মানবতাবিরোধী অপরাধ: পুঠিয়ার ফিরোজ খাঁ’র রায় আজ
২৭ আগস্ট ২০১৯ ০০:৩০ | আপডেট: ২৭ আগস্ট ২০১৯ ০০:০২
ঢাকা: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাজশাহীর পুঠিয়ার মো. আব্দুস সামাদ (মুসা) ওরফে ফিরোজ খাঁ’র মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আজ। এ রায়ের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ৩৯তম রায় ঘোষিত হবে।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ রায় ঘোষণা করবেন।
এ মামলায় উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ৮ জুলাই মামলাটি অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন ট্রাইব্যুনাল।
ওইদিন ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর ঋষিকেশ সাহা ও জাহিদ ইমাম। আসামি পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পালোয়ান।
পরে প্রসিকিউটর জাহিদ ইমাম জানান, পাকিস্তান আর্মি ও সহযোগীদের নিয়ে এ মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা-হত্যাসহ যেসব অপরাধ করেছে মামলার শুনানি ও যুক্তিতর্কে সেসব তথ্য-প্রমাণ, সাক্ষ্য আমরা আদালতে তুলে ধরেছি। ভিকটিমসহ ভিকটিম পরিবারের ১৪ জন চাক্ষুস সাক্ষী আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন। ফলে আমরা আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চেয়েছি আদালতে।
প্রসিকিউটর জাহিদ ইমাম বলেন, ‘এ মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ মোট ১৫ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামির পক্ষে কোনো সাক্ষী ছিলেন না।’
তিনি বলেন, ‘প্রথম অভিযোগে তিনজন চাক্ষুস সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। তার মধ্যে দুজন সরাসরি ভিকটিম ও একজন ভিকটিম পরিবারের সদস্য। দ্বিতীয় অভিযোগে মোট সাক্ষী তিনজন। তিনজনই ভিকটিম পরিবারের চাক্ষুস সাক্ষী। তৃতীয় অভিযোগে চাক্ষুস সাক্ষী চারজন। চারজনই ভিকটিম পরিবারের সদস্য। চতুর্থ অভিযোগেও সাক্ষী চারজন। তার মধ্যে তিনজনই সরাসরি ভিকটিম, একজন ভিকটিম পরিবারের।’
অন্যদিকে আসমিপক্ষের আইনজীবী আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘এই মামলায় যারা সাক্ষী আছে, এই সাক্ষীদের সঙ্গে এবং ওইখানের সাঁওতাল পল্লীর লোকদের সঙ্গে এই আসামির বাবার জমি সংক্রান্ত বিরোধ ছিল। ১৯৬৪ সালে জমি বিনিময় করে তারা এসেছিল। কিন্তু দেশ স্বাধীনের বছরে এসে সাঁওতালরা বিনিময়কৃত ৫০ একর জমি ফেরত চাইলে আসামি, আসামির বাবা এবং এলাকার লোকদের সাথে সাঁওতালদের সংঘর্ষ হয়। সেই সংঘর্ষে আসামির বাবাও মারা যান। সাক্ষীরা সে সুযোগ নিয়ে তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছে।’
এ আইনজীবী বলেন, ‘উভয়পক্ষের মধ্যে এটা মূলত জায়গা-জমি সংক্রান্ত বিরোধ এবং বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আদালতে সেটা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি বলে মনে করি। তাই আসামির খালাস চেয়েছি।’
চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার জেরা শেষ হয়।
চার সাঁওতালসহ ১৫ জনকে হত্যা, ২১ জনকে নির্যাতন ছাড়াও অপহরণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ এনে এ আসামির বিরুদ্ধে গত বছরের ১৪ জানুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এরপর ওই বছরের ১২ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে পাঁচ অভিযোগে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগপত্র দাখিল করে প্রসিকিউশন।
তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী পুঠিয়ার বাঁশবাড়ী এলাকার মৃত আব্বাস আলীর ছেলে মো.আব্দুস সামাদ (মুসা) ওরফে ফিরোজ খাঁ মুক্তিযুদ্ধের আগে মুসলিম লীগের সমর্থক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক হিসেবে শান্তি কমিটির স্থানীয় নেতার নেতৃত্বে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে আসামী ফিরোজ খাঁ’র বিরুদ্ধে চারজন সাঁতালসহ ১৫ জনকে হত্যা, ২১ জনকে নির্যাতন, ৮ থেকে ১০টি বাড়িঘর লুণ্ঠন ৫০ থেকে ৬০টি বাড়িঘর অগ্নিসংযোগ করে ধ্বংস করে দেয়।
এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২০ এপ্রিল সাড়ে ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে পুঠিয়া থানার ভালুকগাছী ইউনিয়নের সাঁওতাল পাড়ায় গিয়ে আসামি ফিরোজ খাঁ, পাকিস্তানি আর্মি ও তার সহযোগীরা স্বাধীনতার পক্ষের লাড়ে হেমব্রম, কানু হাসদা, জটু সরেন ও এবং টুনু মাড্ডিকে তরবারি দিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে।
২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর মালাটির তদন্ত শুরু হয়। তখন এ মামলায় আসামি করা হয়েছিল ৬ জনকে। কিন্তু তদন্ত চলার সময়ই বাকি পাঁচ আসামির মৃত্যু হলে একমাত্র আসমি হিসেবে মো. আব্দুস সামাদ (মুসা) ওরফে ফিরোজ থাকেন।
তদন্ত চলার সময় নাশকতার মামলায় গ্রেফতার হন এই আসামি। পরে ২০১৭ সালে ২৪ জানুয়ারি তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে ট্রাইব্যুনাল তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।