানো।
বোমা বিস্ফোরণের স্থান থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অবস্থিত সায়েন্সল্যাব পুলিশ ফাঁড়ি। সেখানে গতকাল ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন এএসআই আব্দুর রহমান। তিনি বলেন, মন্ত্রীর গাড়ি আসবে, এজন্য সড়ক ফাঁকা করা হয়। ঠিক এই মুহূর্তে ট্রাফিক পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমাটি মারা হয়। মুহূর্তেই সব নিস্তব্ধ হয়ে যায়। আমরা দৌড়ে বের হয়ে আহত দুই পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেই।
সরেজমিনে দেখা যায়, ফ্লাইওভারের ওপরে কোথাও কোনো সিসিটিভি ফুটেজ নেই। আড়ংয়ের কোণায় দু’টি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো থাকলেও তা শুধু শোরুমের নিরাপত্তার জন্য লাগানো হয়েছে। রাস্তার দিকে ক্যামেরার মুখ করা নেই। এদিকে, পুলিশ ফাঁড়ির পাশে আহমেদ ম্যানশন মার্কেটের সামনেও একটি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো আছে। তবে সেটি বিস্ফোরণের স্থান ও আশপাশ কাভার করে কি না, তা বোঝা যায়নি।
আহমেদ ম্যানশন মার্কেটের রুপশ্রী ফার্নিশার্সের ম্যানেজার আজিজুর রহমান সারাবাংলাকে জানান, বোমা বিস্ফোরণের পর রাতেই পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তবে কাউকে আটক করেছে কি না, তা তারা জানেন না। তাদের মার্কেটের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ পুলিশ করেছে বলে জানান তিনি।
বোমা বিস্ফোরণের প্রায় ১০০ গজ দূরে অবস্থিত মুজিব মার্কেটের (রাস্তার ওপারে বাটা মোড়ের দিক থেকে এসে নীলক্ষেতের দিকে মোড় নেওয়ার জায়গাটি) দুই দোকানে কথা হয়। বেনমাস ফ্যাশনের ম্যানেজার সাজ্জাদ হোসেন বলেন, দোকান খোলাই ছিল। বিস্ফোরণের সময় দোকানে কী যেন এসে লাগে। বের হয়ে দেখি শাটার বক্স ছিদ্র হয়ে কী যেন ভেতরে ঢুকেছে। কিছু না পেয়ে পাশের দোকান কে ক্র্যাফটসের শাটার ছিদ্র দেখতে পাই। পরে দুই ইঞ্চি পরিমাণ লোহার টুকরো পড়ে থাকতে দেখতে পাই। পরে জানতে পারি, সেটি ছিল বোমার স্প্লিন্টার। পুলিশ সেটা নিয়ে গেছে।
পুলিশের ওপর শনিবার রাতের ওই বোমা হামলার ঘটনায় অজ্ঞাতনামাদের নামে নিউমার্কেট থানায় মামলা করেছেন সায়েন্সল্যাব পুলিশ ফাঁড়ির এসআই জহিরুল ইসলাম। বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলাটি করেন তিনি। এজাহারে বলা হয়, দুস্কৃতিকারীরা হামলা করে পুলিশের মনোবল ভেঙে দিতে এবং কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের হত্যার উদ্দেশ্যেই এই হামলা করা হয়।
আরও পড়ুন- পুলিশের ওপর বোমা হামলার ঘটনায় মামলা
হামলার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহত পুলিশ সদস্যকে দেখতে গিয়েছিলেন আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারী। তিনি বলেন, বোমাটি ছিল শক্তিশালী আইইডি (ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস)। কারা হামলা চালিয়েছে, তা বের করতে পুলিশের সব ইউনিট কাজ করছে। সারাদেশে পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
এর আগে চলতি বছর রাজধানীর গুলিস্তান ও মালিবাগে পুলিশের ওপর বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এছাড়া খামারবাড়ি মোড় ও পল্টন মোড়েও বোমা রেখে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার তদন্তে যথেষ্ট অগ্রগতি আছে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া রোববার (১ সেপ্টেম্বার) বলেন, তদন্তের স্বার্থে এবং জড়িতদের গ্রেফতারের স্বার্থে কোনো তথ্য বলা যাচ্ছে না।
পুলিশ আহত পুলিশের ওপর হামলা বোমা বিস্ফোরণ স্প্লিন্টার হাতবোমা